মিষ্টির সেরা পুষ্টিভরা ‘খেজুরের গুড়’
প্রতিকী ছবি
বাংলার প্রকৃতি এখন হেমন্তের সাঁজে সেঁজেছে। গ্রামীন জনজীবনে এরই মধ্যে নেমে এসেছে শীতের আমেজ। গ্রামে গ্রামে শুরু হয়েছে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ। নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই গাছিরা খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন। নভেম্বরের মাঝামাঝি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ পুরো দমে শুরু হবে। সেই রস বিশেষ প্রক্রিয়া গুড়ে রূপান্তরিত হবে। বাংলাদেশে আবহমান কাল থেকে খেজুর গুড়ের কদর রয়েছে। সারাবছর মানুষ এই শীতকালের জন্য অপেক্ষায় থাকে। নবান্নের নতুন ধানের চালের গুঁড়া ও নতুন খেজুর গুড়ের পিঠার ঐতিহ্য সুপ্রাচীন।
প্রিয় পাঠক, আমাদের এই পর্বে খেজুর গুড়ের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। চলুন দেখে নেয়া যাক, কি আছে খেজুরের গুড়ে-
পরিচয়:
খেজুর গাছ থেকে বিশেষ প্রক্রিয়া রস সংগ্রহ করা হয়। এই রস দিয়ে গুড় তৈরি হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছ জন্ম্। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে খেজুরের গুড় বেশি পাওয়া যায়। বিশেষ করে ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মাগুরা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া অঞ্চলে খেজুর গাছ বেশি জন্মে। ফলে এই অঞ্চলে খেজুরের রস ও গুড় বেশি পাওয়া যায়। তবে খেজুরের গুড়ের জন্য বাংলাদেশে যশোর ও ঝিনাইদহ জেলা বিখ্যাত।
পুষ্টিগুণ:
পুষ্টিবিদদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও একাধিক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, খেজুরের গুড়ে রয়েছে, প্রচুর খনিজ পদার্থ, ভিটামিন ও মিনারেলস। খেজুরের গুড় আখের গুড় থেকেও বেশি মিষ্টি, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। খেজুরের গুড়ে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফ্যাট ও মিনারেলস।
কেন খাবেন খেজুরের গুড়:
কলকাতার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন এই সময়-এ প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, খেজুরের গুড় খেলে-
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: গুড় হজমশক্তি বাড়ায়। সেই সঙ্গে এর ভিতরে থাকা শর্করা কোষ্ঠও সাফ করে। আপনি যদি দীর্ঘ দিন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন, তবে রোজ এক চামচ গুড় আপনাকে স্বস্তি দিতে পারে।
লিভার ভাল রাখে: গুড় লিভার থেকে যাবতীয় টক্সিন দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখে। ফলে, শরীর থেকে টক্সিন বের করতে চাইলে রোজ এক কামড় গুড় হতে পারে আপনার সহায়।
সর্দি-কাশি তাড়ায়: গুড় সর্দি-কাশিও তাড়ায়। সর্দি হলে একটু গুড় খেয়ে দেখুন। স্বস্তি পাবেন।
রক্ত পরিষ্কার রাখে: গুড় যেহেতু লিভার থেকে টক্সিন বের করে দেয়, সেই জন্য রক্তও সাফ থাকে।
শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: গুড় কোষ্ঠ সাফ করে, রক্ত সাফ রাখে। ফলে, আপনা থেকেই শরীরের প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ে।
শরীর সাফ রাখে: শুধু লিভারই নয়, তার পাশাপাশি অন্ত্র, ফুসফুস এবং শরীরের অভ্যন্তরের অনেক যন্ত্রই পরিষ্কার রাখে গুড়।
রক্তসল্পতা রোধ করে: গুড় হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। ফলে, রক্তাল্পতা রোধে এর বিকল্প নেই বললেই চলে।
পাকস্থলি ঠাণ্ডা রাখে: খেজুরের গুড় সারা শরীর তো বটেই, বিশেষ করে পাকস্থলি ঠাণ্ডা রাখে। ফলে, কর্মক্ষমতা বাড়ে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: খেজুরের গুড়ে রয়েছে সোডিয়াম ও পটাসিয়াম, যা রক্তচাপের ভারসাম্য বজায় রাখে।
শ্বাসকষ্ট কমায়: এই গুড় শরীর ঠাণ্ডা রাখে, কাজেই এটা শ্বাসকষ্টে স্বস্তি দেয়। অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিসের মতো অসুখ নিরাময়ে নিয়মিত খেজুরের গুড় খেলে উপকার পাওয়া যায়।
গাঁটের ব্যথা কমায়: গাঁটের ব্যথায় গুড় স্বস্তি এনে দেয়। এক্ষেত্রে খেজুরের গুড় আরও বেশি কার্যকরী।
ক্লান্তি দূর করে: গুড় রক্ত পরিষ্কার করে, শ্বাসকষ্ট কমিয়ে, মেদ গলিয়ে শরীরকে ঝরঝরে রাখে। ফলে, কর্মক্ষমতা যেমন বাড়ে, তেমনই ক্লান্তিও কমে।
সতর্কতা:
যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা খেজুরের গুড় খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এছাড়া যারা কিডনি রোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত তারা খেজুরের গুড় বা খেজুরের গুড়ের তৈরি অন্যান্য খাবার পরিহার করুন।
তথ্যসূত্র: এই সময়, উইকিপিডিয়া ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস।
এবি/এসএন