• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিচিত্র সুন্দর ভিয়েতনাম

বিচিত্র সুন্দর ভিয়েতনাম

ছবি- সংগৃহিত

ফিচার ডেস্ক

একতা, একাগ্রতা, সাহসিকতা ও টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ গ্রহণে অকুতোভয় এক জাতিগোষ্ঠী নিয়ে গড়ে ওঠা দেশ ভিয়েতনাম। চীন-ফ্রান্সের উপনিবেশের পরে মার্কিন আগ্রাসনেও নত হয়নি এই দেশ-জাতি। বরং লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে খোদ আমেরিকাকেও নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে ভিয়েতনামীরা। আমাদের আজকের আয়োজন সেই ভিয়েতনাম নিয়েই।

ভিয়েতনামের অবস্থান

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম দেশটির উত্তরে রয়েছে চীন। পশ্চিমে লাওস ও কম্বোডিয়া, দক্ষিণ ও পূর্বে দক্ষিণ চীন সাগর অবস্থিত। দেশটির রাজধানীর হ্যানয়। যাকে হো চি মিন সিটিও বলা হয়।

ভিয়েতনাম সরু আকৃতির একটি দেশ। সমুদ্রের গা ঘেঁষে এই দেশটির স্থলভাগ গড়ে উঠেছে। এই দেশটিতে কৃষিভিত্তিক সমাজ বিদ্যমান। এখানকার অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করেন। ভিয়েতনামে ৫৩টি ভিন্ন জাতিগত ও ভাষাগত গোষ্ঠী বসবাস করেন।

ভিয়েতনামের অতীত

খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকে চীন এই অঞ্চলটি দখল করে নেয়। ৯৩৯ সালে ভিয়েতনামীয়রা স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তী ১০০০ বছর ধরে ভিয়েতনাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি গতিশীল সভ্যতায় পরিণত হয় এবং উপকূল ধরে দক্ষিণ দিকে বিস্তার লাভ করতে থাকে।

১৯শ শতকের শেষ দিকে ফ্রান্স ভিয়েতনাম আক্রমণ করে। ফরাসিরা দেশটিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে দেয় এবং অঞ্চলগুলিকে কম্বোডিয়া ও লাওসের সাথে যুক্ত করে ইন্দোচীন ইউনিয়ন তথা ফরাসি ইন্দোচীন গঠন করে। ফরাসিরা নিজেদের সুবিধার জন্য ভিয়েতনামের সম্পদ আহরণ করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভিয়েতনামে উপনিবেশ বিরোধীরা সাম্যবাদী দলের নেতৃত্বে ফরাসি শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ১৯৫৪ সালে দিয়েন বিয়েন ফু-তে ভিয়েতনামী সেনারা ফরাসি সেনাদের যুদ্ধে পরাজিত করে।

ঐতিহাসিক ভিয়েতনাম যুদ্ধ

১৯৬০ সালে সায়গনে প্রথম সেনা ও উপদেষ্টা আমেরিকাই পাঠিয়েছিল। ১৯৬৯ সালে সায়গনে আমেরিকার ৫ লাখ ৮০ হাজার সেনা ছিল। ভিয়েতনামে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও বেশি বোমা ফেলা হয়। আমেরিকা সেখানে পরীক্ষামূলক রাসায়নিক বোমাও ফেলেছিল। ১৯৬৯ সালেই হো চি মিন মারা যান। ১৫ বছরব্যাপী যুদ্ধে আমেরিকা ১৫০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে। আর ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলের ৭০ ভাগ গ্রাম একদম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয় হয়।

সংস্কৃতি, সভ্যতা ও ভিয়েতনামের প্রকৃতি

→ ভিয়েতনামের সবচেয়ে প্রাচীন তিনটি ধর্ম হল মহায়ন, বৌদ্ধধর্ম, কনফুসিয়াসবাদ এবং দাওবাদ। এখানে রোমান ক্যাথলিক ধারার খ্রিস্টধর্মও রয়েছে। এ ছাড়া ইসলাম ও হিন্দুধর্ম এবং থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম প্রচলিত রয়েছে।

→ ভিয়েতনামে পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় এবং পরিবারের সদস্যরা একে অপরকে সাহায্য করে। গ্রামীণ এলাকায় একান্নবর্তী পরিবার একই বাড়িতে বাস করে। অন্যদিকে শহরাঞ্চলে ছোট পরিবার আলাদাভাবে বাস করে। গড়ে প্রতি পরিবারে সদস্যসংখ্যা ৬।

→ ভিয়েতনামীয়দের প্রধান খাদ্য ভাত। ভাতের সাথে মাছের নানাপদ তারা খেয়ে থাকেন। ভিয়েতনামের একটি জনপ্রিয় মাছের পদের নাম ‘সুরুয়া’।

→ ভিয়েতনামীয়রা সুপ জাতীয় খাবার খেতে চামচ ব্যবহার করে এবং অন্যান্য খাবারের জন্য চপস্টিক্স ব্যবহার করে।

→ এই দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র সৈকত, পাহাড় টিলার সমাহার রয়েছে এখানে। এ ছাড়া খাবারের বৈচিত্র্যের কারণেও ভিয়েতনাম বেশ জনপ্রিয় পর্যটকদের কাছে। ভিয়েতনামী স্যূপ, ডিমের কফি, মাছের সুরুয়া বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

→ দেশটির অনেক অঞ্চল এখন পর্যটন নির্ভর হয়ে উঠেছে। নয়নাভিরাম যোগাযোগ মাধ্যমের জন্যও দেশটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে দেশটিতে রয়েছে উৎসব আনন্দের এক ধুমধাম পরিবেশ।

১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।