ত্বকের যত্নে ক্যারিশম্যাটিক ‘নিম তেল’
![ত্বকের যত্নে ক্যারিশম্যাটিক ‘নিম তেল’ ত্বকের যত্নে ক্যারিশম্যাটিক ‘নিম তেল’](https://amrai-bangladesh.com/public/np-uploads/content/images/2021April/neem-oil-20211115195116.jpg)
প্রতিকী ছবি
‘নিম’ যেন প্রাকৃতিক এক চিকিৎসক। রোগ নিরাময় ও সুস্বাস্থ্যের জন্য সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে নিম পাতা, নিমের বাকল, নিমের শিকড় ও নিম তেলের ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম এমন একটি উদ্ভিদ, যার মূল বা শিকড় থেকে শুরু করে ফুল ও পাতা পর্যন্ত চিকিৎসার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। অনেকেই মনে করেন, নিম সর্বরোগের মহৌষধ। এতে রয়েছে নানা ধরণের ভেষজ গুণাগুণ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।
প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক, কী আছে নিমের তেলে-
পরিচয় : নিমের বৈজ্ঞানিক নাম AZADIRACHTA INDICA। এটি ওষুধি গাছ। এর ডাল, পাতা, রস ও ফল রোগ নিরাময়ে খুবই কার্যকরী। নিম একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ। ভারত ও বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই নিম গাছ জন্মে। তবে এটি সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়ায় বেশি জন্মে। নিমের নানা গুণাগুণের কথা বিবেচনা করে এই গাছকে ‘একুশ শতকের বৃক্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
উপকারিতা : বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, উইকিপিডিয়া ও বোল্ডস্কাই-এ প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, নিম তেল-
ত্বক ফর্সা করে : অল্প সময়ে ফর্সা ত্বকের অধিকারী হতে চাইলে নিম তেল ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের পরিচর্যায় সবচেয়ে কার্যকরী। নিম তেল ব্যবহার করলে ত্বকের ভেতরে কোলাজেনের উৎপাদন বেড়ে যেতে শুরু করে, যার প্রভাবে স্কিন টোনের উন্নতি ঘটে।
ত্বকের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে : শুষ্ক ত্বক যাদের, তারা নিয়মিত এই তেল লাগালে উপকার পেতে পারেন। প্রতিদিন নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সঙ্গে নিম তেল মিশিয়ে ভালো করে সারা শরীরে মাসাজ করুন, ত্বক সুন্দর হবে।
ব্রণের প্রকোপ কমে : নিম তেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্রণের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। ব্রণ কমাতে কয়েক ফোঁটা নিম তেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল মিশিয়ে ব্রণের উপর লাগান। নিমিষেই দূর হবে ব্রণ।
ত্বকের বয়স কমে : সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বয়স বাড়ে। একই সাথে ত্বকেও বুড়ো ভাব চলে আসে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে ত্বকে নিম তেল ম্যাসাজ করুন, ত্বক টানটান হবে।
খুশকি দূর করে : সাধারণত ফাঙ্গাল ইনফেকশন হলেই এই ধরনের ত্বকের সমস্যা হয়ে থাকে, যা নিম তেল ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব। স্কাল্পের যে কোনো ধরনের সংক্রমণ কমাতেও নিম তেলের জুড়ি মেলা ভার। আপনার ব্যবহার্য শ্যাম্পুর সঙ্গে কয়েকফোটা নিম তেল মিশিয়ে শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহার করুন। উপকার পাবেন।
ত্বকের সংক্রমণ নিরাময় করে : যে কোনো ধরণের সংক্রমণ রোধে নিম তেলের জুড়ি মেলা ভার। নারকেল তেল বা অন্যান্য তেলের সঙ্গে সামান্য নিম তেল মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে সংক্রমণ এড়িয়ে চলা সম্ভব।
একজিমার প্রকোপ কমায় : ত্বকের এক ধরনের প্রদাহজনিত রোগ হল একজিমা। নানা কারণে বহু মানুষ এই ধরনের ত্বকের সমস্যায় ভুগে থাকেন। একজিমার প্রকোপ কমাতেও নিম তেল দারুন কাজ দেয়। শরীরের যে জায়গায় একজিমা হয়েছে, সেখানে নিম তেল লাগালে যন্ত্রণা কমে।
হাইপার পিগমেন্টটেশন দূর করে : ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ বাড়লেই আশঙ্কা বাড়ে হাইপার পিগমেন্টটেশনের। কিন্তু নিয়মিত সারা শরীরে নারকেল তেলের সঙ্গে নিম তেল মিশিয়ে লাগালে মেলানিনের মাত্রা কমে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কমতে শরু করে হাইপার পিগমেন্টটেশনও।
সতর্কতা : রূপচর্চাবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিম তেল ব্যবহারে কিছু সতর্কতা জরুরি। যেমন-
নিমের তেল অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই এটা সব সময় কোনো না কোনো বাহক তেল যেমন-নারিকেল বা জোজোবা তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত। এই তেল ব্যবহারের পর যদি ত্বকে যদি কোনো রকম দানা, অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা দেয়, তাহলে দ্রুতই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। নিমের তেল খাওয়ার উপযুক্ত নয়। তাই কখনই নিমের তেল গ্রহণ করার চেষ্টা করা যাবে না। যদি প্রথমবার নিমের তেল ব্যবহার করেন তাহলে আগে অল্প পরিমাণে ব্যবহার করে দেখুন। মাথায় ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন মুখের সংস্পর্শে না আসে।
যদি এতে লালচেভাব সৃষ্টি হয় তাহলে পরে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে অথবা ব্যবহার সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে। শরীর বা মাথার ত্বকে বড় অংশজুড়ে নিমের তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা নারিকেল, জোজোবা, আঙুরের অথবা ল্যাভেন্ডার তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এতে কার্যকারিতা ও গন্ধ দুইটাই খানিকটা কমবে। নিয়মিত শ্যাম্পুর সঙ্গে দুএক ফোঁটা নিম তেল মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
নিম প্রাচীনকাল থেকেই গর্ভনিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই কেউ গর্ভাবস্থায় বা সন্তান নিতে ইচ্ছুক হলে নিমের তেল এড়িয়ে চলাই ভালো। এটা উর্বরতা কমায় ও গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
এছাড়া যাদের বিভিন্ন রকম ত্বকের জড়তা-বিষয়ক, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কিত ও বাত জ্বরের সমস্যা আছে তাদের নিম তেল ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। নিমের তেল অন্যান্য ওষুধের কার্যকারিতা কমায়। তাই এক্ষেত্রে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রার দিকে সচেতন থাকা উচিত এবং এই সময় নিমের তেল ব্যবহারে সতর্ক হওয়া উচিত। এই তেল ব্যবহারের সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধের মাত্রা ঠিক করিয়ে নেওয়া জরুরি।
তথ্যসূত্র : ডাবর ইন্ডিয়া, উইকিপিডিয়া, জি নিউজ ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস।
এবি/এসএন/আরএ