• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সিরিয়াল কিলার এক ‘নীরব নারী’

সিরিয়াল কিলার এক ‘নীরব নারী’

ছবি- সংগৃহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেছে বেছে বৃদ্ধদের ঘরে হানা দিতেন তিনি। সুকৌশলে ঘরে ঢুকে গলায় রশি পেচিয়ে একের পর এক খুন করেছেন। প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের ধরন একই রকম। প্রায় ২৫টি হত্যাকাণ্ডের ধরন একই রকম হওয়ার পর ও ঘাতকের সন্ধান না পাওয়া নড়ে চড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ধারণা করা হয়, কোনো একজন পুরুষ নারীর ছদ্মবেশ নিয়ে হত্যার খেলায় মেতে উঠেছেন। ঘটনাটি মেক্সিকোর একটি শহরের। আর যে ঘাতকের কিলিং মিশনের গল্প এতক্ষণে জানতে চলেছেন তিনি মেক্সিকোর জনপ্রিয় এক কুস্তিগীর নারী।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়াল কিলার এই নারী এখন পর্যন্ত ১১ জন বৃদ্ধাকে খুন করেছেন। প্রত্যেকটি খুনের ধরন একই রকম। এর আগেও কুস্তিগীর নারী দোষী প্রমাণিত হয়ে সাজাভোগ করেছিলেন। ৭৫৯ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল ওই ঘাতকের। দুধ্বর্ষ ওই ঘাতকের নাম হুয়ানা বারায্যা। তিনি মেক্সিকোর পেশাদার এক কুস্তিগীর। এখন তাকে সবাই চেনে ‘ম্যাটাবিহিতাস’ বা বৃদ্ধা নারী ঘাতক নামে।

ঘাতক হুয়ানার জন্ম মেক্সিকো সিটির উত্তরের একটি গ্রামে। কুস্তির মঞ্চে হুয়ানা বারায্যা ‘নীরব নারী’ নামে খ্যাতি পান। কিন্তু কে জানত, এই নীরব নারীই কিনা নীরবে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেক্সিকো সিটির এক আদালতে ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ অন্তত ১১ বৃদ্ধাকে খুন করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন হুয়ানা বারায্যা। আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে ৪০টির বেশি খুনের অভিযোগে মামলা করেছিলেন, কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে ১১টির বেশি মামলায় তারা তাকে দোষী প্রমাণ করতে পারেননি।

মেক্সিকোর গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, হুয়ানা অন্তত ২৫ নারীকে খুন করেছেন। যা ৫০ জনও ছাড়িয়ে যেতে পারে। দেশটির গণমাধ্যম বলছে, খুনের ঘটনাগুলো ঘটছিল সাত বছর ধরে। প্রত্যেক নারীকে তাদের বাসায় একই কায়দায় খুন করা হচ্ছিল।

জানা গেছে, ২০০৫ সালে মেক্সিকো সিটির মেয়র দেশটির নিউরো সাইকোলজিস্ট ড. ফেগি অস্ট্রস্কির সঙ্গে প্রথম টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। মেয়র তাকে অনুরোধ করেন এই খুনের ঘটনাগুলোর কোনো যোগসূত্র আছে কিনা। সব একই খুনির কাজ কিনা এ বিষয়ে তদন্তে সহায়তা করতে।

ড. অস্ট্রস্কি বলেন, সব খুনের একটা প্যাটার্ন ছিল। সবাই বয়স্ক নারী। সবাই থাকত একা। সবাইকে গলায় দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে মারা হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় খুনি কিন্তু দরোজা ভেঙে বাড়িতে ঢোকেনি। কেউ তাকে দরোজা খুলে দিয়েছে।

পুলিশ তখন হন্যে হয়ে সূত্র খুঁজছে। একটা ঘটনায় একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তারা লম্বা-চওড়া একজন মহিলাকে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছেন। আরেকজন বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে দুজনকে দেখেছেন।

একপর্যায়ে পুলিশ শহরের হিজড়াদের ধরপাকড় শুরু করেন। তাদের ধারণা জন্মায়, খুনি একজন পুরুষ, নারীর ছদ্মবেশে খুন করছেন। গোটা তদন্ত চলে বিশৃঙ্খলভাবে।

পুলিশের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। কিন্তু তারা তখন পুরো গোলকধাঁধায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করেই তারা খুনিকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল।

এর পর ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে একটি বাড়িতে ৮২ বছরের এক বৃদ্ধাকে গলায় স্টেথিস্কোপ জড়িয়ে খুন করে পালানোর সময় ধরা পড়ল সন্দেহভাজন একজন। জানা গেল ওই সন্দেহভাজন সাবেক কুস্তিগীর হুয়ানা বারায্যা।

 

এবি/এসএন

০৭ নভেম্বর ২০২১, ০৩:৩৮পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।