• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ক্যারিশম্যাটিক ‘কালোজিরা তেল’

ক্যারিশম্যাটিক ‘কালোজিরা তেল’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

‘মৃত্যু ব্যতিত সর্ব রোগের মহৌষধ কালোজিরা’। সাধারণ সর্দি-কাশি, জ্বর সারাতে দ্রুত কাজ করে কালোজিরা তেল। ভেষজ গুণাগুণেও কালোজিরা তেলের জুড়ি মেলা ভার। কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়া গেলেও এর তেল নানা ভাবে ব্যবহার করা যায়। তবে শরীরে মালিশের জন্য কালোজিরার তেলের বিকল্প নেই।

মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় উপাদান রয়েছে এতে। চায়ের সাথে নিয়মিত কালোজিরা মিশিয়ে অথবা এর তেল চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। মাথা ব্যথার উপশমেও কালোজিরার তেল খুবই কার্যকরী।

প্রিয় পাঠক চলুন এক নজরে দেখে নিই, কি আছে কালোজিরার তেলে-

পরিচয়:
কালোজিরার বৈজ্ঞানিক নাম Nigella Sativa Linn। এটির ইংরেজি নাম Black Caraway, Black Cumin, Nigella, Kalojeere, Ges Kalonji ইত্যাদি। কালোজিরা মূলত একটি মাঝারি আকৃতির মৌসুমী গাছের একটি দানা প্রকৃতির ভেষজ উপাদান। কালোজিরার তেল আয়র্বেদীয়, ইউনানী, কবিরাজী ও লোকজ চিকিৎসায় কালোজিরার বহুল ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে।

কালিজিরা তেলের পুষ্টিগুণ:
মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের নিবন্ধে বলা হয়েছে, কালোজিরার তেলে প্রায় শতাধিক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কালোজিরা তেল সবচেয়ে কার্যকরী। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক ক্যারোটিন ও শক্তিশালী হরমোন। এছাড়া পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক রয়েছে কালোজিরার তেলে।

প্রতি ১০০ গ্রাম কালোজিরা তেলে রয়েছে-

আমিষ- ২১ শতাংশ,
শর্করা- ৩৮ শতাংশ,
চর্বি বা ভেষজ তেল- ৩৫ শতাংশ।
প্রোটিন- ২০৮ মাইক্রোগ্রাম,
ভিটামিন বি১- ১৫ মাইক্রোগ্রাম,
নিয়াসিন- ৫৭ মাইক্রোগ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম,
আয়রন- ১০৫ মাইক্রোগ্রাম,
ফসফরাস- ৫.২৬ মিলিগ্রাম,
কপার- ১৮ মাইক্রোগ্রাম এবং
জিংক- ৬০ মাইক্রোগ্রাম।

উপকারিতা:
উইকিপিডিয়া, হেলথ লাইন ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের নিবন্ধে বলা হয়েছে, কালোজিরার তেল-

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: আধা চা চামচ কালোজিরা তেলের সঙ্গে এক কাপ দুধ মিশিয়ে প্রতিদিন ২ বার খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। কারণ কালোজিরায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ উপাদান রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে।

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করে: স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিতে কালোজিরার তেল খুবই কার্যকরী। নিয়মিত এক চা চামচ পুদিনা পাতার রস বা কমলার রস বা এক কাপ রঙ চায়ের সাথে এক চা চামচ কালোজিরা তেল মিশিয়ে খেলে স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পায়।

বুকের দুধ বৃদ্ধি করে: প্রসূতি মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে কালোজিরার তেল অত্যন্ত কার্যকরী। প্রতি রাতে শোবার আগে ৫-১০ গ্রাম কালোজিরা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে অল্প সময়ের মধ্যেই বুকের দুধ বাড়তে থাকে।

শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ: দুই বছরের অধিক বয়সী শিশুদের কালোজিরা তেল খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। প্রতিদিন এক ফোটা করে কালোজিরা তেল খাওয়ালে শিশুর মানসিক বিকাশ ত্বরান্বিত হয়।

আমাশয় নিরাময়: দীর্ঘদিনের আমাশয় দূর করতে কালোজিরা তেলের জুড়ি নেই। নিয়মিত এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দিনে ৩ বার খেলে পুরনো আমাশয় নিরাময় হবে।

মাথা ব্যথা নিরাময়: নিয়মিত ১ থেকে ২ চা চামচ কালোজিরার তেল মাথায় ভালোভাবে লাগালে মাথা ব্যথা উপশম হয়। এছাড়া নিয়মিত এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দিনে তিনবার খেলে দীর্ঘ মেয়াদে মাথা ব্যথার সমস্যা দূর হয়।

সর্দি থেকে মুক্তি: সর্দি সমস্যা দূর করতে কালোজিরা তেল দারুণ এক উপাদান। নিয়মিত এক চা চামচ কালোজিরা তেল সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ রং চায়ের সাথে মিশিয়ে খেলে সর্দি, জ্বর ও কাশি দূর হয়।

যৌন অক্ষমতা দূর করে: হরমোন পরিবর্তনজনিত কারণে যৌন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত কালোজিরা তেল খান, এটি যৌন আকাঙ্খা বৃদ্ধিতে ব্যাপক কাজ করে। এটি পুরুষের স্পার্ম বৃদ্ধি করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তারা সপ্তাহে তিনদিন রসুনের চারপাচটি কোয়া চিবিয়ে ও এক চা চামচ কালোজিরা তেল খান। এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কালোজিরা তেল অনন্য। প্রতিদিন এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

বাত ব্যথা নিরাময়: যারা দীর্ঘদিন ধরে বাত ব্যথায় ভুগছেন, তারা ব্যথার স্থান পরিষ্কার করে ওই স্থানে কালোজিরা তেল মালিশ করুন, ব্যথা উপশম হবে।

পাইলস নিরাময়: কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এক চা-চামচ মাখন ও এক চা চামচ কালোজিরার তেল একসঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন খালি পেটে পান করুন। উপকার পাবেন।

শ্বাস কষ্ট ও হাঁপানি রোগ নিরাময় করে: হাঁপানী বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দূর করতে ভর্তায় সামান্য কালোজিরা তেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট উপশম করে।

তথ্যসূত্র- হেলথ লাইন, বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস, এই সময় ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৭:৫৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।