• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বজ্রপাতের সংকেত ৪০ মিনিট আগে, কমবে মৃত্যুঝুঁকি

বজ্রপাতের সংকেত ৪০ মিনিট আগে, কমবে মৃত্যুঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বজ্রপাতে মৃত্যুরোধে ‘আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ নামে একটি অভাবনীয় যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। প্রাথমিকভাবে দেশের বজ্রপাত-প্রবণ এলাকায় অভিনব এই যন্ত্র বসানো হবে। প্রাথমিক ভাবে ৭২৩টি যন্ত্র সারাদেশে বসাবে সরকার। তবে প্রকল্পটির ব্যয় ও বাস্তবায়ন মেয়াদ এখনও নির্ধারণ হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বজ্রপাতের ৪০ মিনিট আগেই সংকেত পাওয়া যাবে। ফলে যারা খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন তারা সহজেই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারবেন। এতে অনেক প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব হবে।

গবেষকরা বলছেন, বজ্রপাতের অন্যতম হটস্পট বাংলাদেশ। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন-জঙ্গল উজাড়, বঙ্গোপসাগর থেকে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ, উত্তরের হিমালয়ের পাদদেশে পুঞ্জীভূত মেঘ, মেঘ সৃষ্টির প্রক্রিয়া কিউমোলোনিম্বাস (পুঞ্জমেঘ), মোবাইল টাওয়ার থেকে উৎপন্ন অতি মাত্রার ম্যাগনেটিক ফিল্ড ও ওয়েবকে বজ্রপাতের জন্য দায়ী করা হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ বছরে বজ্রপাতে দেশে আনুমানিক আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩৫১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বজ্রপাতে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাত ১টায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দুজনের মৃত্য হয়।

ফিনল্যান্ডের বজ্রপাত-বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালার হিসাবে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৪০ লাখ বা তার বেশি-সংখ্যক বজ্রপাত মেঘ থেকে ভূমিতে নেমে আসে। ২০২০ সালে এর সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫ লাখ।

জানা যায়, প্রতিদিনের মতো ওই দিন রাতে মাছ ধরতে হাওরে যান তারা। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর স্বজনরা রাত ১টায় মাছ ধরার নৌকার ওপর দুজনের মরদেহ দেখতে পান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের কয়েকটি জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ, শেরপুর ও জামালপুর উল্লেখযোগ্য।

স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্ট্রর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের (এসএসটিএএফ) প্রেসিডেন্ট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, বজ্রপাতে মৃতদের বেশির ভাগই কৃষক ও মৎসজীবী। কারণ তারা খোলা জায়গায় কাজ করতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভেজেন। কাছাকাছি বড় গাছ না থাকায় বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয় বেশি। দেশের হাওর অঞ্চলগুলোতে বেশি বজ্রপাত হওয়ায় দ্রুত ওই সব অঞ্চলে আগাম বার্তা ও বজ্র-নিরোধক টাওয়ার নির্মাণে গুরুত্বারোপ করা উচিত।

জানা গেছে, বজ্রপাতে কৃষকদের মৃত্যু কমাতে তিনটি উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এর একটি হলো- ‘আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেম’। দ্বিতীয়টি হলো- ‘লাইটার অ্যারেস্টার’ সংবলিত বজ্রপাত-নিরোধক কংক্রিটের শেল্টার নির্মাণ এবং তৃতীয়টি হচ্ছে- জনসচেতনতা বাড়ানো।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীন বলেন, বজ্রপাতে মৃত্যু কমিয়ে আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মৃত্যুর হার কমে আসবে বলে আমরা আশা করছি।

এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, বজ্রপাতে মৃত্যু কমিয়ে আনতে আমরা তিনটি পদক্ষেপ নিচ্ছি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেম’। বজ্রপাত-প্রবণ এলাকায় এ মেশিন বসানো হবে। প্রাথমিকভাবে ৭২৩টি যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বজ্রপাতের ৪০ মিনিট আগেই সংকেত দেবে যন্ত্রটি। ফলে মানুষ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শহরের জন্য এ উদ্যোগ নিচ্ছি না। যারা খোলা মাঠে কাজ করেন বা মাছ ধরেন, তারাই বজ্রপাতে বেশি মৃত্যুবরণ করেন। তাদের জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

 

এবি/এসএন

২২ নভেম্বর ২০২১, ০৩:১৮পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।