• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিনামূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপন: অনন্য নজির গড়লেন ডা. কামরুল

বিনামূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপন: অনন্য নজির গড়লেন ডা. কামরুল

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজের গাড়ি বিক্রি করে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে কিনেন সেকেন্ড হ্যান্ড দুইটা ডায়ালাইসিস মেশিন। এরপর নিকটজনদের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে যোগাড় করেন আরও দুটি মেশিন। এভাবেই অসচ্ছল ও মধ্যবিত্তদের বিনামূল্যে কিডনি রোগের চিকিৎসা শুরু করেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় সহস্রাধিক কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন এই মহৎ চিকিৎসক। হয়েছেন সফল। পেয়েছেন মানবতার ডাক্তার হিসেবে খ্যাতি। বিদেশে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পিতার রক্তে ভেঁজা মাটি ছেড়ে তিনি পরবাসী হননি। দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে রয়ে গেছেন বাংলাদেশে।

বলছিলাম ডা. কামরুল ইসলামের কথা। ঢাকা মেডিকেলের ৪০তম ব্যাচের প্রথমস্থান অধিকারী ডা. কামরুল ইসলাম। চিকিৎসা শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার পর বিদেশে স্থায়ী হওয়ার হাতছানি ছিল তাঁর। কিন্তু দেশের টানে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বাবার টানে তিনি দেশের মানুষের সেবা নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।

রাজধানীর শ্যামলীতে গড়ে তুলেছেন অসচ্ছল ও মধ্যবিত্তদের জন্য বিনামূল্যে কিডনি রোগের চিকিৎসার এক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান।

এসব বিষয়ে সম্প্রতি এক গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারে ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, প্রথমে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড ডায়ালাইসিস মেশিন কিনলাম। এরপর আমার এক মামা থাকেন আমেরিকা, উনাকে বললাম, উনি এবং উনার বন্ধু-বান্ধবরা মিলে আরও দুইটা মেশিন দান করলেন। এই চারটা মেশিন দিয়েই যাত্রা শুরু করলাম। ২০০৫ সালে প্রথম ডায়ালাইসিস শুরু করি আমরা।

এ পর্যন্ত প্রায় সহস্রাধিক কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন জানিয়ে গুণী এই চিকিৎসক বলেন, ‘প্রথম দিকে তো বুকে ব্যথা করত যে, ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতেছি, যদি কিছু হয়, কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে সবাই তো আমাকে ধরবে। তবে আল্লাহর রহমতে সব অপারেশন ভালো হয়েছে।

নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য আজীবন বিনামূল্যে সেবা দেয়ার কথা জানিয়েছে ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, আমার হাসপাতাল মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য। বিশেষ করে যারা টাকার জন্য বাইরে যেতে পারছেন না, তাদের জন্য এটা করা। আমার টার্গেট এখানে যেন চিকিৎসা সেবাটা ঠিক থাকে। কিন্তু এখানে অতোটা ভালো পরিবেশ আমি দিতে পারিনি, যে কারণে উচ্চবিত্ত রোগীরা হয়তো এখানে এসে অন্তুষ্ট হন।

উচ্চশিক্ষা শেষে বিদেশে গিয়ে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ থাকলেও দেশের টানে, মানুষের টানে সেবা দিয়ে যাওয়ার অনুভূতির কথা জানিয়ে মানবতার ডাক্তার খ্যাত কামরুল ইসলাম আরও বলেন, আমি হয়তো টাকা নিই না। কিন্তু অনেকেই এই যে পেমেন্টসহ সব করে দিয়ে যায়। আমার একটা স্বাধীনতা আছে যে, আমি এখানে ইচ্ছামতো কাজ করতে পারছি। মানুষ আমাকে যে সম্মান দিয়ে যাচ্ছে, যে বাহবা আমি পাচ্ছি, যে ভালোবাসা আমি পাচ্ছি, এটা কি আমি কোটি টাকা দিয়েও কিনতে পারতাম? এটা টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব নয়।

বিদেশে না যাওয়ার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, আমার কখনো বিদেশ টানে নাই, আমি ঢাকা মেডিকেলে আমার ব্যাচে (৪০তম ব্যাচ) ফার্স্ট হয়েছি। আমার ব্যাচের অন্তত ২০/২৫ জন ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে আছে। আমার কখনো বিদেশে যেতে ইচ্ছা করেনি। বাবার প্রতি টান ছিল বলেই আমি বিদেশে যেতে চাইনি, কারণ এই মাটিতে আমার বাবার রক্ত মিশে আছে। দ্বিতীয় টান হলো আমার মা।

এদিকে সম্প্রতি বিবিসি বাংলায় দেয়া সাক্ষাতকারে ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, কোরবানির পশুর কিডনি নিয়ে প্রথম অপারেশন থিয়েটারে প্র্যাকটিস করতাম। এভাবে প্র্যাকটিস করতে করতে একটা সময় সাহস তৈরি হয়। এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১ জনের কিডনি প্রতিস্থাপন করেছি।

কিডনি প্রতিস্থাপনে কোনো রোগীর কাছ থেকে পারিশ্রমিক নেননি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমার সহকর্মী ও স্টাফরা ছুটির দিনেও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের প্রায় আড়াইশ কর্মী রয়েছে। যারা নামমাত্র পারিশ্রমিকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমি তাদের জন্য কিছুই করতে পারিনি। তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।

 

এবি/এসএন

৩০ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৪১পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।