• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দেড় বছর পর প্রাণ ফিরেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

দেড় বছর পর প্রাণ ফিরেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

প্রতিকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ ৫৪৩ দিন বন্ধ থাকার পর খুলেছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পূর্ব ঘোষণা থাকায় রবিবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের সব স্কুল-কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হয়। শারীরিক দুরত্ব তেমন একটা মানা না হলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মাস্ক পরেই প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পেরে শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠতেও দেখা গেছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর রাজধানীতে বেড়ে গেছে যানজট। বেড়েছে ভোগান্তি। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে কিংবা সুরক্ষা নির্দেশনা যথাযথ ভাবে পালন করা না হলে, ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

সরেজমিন দেখা গেছে, রবিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর রাস্তায় শিক্ষার্থীদের চলাচল বাড়তে থাকে। দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের আনন্দ উল্লাস করতে দেখা গেছে শ্রেণিকক্ষে। অনেক দিনপর সহপাঠী বন্ধুদের কাছে পেয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। শিক্ষকরাও শারীরিক দুরত্ব মেনে শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

একই চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহসহ সকল বিভাগীয় শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। এছাড়া দেশের সব জেলা-উপজেলা শহর ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি। দীর্ঘদিন পর স্কুল খুলে দেয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যেন আনন্দে ভাঁসছেন। শিক্ষার্থীদের মুখে ছিল মাস্ক, অনেকের হাতেই দেখা গেছে গ্লভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার।

তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেয়া হলেও শারীরিক দুরত্ব খুব একটা মানা হচ্ছে না। এ নিয়ে অভিভাবকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া রাজধানীতে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। কয়েকজন শিক্ষার্থীরা জানায়, দীর্ঘ সময় মুখে মাস্ক পরে থাকতে হচ্ছে। তারপরও ভালো লাগছে যে, তারা স্কুলে আসতে পেরেছে। শ্রেণিকক্ষে বন্ধুদের মুখ দেখতে না পারলেও তারা সবাই খুশি।

কয়েকজন অভিভাবক বলেন, স্কুল খোলার ঘোষণার পর থেকেই বাচ্চারা খুব খুশি ছিল। অনেকে দুদিন আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করেছে। দেড় বছর আগের ব্যাগ-জুতা এখন আর কেউ নিতে চায়নি। তাই অনেক শিক্ষার্থী নতুন জুতা, নতুন ব্যাগ নিয়ে স্কুলে এসেছে। ব্যাপারটা এমন যেন, তারা প্রথম স্কুলে আসছে।

অধিকাংশ শিক্ষকরা বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সবধরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আজ প্রথমদিন। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সবাইকে সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যদি নিয়ম মেনে চলেন, তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ভাবে ধরে রাখা সহজ হবে।

এদিকে দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় তিনি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ দেন।

এসময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখন থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সারপ্রাইজ ভিজিট চলবে। স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কিনা তা দেখা হবে। কেউ যদি স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে ন্যূনতম অবহেলা করে, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রবিবার রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শন শেষে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় যথাযথ ভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত না করায় আজিমপুর গভর্নমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, করোনা ও ডেঙ্গি থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে হবে। সুরক্ষাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়, তাহলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে। মশার আবাসস্থল নিয়মিত ধ্বংস করতে হবে। যদি কোনো শিক্ষার্থী কিংবা তার পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়, তাহলে তাকে ছুটি দিতে হবে এবং তাকে অনুপস্থিত করা যাবে না।

স্কুলের বেতন পরিশোধের প্রসঙ্গে ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীদের স্কুলের বেতন পরিশোধে অভিভাবকদের চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। আমরা এরই মধ্যে সেই নির্দেশনা দিয়েছি। করোনার কারণে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কাজেই কাউকে বেতনের জন্য চাপ প্রয়োগ করা যাবে না।

 

এবি/এসএন

১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:৫১পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।