• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘মাস্টার শেফ’ জয়ী অন্ধ রাঁধুনী ক্রিস্টিনের গল্প

‘মাস্টার শেফ’ জয়ী অন্ধ রাঁধুনী ক্রিস্টিনের গল্প

ছবি- সংগৃহিত

ফিচার ডেস্ক

রান্না একটি দারুণ শিল্প। রান্নার মধ্যদিয়ে মানুষের রুচিবোধের প্রকাশ ঘটে। সভ্যতা ও সংস্কারের সঙ্গেও রান্নার কৌশলে তারতম্য আমরা দেখতে পাই। বিশ্বে বর্তমানে রাঁধুনি বা রন্ধন শিল্পকে ভিন্ন মর্যাদা দেয়া হচ্ছে। কেউ কেউ সখের বশে হয়ে উঠছেন রাঁধুনি। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের বিখ্যাত সব রাঁধুনির অধিকাংশই পুরুষ। নারীর সংখ্যাও কম নয়।

তবে আমাদের আজকের গল্প ভিন্ন কাউকে নিয়ে। আমরা এমন এক রাঁধুনির গল্প জানতে চলেছি, যিনি ২০১২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ‘দ্য মাস্টার শেফ’ অ্যাওয়ার্ড জয় করেছেন। আর তার নাম হলো ক্রিস্টিন। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে তিনি বসবাস করেন। জেনে অবাক হবেন যে, ক্রিস্টিন প্রকৃতপক্ষে একজন অন্ধ। তার দুই চোখে কোনো জ্যোতি নেই।

যেভাবে রান্না করেন ক্রিস্টিন

এটা ভাবতেই অবাক লাগে যে, চোখে না দেখেও রান্না করা যায়। এটি হয়ত অসম্ভব। কিন্তু সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন ক্রিস্টিন। চোখে না দেখেও তিনি অসংখ্য বাহারি সুস্বাদু পদ রান্না করেন নিমিষেই। আর এই কাজে তিনি তার ৪টি ইন্দ্রিয় ব্যবহার করেন। নাক, হাত, কান ও জিহ্বা দিয়ে তিনি রান্নার যাবতীয় কিছু তদারকি করেন।

রান্না চলাকালীন রান্নার পাত্র থেকে যে শব্দ হয়, সেই শব্দকে নিবিড় ভাবে আয়ত্তে এনেছেন ক্রিস্টিন। রান্নার হাড়ির থেকে আসা শব্দ শুনেই তিনি রান্নার অবস্থা বুঝতে পারেন।

রান্নার সময় খাবারের ঘ্রাণ অনেকেই বুঝতে পারেন না। কেউ কেউ মুখে নিয়ে চেখে দেখেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ক্রিস্টিন ব্যতিক্রম। তিনি খাবারের ঘ্রাণ নাকে শুকেই বুঝতে পারেন, খাবার কেমন হতে চলেছে।

ক্রিস্টিনের রান্না ঘর

টলমলে চোখ থাকলেও তাতে আলো নেই। আর তাই তো অন্ধ ক্রিস্টিন। এ নিয়ে তার আক্ষেপ নেই। রান্না ঘরে একদম ফিট ক্রিস্টিন। তিনি রান্নার সময় কারো সাহায্যও নেন না। তার রান্না ঘরটি এমন ভাবে তৈরি করা, যা ক্রিস্টিনের নখদর্পণে।

রান্না ঘরে থাকা ছুরি, কাঁচি, চামচ সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস নির্দ্রিষ্ট স্থানে রাখা থাকে। যার ফলে ক্রিস্টিন খুব সহজেই সেগুলো খুঁজে নিতে পারেন। তরকারি, পেঁয়াজ-রসুন কাটাকাটির সময় ধারালো ছুরি ব্যবহার করলেও আজ পর্যন্ত অক্ষত রয়েছেন ক্রিস্টিন। তিনি তার রান্না ঘর এমন ভাবে সাজিয়েছেন, যা একজন স্বাভাবিক মানুষের কাছে অবাক করার মতোই।

কেন রান্না করেন ক্রিস্টিন

যখন থেকে ব্যতিক্রমী এই নারী বুঝতে পারেন যে, তিনি চোখে দেখতে পারেন না। তখন থেকেই তিনি এমন কিছু করার চেষ্টা করেন, যেন মানুষ তাকে মনে রাখে। আর এই ভাবনা থেকেই রান্না করা বা রাঁধুনি হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ শুরু করেন ক্রিস্টিন। যদিও তার এই যাত্রা ছিল অত্যন্ত কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং।

তারপরও শত কঠিন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে দিন শেষে ক্রিস্টিন এখন এক সফল রাঁধুনি। ২০১২ সালে ‘দ্য মাস্টার শেফ’ অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর থেকে তার জীবনও বদলে গিয়েছে। তিনি এখন টেক্সাসে দুটো রেস্টুরেন্টের মালিক। আর রেস্টুরেন্টের খাবারগুলো তিনি নিজেই প্রস্তুত করেন।

৩০ মার্চ ২০২৪, ০৪:০৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।