• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বের ভয়াবহ কয়েকটি বন্যা

বিশ্বের ভয়াবহ কয়েকটি বন্যা

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

নদীমাতৃক বাংলাদেশ প্রতিবছরই বন্যা কবলিত হয়। অসংখ্য নদ-নদী, খাল, বিল, হাওর ও নিচু এলাকার লাখ লাখ মানুষ বন্যার কড়ালগ্রাসে বিপর্যস্থ। সম্প্রতি পাড়াড়ি ঢল ও প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যার পানিতে ডুবে গেছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনাসহ দেশের উত্তর-উত্তরপূর্ব অঞ্চল। পানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট। প্রতি বছর বন্যায় ফসলাদির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গবাদিপশু ও মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে।

এবছর সিলেট অঞ্চলের বন্যা অতিতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে সাধারণ মানুষ। প্রিয় পাঠক, বন্যা এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা বিশে^র বিভিন্ন দেশে হয়ে থাকে। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা কঠিন। তারপরও দুর্যোগ মোকাবিলা বিষয়ক বিভিন্ন জার্নাল সূত্রে বিশে^র ভয়াবহ কয়েকটি বন্যা সম্পর্কে আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি। চলুন দেখে নেয়া যাক ভয়াবহ কয়েকটি বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও অন্যান্য-

জোনসটাউন বন্যা

১৯৮৯ সালের ৩১ মে। আমেরিকার পেনসিলভানিয়ার লেক কনেমাঘের বাঁধ ভেঙে শহরে ঢুকে পড়ে বিশাল পানির ঢেউ। পানি তোড়ে মুহূর্তেই ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ৩১ মে দিনের শুরুটা ছিল অন্যান্য দিনের মতোই ছিল। কিন্তু বিকালে আকষ্মিকভাবে ৪০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস শহরে আঁছড়ে পড়ে। প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায় সম্পূর্ণ জোনসটাউন শহর। প্রাণ হারায় কমপক্ষে দুই হাজার মানুষ, ধ্বংস হয়ে যায় ১ হাজার ৬০০ ঘরবাড়ি।

চীনের বন্যা

ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার তথ্য বলছে, তুষারগলা পানি, প্রবল বৃষ্টি পরপর কয়েকটি সাইক্লোনের প্রভাবে চীনে আঘাত হানে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। ঘটনাটি ১৯৩১ সালের। ওই বছরের জুলাই মাসের শুরুর দিকে বন্যা শুরু হয়। যার স্থায়ীত্ব ছিল প্রায় ৬ মাস। ভয়াবহ সেই বন্যার ব্যাপ্তি এত বেশি এলাকা জুড়ে ছিল, যা ইংল্যান্ডের আয়তনের চেয়েও বেশি।

ইউরোপের ভয়াবহ বন্যা ‘গ্রোট মেনড্রেক’

১৩৬২ সালে ‘গ্রোট মেনড্রেক’ নামক বন্যায় ডুবে গিয়েছিল গোটা ইউরোপ। প্রথমে বন্যা দেখা দেয় ইংল্যান্ডে। তারপর তা নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও জার্মানিতেও ছড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ সেই বন্যায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারান। বিশেষজ্ঞরা জানান, ভয়াবহ ওই বন্যার পর ইউরোপ নতুন রূপ পায়।

সিন্ধু উপত্যকার বন্যা

পাকিস্তানের সিন্ধু উপত্যকায় ১৮৪১ সালের প্রথম দিকে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ওই ভূমিকম্পের ফলে নাগা পর্বতে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। ফলে সৃষ্টি হয় একটি প্রাকৃতিক লেকের। কিন্তু প্রকৃতির ক্রমাগত পরিবর্তনের ফলে ওই বছরের জুন মাসেই লেকের বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। ১০০ ফুট উচ্চতার সেই জলোচ্ছ্বাসে কয়েকশ গ্রাম প্লাবিত হয়। সেই বন্যায় প্রায় ৫ শতাধিক সেনা সদস্য নিহত হন।

ইতালির মহাপ্লাবন

অতিবৃষ্টির ফলে ইতালির আরনো নদীতে ভয়াবহ প্লাবন দেখা দেয়। এটিই ছিল ইতালির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। ওই বন্যায় ইতালির রেনেসাঁ যুগের শিল্পকর্মগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ধ্বংস হয়ে যায় ইতালির আর্ট গ্যালারি ও গ্রন্থাগার সমূহ। পানির তোড়ে হারিয়ে যায় হাজার হাজার বই।

বাংলাদেশের ৮৮’র বন্যা

বন্যাপ্রবণ বাংলাদেশে প্রতিবছরই বন্যা হয়। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ওই বন্যা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে সংঘটিত সেই বন্যায় দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা ডুবে যায়। বিভিন্ন এলাকায় ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় ১৯৮৮ সালের বন্যা। দেশের ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে মারাত্মক এবং ক্ষয়ক্ষতিময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিশ্বব্যাপী যা আলোচিত ছিল ’৮৮-এর বন্যা নামে।

২২ জুন ২০২২, ০৪:১৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।