• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

প্রথম টেলিফোন আবিষ্কারের চমকপ্রদ গল্প

প্রথম টেলিফোন আবিষ্কারের চমকপ্রদ গল্প

ছবি- সংগৃহিত

ফিচার ডেস্ক

প্রাচীনকালে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তথ্য আদান-প্রদানের জন্য পায়রা, ঈগলসহ অশ্বারোহী দূত ব্যবহার করা হতো। এক জায়গার তথ্য আরেক জায়গায় পাঠাতে অনেক সময় লেগে যেতো। এখন যুগ আধুনিক হয়েছে। ইমেইল কিংবা মোবাইল টেলিফোনের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে এখন মুহূর্তেই তথ্য পাঠানো সম্ভব। ছবি, ভিডিও কিংবা কথোপকথন, সবই চলছে হরহামেশা।

কিন্তু মোবাইল টেলিফোন বা টেলিফোনের এই বৈপ্লবিক আধুনিকায়ন এক দিনে সম্ভব হয়নি। এই অগ্রযাত্রা সূচনা হয়েছে ১৮৭৬ সালে। মানুষের সঙ্গে মানুষের তড়িৎ যোগাযোগের জন্য একটি যন্ত্র আবিষ্কারের চেষ্টা শুরু হয় অষ্টাদশ শতকের শুরু থেকেই। কিন্তু ১৮৭৬ সালে প্রথম বারের মতো টেলিফোন আবিষ্কার করেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল।

ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলছে, বর্তমানে যে টেলিফোন আমরা ব্যবহার করি তাতে তারের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় শব্দ প্রেরণ করা হয়। রবার্ট হুক ১৬৬৭ সালে একটি টেলিফোন বানান। তিনি একটি তারের দুই দিকে দুইটি ধাতু ও রিসিভার লাগান। এরপর এই ধাতু ও রিসিভারের একদিকে যখন কেউ কথা বলতো, তখন সেটা অন্য পাশের ব্যক্তি শুনতে পারতো।

আজকাল অনেক ছোট বাচ্চারা এ ধরনের টেলিফোন বানিয়ে খেলা করে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে শব্দ তারের মধ্য দিয়ে তরঙ্গের আকারে অন্য পাশে পৌঁছাতো। এরপর ১৮১৬ সালে ফ্রান্সিস রোনাল্ডস নামের একজন বিজ্ঞানী একটি ইলেকট্রিক টেলিগ্রাফ আবিষ্কার করেন। যাতে ইলেকট্রিসিটির মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কোনো তথ্য প্রেরণ করা যেতো। আর এতে অনেক বেশি দূরত্বে তথ্য পাঠানো যেতো। তবে এতে একটি সমস্যা ছিল। এতে একবারে একটির বেশি তথ্য পাঠানো যেতো না। আর এতে পাঠানো তথ্যগুলো কোডিং করতে হতো।

এরপর ১৮৬১ সালে একজন জার্মান ইঞ্জিনিয়ার জোহান ফিলিপ রেইস শব্দ পাঠানোর জন্য একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন এবং তিনি এটির নাম রাখেন টেলিফোন। তিনি মনে করতেন, ইলেকট্রিসিটির মাধ্যমে কোনো শব্দকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো সম্ভব। আর এই নীতির উপর ভিত্তি করেই তিনি তার টেলিফোন যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন। তবে এই টেলিফোনে একটি সমস্যা ছিল। এতে পাঠানো শব্দ এক তরফা ছিল। এমনকি এতে পাঠানো শব্দ খুবই অস্পষ্ট ছিল। ফলে এই যন্ত্র মানুষের মধ্যে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি।

এরপর আসেন মহান বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল। ১৮৪৭ সালের ১৩ মার্চ ইংল্যান্ডের এডিনবার্গে জন্মগ্রহণ করেন মেধাবী গ্রাহাম বেল। তিনি ছোটবেলা থেকেই প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই তিনি গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।

কথিত আছে, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের মা এলিজা গ্রেস সাইমন্ডস এবং তার স্ত্রী মেবেল গার্ডিনার হাবার্ড দুইজনেই বধির ছিলেন। তারা কানে শুনতে পেতেন না। ফলে আলেকজান্ডারের মনে শব্দতরঙ্গ নিয়ে প্রথম থেকেই বেশ কৌতূহল ছিল। তিনি দেখেন এর আগে অনেক বিজ্ঞানী তারের মাধ্যমে শব্দ প্রেরণ করেছেন। তবে সেগুলো অতোটা উপকারী ছিল না।
তখন গ্রাহাম বেল নিজেই এই টেলিফোন আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত হন। আর এই কাজের জন্য তিনি টমাস ওয়াটসন নামের একজন সাথীকে নিয়ে কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ পরিশ্রমের পর ১৮৭৬ সালের ১০ মার্চ আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল প্রথম টেলিফোন আবিষ্কার করেন।

ঐতিহাসিক বর্ণনায় পাওয়া গেছে, ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল নিচ তলা ও তার সাথী টমাস ওয়াটসন দুই তলায় কাজ করছিলেন। কাজের সময় গ্রাহাম বেলের প্যান্টে এসিড পড়ে যায়। তখন সাহাজ্যের জন্য তিনি টমাসকে ডাকেন। টমাসের পাশে থাকা টেলিফোন যন্ত্র থেকে গ্রাহাম বেলের আওয়াজ প্রথম শুনতে পান টমাস ওয়াটসন।

গ্রাহাম বেল ১৮৭৭ সালে টেলিফোনের পেটেন্ট করান এবং একটি টেলিফোন কোম্পানি খুলে ফেলেন। আর সেই কোম্পানি বর্তমানে 'এটিএন্ডটি' নামে পরিচিত।

০৮ জুন ২০২২, ০১:২৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।