• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার

প্রতিকী ছবি

স্বাস্থ্য ডেস্ক

ডেঙ্গু জ্বর একটি মশা বাহিত রোগ যা বিশ্বের গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপনেবেশীয় অঞ্চলে হয়ে থাকে। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রামণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ গুলো দেখা দেয়। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু সংক্রামণের লক্ষ লক্ষ ঘটনা ঘটে থাকে। কয়েক প্রজাতির এডিস মশকী (স্ত্রী মশা) ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক। যেগুলোর মধ্যে এডিস ইজিপ্টি মশকী প্রধানতম।

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধী টিকা কয়েকটি দেশে অনুমোদিত হয়েছে, তবে এই টিকা শুধু একবার সংক্রমিত হয়েছে এমন রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকর। মূলত এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। তাই মশার আবাস স্থল ধ্বংস করে মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কালে ডেঙ্গু একটি বৈশ্বিক আপদে পরিণত হয়। এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও অন্যান্য মহাদেশের ১১০টির অধিক দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। প্রতি বছর পাঁচ থেকে পঞ্চাশ কোটি মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। 

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো কি কি?

সংক্রামিত মশা দ্বারা কামড়ের চার থেকে সাত দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ যখন দেখা দেয়। ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যায়। ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রার সাথে আরও কিছু লক্ষণ দেখা যায়। সেগুলো হলো-

  • মাথা ব্যথা।
  • পেশী, হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা।
  • বমি বমি ভাব/বমি হওয়া।
  • চোখের পেছনে ব্যথা।
  • গ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
  • শরীরে র্যাশ বা ফুসকুড়ি হওয়া।

কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো আরও খারাপ জটিল ভাবে দেখা দেয় এবং জীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। রক্তনালী গুলি প্রায়শই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ফুটো হয়ে যায়।

ডেঙ্গু হেমোরজিক জ্বর বা গুরুত্বর ডেঙ্গু আপনার জীবনের জন্য হুমকি হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থা হয়েছে কিনা তা বুঝার জন্য কিছু লক্ষণ রয়েছে-

       সাংঘাতিক পেটে ব্যথা।

       অবিরাম বমি বমি ভাব।

       আপনার মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে।

       প্রস্রাব, পায়খানা বা বমির সাথে রক্ত যেতে পারে।

       ত্বকের নিচে রক্ত ক্ষরণ যা ক্ষত হতে পারে।

       শ্বাস নিতে কষ্ট বা দ্রুত শ্বাস নেয়া।

       ঠাণ্ডা ত্বক।

       অবসাদ।

       বিরক্তি বা অস্থিরতা।

ডেঙ্গু জ্বর মনে হচ্ছে!! ডাক্তারের কাছে যাবেন কখন?

জ্বর হওয়ার পরে যদি আপনি উপরে উল্লেখিত সমস্ত লক্ষণগুলো অনুভব করেন তাহলে নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার কারণ সমূহ

মশা দ্বারা ছড়িয়ে থাকা চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসের যেকোনো একটির কারণে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। একটি মশা যখন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড় দেয়, তখন ভাইরাসটি মশার মধ্যেও ভাইরাসটি প্রবেশ করে। সংক্রামিত মশা যখন অন্য ব্যক্তিকে কাঁমড় দেয় তখন ভাইরাসটি সেই ব্যক্তির রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে।

ডেঙ্গু জ্বর থেকে নিরাময়ের পরে আপনার যে ধরনের ভাইরাস সংক্রামিত হয়েছিল তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। তবে অন্য তিনটি ডেঙ্গু জ্বরের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি হয় না।

যদি আপনি দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ বার আক্রান্ত হন তাহলে ডেঙ্গু হেমোরজিক ফিভার নামে পরিচিত মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

আরও অনেক কারণ রয়েছে যা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এমন অঞ্চলে বসবাস করলে বা ভ্রমণ করলে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় বা উপনিবেশীয় অঞ্চলে থাকার কারণে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হলো দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়া, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দীপপুঞ্জ, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ।

ডেঙ্গু জ্বরের জটিলতা

গুরুতর ডেঙ্গু জ্বর ফুসফুস, যকৃত বা হার্টের ক্ষতি করতে পারে। রক্তচাপ বিপদজনক স্তরে নেমে যায়, যার ফলে শক এবং কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিরোধ

ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি সক্রিয় থাকে তবে রাতেও কামড়াতে পারে। এজন্য সবসময় মশারি টানিয়ে ঘুমাবেন। বাইরে বের হবার সময় ফুল হাতা শার্ট, ফুল প্যান্ট ও জুতা-মোজা পরিধান করুন।

এডিস মশার বংশ বিস্তারকে ধ্বংস করুন। আপনার বাসার আশেপাশের যে সব স্থানে পানি জমে থাকার জায়গা আছে সেসব জায়গা পরিষ্কার করুন। গাড়ির টায়ার, ফুলের টব, এসি/ফ্রিজের জমে থাকা পানি, ভাঙ্গা বোতল/বালতি, ছাদে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

যে সব স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় সেসব স্থানে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিন। অথবা মশা মারার ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা করুন।

প্রচুর পরিমাণে পানি, সরবত ইত্যাদি তরল খাবার পান করুন।

দিনের বেলায় ঘুমানোর অভ্যাস ত্যাগ করুন।

যদি সম্ভব হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকুন। পরিষ্কার, আলো বাতাস সম্পূর্ণ এবং শুকনা ঘরে থাকবেন।

জ্বর আসলে মাথায় পানি দিবেন এবং ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে ফেলবেন।

ডেঙ্গু জ্বরের ওষুধ?

ডেনগভ্যাক্সিয়া, ৯ থেকে ৪৫ বছর বয়সী  আক্রান্ত, যে অঞ্চলে আক্রান্তের প্রবণতা বেশি সে সকল অঞ্চলে দেয়ার অনুমতি রয়েছে। ১২ মাসে এই ভ্যাক্সিনের ৩টি ডোজ দেওয়া হয়। তবে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ব্যবহারে শিথিলতা রয়েছে।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের পরামর্শ হলো, যে সকল অঞ্চলে এ রোগটি সাধারণ ভাবে রয়েছে সেখানে ভ্যাক্সিনটির ব্যবহার এত জরুরি নয়। মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করাই আসল কাজ।

তাই আপাতত আপনি যদি এমন কোন অঞ্চলে করে থাকেন যেখানে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ রয়েছে, সেখানে ডেঙ্গু জ্বর এড়ানোর সর্বোত্তম উপায় হলো মশার কামড় থেকে বেঁচে থাকা এবং এর বংশ বিস্তারের জায়গা গুলোকে ধ্বংস করে দেয়া। তথ্যসূত্র: মায়ো ক্লিনিক।

 

এবি/এনজে/এসএন

১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:৩৮পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।