• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ত্বক ও চুলের সুরক্ষায় তুলনাহীন ‘আমলকী তেল’

ত্বক ও চুলের সুরক্ষায় তুলনাহীন ‘আমলকী তেল’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

ভেষজগুণে ভরপুর একটি ফল ‘আমলকী’। মানবদেহের জন্য এই ফলে রয়েছে নানা উপকারী উপাদান। আমলকী কাঁচা খাওয়া গেলেও এর তেল বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য অনন্য। ত্বক ও চুলের যত্নে আমলকীর তেলের জুড়ি মেলা ভার। সুপ্রাচীনকাল থেকে আমলকীর তেল ব্যবহার হয়ে আসছে।

আমলকী কাঁচা খাওয়া হলেও আমাদের দেশে এটি দিয়ে নানা স্বাদের চাটনি ও আচার তৈরি করা হয়। পুষ্টিমাণে আমলকীর বিকল্প নেই। প্রিয় পাঠক, চলুন একনজরে দেখে নিই কি আছে আমলকীর তেলে-

পরিচয়:
আমলকীর বৈজ্ঞানিক নাম Phyllanthus emblica। এটি ফাইলান্থাসি পরিবারের ফাইলান্থুস শ্রেণির একপ্রকার ভেষজ ফল। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম ‘আমলক’। ইংরেজিতে এই ফলের নাম amla বা Indian gooseberry।

পুষ্ঠি উপাদান:
হেলথ লাইন ও ইন্ডিয়া টাইমসের পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, আমলকীতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, কার্বোহাইড্রেট, জিংক, ফসফরাস, আয়রন, ক্যালসিয়াম, কপার, পটাসিয়াম ও খাদ্য আঁশ। আমলকীর তেলেও রয়েছে এসব উপাদান। যা দেহের বাহ্যিক ত্বক ও চুলের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।

পুষ্টি গবেষকরা বলছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকীতে রয়েছে-
ফাইবার বা খাদ্যআঁশ- ৭ গ্রাম,
ভিটামিন সি- ৪৬ শতাংশ,
কপার- ১২ শতাংশ,
কার্বোহাইড্রেট- ১৫ গ্রাম,
পটাসিয়াম- ৬ শতাংশ,
ভিটামিন বি৬- ৭ শতাংশ এবং
ম্যাঙ্গানিজ- ৯ শতাংশ।

উপকারিতা:
জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক মার্কিন ওয়েবসাইট হেলথ লাইন, ইন্ডিয়া টাইমস ও উইকিপিডিয়ার নিবন্ধে বলা হয়েছে, আমলকীর তেল-

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে: দীর্ঘদিনের অযত্ন অবহেলায় মুখে যে কালো ছোপ ছোপ দাগ হয়েছে, তা দূর করতে চান? আমলকীর তেল ত্বকে ব্যবহার করুন। এ ছাড়া কাঁচা আমলকী বেটে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগান, দারুণ ফল পাবেন।

চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে: চুলের যত্নে আমলকীর জুড়ি মেলা ভার। তেমনি আমলকীর তেলে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ও প্রোটিন চুল পড়া রোধে ব্যাপক কাজ করে। এ ছাড়া এটি মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে নতুন চুল গজায়।

ত্বকের মৃত কোষ দূর করে: আমলকির রস ফেস স্ক্রাব হিসাবে ব্যবহার করা যায়। কারণ এটি ত্বকের উজ্বলতা ফুটিয়ে তুলতে সহায়তা করে। আমলকিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিন সি ত্বককে টানটান ও দূঢ় করে। এক চামচ আমলা গুঁড়ো নিয়ে গরম পানিতে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। আপনার মুখ স্ক্রাব করতে এই পেস্টটি ব্যবহার করুন। পাঁচ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের উজ্বলতা আরো বৃদ্ধি পাবে।

চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ করে: চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে আমলকি বেশ কার্যকর। কয়েক টুকরো শুকনো আমলকি নিয়ে পানিতে সিদ্ধ করুন। পুরোপুরি সিদ্ধ হয়ে গেলে এগুলো ম্যাশ করুন এবং একটি পাল্পি পেস্ট তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকের পাশাপাশি চুলের গায়েও প্রয়োগ করতে পারেন। এ ছাড়া কাঁচা আমলকির রস চুলকে প্রাকৃতিক ভাবে চকচকে করতে সহায়তা করে।

কাশি ও কফ নিরাময়: দীর্ঘদিনের কাশি ও কফ দূর করতে আমলকীর তেল হালকা গরম করে গলায় ও বুকে লাগাতে পারেন। এটি কাশি ও কফজনিত সমস্যা দূর করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: আমলকীতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত নিরাময়ে খুবই কার্যকরী। এছাড়া এর তেলে থাকা অন্যান্য খনিজ উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে: দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে মধুর সঙ্গে এক চা চামচ আমলকী পাউডার অথবা আমলকীর তেল মিশিয়ে খেয়ে নিন। এটি চোখের ছানি পড়া সমস্যা নিরাময় করে।

জ্বর ও সংক্রমণ রোধ: সাধারণ জ্বরসহ যেকোনও ধরণের সংক্রমণ রোধে আমলকীর তেলের জুড়ি মেলা ভার। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।

বমি ভাব দূর করে: অতিরিক্ত হেঁচকি উঠলে অথবা বমি বমি ভাব হলে আমলকীর রস অথবা আমলকীর তেল সামান্য পরিমাণে হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে নিয়মিত ২/৩ দিন পান করুন। অস্বস্তি ও বমি বমি ভাব কেটে যাবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: নিয়মিত আমলকীর রস খাওয়ার অভ্যাস আপনার শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত করবে। আর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকা মানেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।

তথ্যসূত্র- হেলথ লাইন, ইন্ডিয়া টাইমস ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:২৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।