• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ভবিষ্যত পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি ‘মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার’

ভবিষ্যত পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি ‘মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার’

ছবি- সংগৃহিত

ফিচার ডেস্ক

পৃথিবীতে অনেক কিছু দেখার আছে, কিন্তু সবকিছু আপনি চাইলেও দেখে শেষ করতে পারবেন না। বিশেষ করে আপনার ভবিষ্যত আপনি জানতে পারবেন না। জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাস না করলেও, ভবিষ্যত জানার ব্যাপারে সবারই কমবেশি আগ্রহ থাকে। সেই আগ্রহকে মাথায় রেখেই ‘মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার’ নির্মাণ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু ভবিষ্যত প্রযুক্তি ও পৃথিবী কেমন হতে পারে তার একটা ধারণা আপনার সামনে তুলে ধরেছে ‘মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার’।

মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার কী?

মিউজিয়ামের ভেতরে প্রবেশ করলে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। ‘ফিউচার হিরোজ’ নামে একটি বিভাগ রয়েছে এই মিউজিয়ামে। ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ভবন’ হিসাবে ইতিমধ্যেই তকমা পেয়ে গিয়েছে দুবাইয়ের এই মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচার। এই ভবনটি তৈরি করতে সময় লেগেছে ৯ বছর।

যা আছে মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচারে

ভবনটি দৃষ্টিনন্দন ও মনোমুগ্ধকর। বিশ্বকে চমকে দেয়ার মতো স্থাপনা। ৭৭ মিটার দীর্ঘ এই অসাধারণ মিউজিয়ামটি প্রযুক্তিগত ভাবে ভবিষ্যতের পৃথিবী কেমন হবে তার নানা চিত্র তুলে ধরেছে। অবাক ব্যাপার যে, এই গোটা নির্মাণে কোনো পিলার বা স্তম্ভ ব্যবহার করা হয়নি। রোবটের মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার টুকরো স্টিলের পাত দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে ভবনটি।

৩০ হাজার বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, স্তম্ভ-বিহীন কাঠামোটি তৈরি হয়েছে একটি অভিনব পদ্ধতিতে। এই মিউজিয়ামটি শুধু যে মিউজিয়াম তা কিন্তু নয়, এর মধ্যে থাকছে গ্লোবাল ইন্টেল্যাকচুয়াল সেন্টার।

স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি বাইরের কাঠামোটিতে আরবি ভাষায় ক্যালিগ্রাফি করা রয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে ‘‘ভবিষ্যৎ তাদের জন্য, যারা সেটি কল্পনা করে নকশা তৈরি করতে পারে এবং কাজটি সম্পন্ন করে।’’

শিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশবিদ্যা, এবং স্বাস্থ্য, সুস্থতা, এবং আধ্যাত্মিকতা- ভবনের সাত তলায় মহাকাশ ভ্রমণ এবং জীবনযাত্রার ভবিষ্যত নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের জন্য নিবেদিত। উল্লেখযোগ্যভাবে, একটি সম্পূর্ণ ফ্লোর শিশুদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে তারা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলি অন্বেষণ এবং সমাধান করার সুযোগ পাবে।

যে কারণে আলোচিত ‘মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার’

→ ‘মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার’ উপবৃত্তাকার একটি জাদুঘর। যাকে অনেকেই বিশ্বের সুন্দরতম স্থাপত্য বলে অভিহিত করেছেন। সাত তলা উপবৃত্তাকার ভবনটি তিরিশ হাজার বর্গ মিটার জুড়ে বিস্তৃত ও ৭৭ মিটার উঁচু।

→ ‘কিল্লা ডিজাইন’ নামক সংস্থার শন কিল্লা এই ভবনটির স্থপতি। বৃহৎ উপবৃত্তাকার এই ভবনটিকে দুবাইয়ের স্থাপত্য এবং সংস্কৃতির মূর্ত প্রতীক। এটি আধুনিক কম্পিউটারকে ব্যবহার করে গড়া নকশা এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিদর্শন।

→ রোবটের মাধ্যমে বিশেষ ভাবে তৈরি করা ১০২৪টি স্টেইনলেস স্টিলের টুকরা দিয়ে এই ভবনটি গঠিত। এই অংশগুলির প্রতিটিই আদপে এক একটি স্বতন্ত্র শিল্পকলার নমুনা। ইস্পাত ছাড়াও ব্যবহার করা হয়েছে চারটি স্তর নিয়ে গঠিত এমন একটি সংকর ধাতু, যা ১৬টিরও বেশি ধাপের মধ্য দিয়ে উৎপাদিত হয়।

→ শুধুমাত্র সম্মুখভাগটি তৈরি করতেই সময় লেগেছে ১৮ মাসেরও বেশি। ১০২৪টি প্যানেল বেছে নেওয়ার কারণ হল, এটি ১০২৪টি চরিত্র নিয়ে গঠিত এক কিলোবাইটকে নির্দেশ করে।

→ গোটা ভবনটিতে যে আলোকবর্তিকা রয়েছে, তার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ কিলোমিটার। আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী তথা দুবাইয়ের শাসক শেখ মহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুমের তিনটি উদ্ধৃতি এই ভবনের দেওয়ালে নকশার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।

→ উদ্ধৃতিগুলির একটিতে লেখা রয়েছে- ‘আমরা শত শত বছর বাঁচতে পারি না, তবে আমাদের সৃজনশীলতার সৃষ্টিগুলি আমাদের চলে যাওয়ার পরেও থেকে যেতে পারে’।

→ জাদুঘরটির প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য রয়েছে নিজস্ব সৌর পার্ক। এই পার্কটি ৪০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। স্থায়িত্বের দিক থেকেও এটি বিশ্বমানের।

→ ভবনটির অন্যতম আকর্ষণ ‘ভল্ট অফ লাইফ’। এই অংশে কলম্বিয়ার আমাজন অববাহিকার নিরক্ষীয় বনভূমির প্রতিরূপ তৈরি করা হয়েছে।

→ নির্মাতাদের কথায়, নতুন জাদুঘরটি ‘ভবিষ্যতবাদী চিন্তাবিদ, উদ্ভাবক এবং জনসাধারণকে একত্রিত করার একটি প্রতিশ্রুতি’ স্বরূপ। যা একই সঙ্গে বিজ্ঞান চেতনাকে লালন করে এবং ভবিষ্যতে পৃথিবীর চেহারা কেমন হতে পারে, তার পথ দেখায়।

০৬ মে ২০২৪, ০৩:৩১পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।