• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

খরগোশের মাংস স্বাদে-গুণে অনন্য

খরগোশের মাংস স্বাদে-গুণে অনন্য

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

শরীরের শক্তি ধরে রাখার জন্য আমিষের গুরুত্ব অনেক। আর এই আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস মাংস। আমাদের দেশে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়াসহ নানা প্রজাতির গৃহপালিত পশুর মাংস খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এছাড়া হাঁস, মুরগিসহ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পালিত নানা প্রজাতির পাখির মাংস বেশ জনপ্রিয়। তবে খরগোশের মাংস খাওয়ার ব্যাপারে প্রায় অধিকাংশ মানুষেরই একটা প্রবল আগ্রহ কাজ করে। এখন খরগোশ খামারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পালন করা হচ্ছে। দাম চড়া হলেও ভোজনরসিক মানুষেরা খরগোশের মাংস কিনে থাকেন।

তবে আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা, খরগোশের মাংস উপকারি হলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। ‘আমরাই বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে খরগোশের মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।

খরগোশের মাংসের পুষ্টি উপাদান

এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। পুষ্টিবিদরা বলছেন, প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অধিকাংশই রয়েছে খরগোশের মাংসে।

প্রতি ১০০ গ্রাম খরগোশের মাংসে রয়েছে

ম্যাগনেসিয়াম ২৫ মিলিগ্রাম
আয়রন ৩.৩ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ৩৩৪ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ৫৭ মিলিগ্রাম
ফরফরাস ১৯০ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ২০ মিলিগ্রাম
প্রোটিন ২১ গ্রাম
চর্বি ১১ গ্রাম
ভিটামিন পিপি ১১.৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ০.৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি ০.৪৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি১২ ৪.৩ এমসিজি এবং
ক্যালরি ১৮৩ কিলোক্যালরি।

উপকারিতা

পুরুষত্ব ঠিক রাখে : পুরুষের যৌন ক্ষমতা টেস্টোস্টেরন হরমনের ওপর নির্ভর করে। এই হরমন সঠিক মাত্রায় থাকলে পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এই টেস্টোস্টেরন হরমন বৃদ্ধিতে খরগোশের মাংস হতে পারে অত্যন্ত কার্যকরি একটি উপাদান।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায় : মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে যেসব খনিজ ও ভিটামিন প্রয়োজন, তা খরগোশের মাংসে রয়েছে। কাজেই নিয়মিত পরিমিত আকারে এই মাংস খেলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্রাকের কাজ উদ্দীপিত করে : খরগোশের মাংসে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়ামসহ নানা উপাদান, যা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাকের কাজ শক্তিশালী করে।

গর্ভবর্তী নারীর জন্য : গর্ভবতী নারীদের প্রোটিনের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি হজমক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে খরগোশের মাংস খুবই উপযোগি একটি খাদ্য উপাদান। কারণ মাংস খাওয়ার কারণে অনেক গর্ভবতী নারী হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন, কিন্তু খরগোশের মাংস খেলে হজমে সমস্যা হয় না।

শিশুদের আদর্শ প্রোটিনের উৎস : এই মাংস অত্যন্ত নরম ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। যে কারণে শিশুদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের অন্যতম সেরা উপায় হতে পারে খরগোশের মাংস।

হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় : এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন, যা হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় খুবই কার্যকরি।

অপকারিতা

অ্যালার্জি বাড়তে পারে : খরগোশের মাংস খেলে হাইপো অ্যালার্জি বেড়ে যেতে পারে। কাজেই এই মাংস খাওয়ার আগে সতর্ক হওয়া জরুরি।

বাত ব্যাথা বাড়তে পারে : এই মাংস খেলে সোরিয়াসিসের উপস্থিতিতে শরীরের জয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত নাইট্রোজেনাস যৌগ জমে যেতে পারে। ফলে বাত ব্যাথা বাড়তে পারে। এছাড়া হাইড্রোকায়নিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে তা বিষে পরিণত হওয়ারও ঝুঁকি থাকে।

খরগোশের মাংস হালাল নাকি হারাম

ইসলামী চিন্তাবিদরা এ ব্যাপারে বলেছেন, খরগোশের মাংস খাওয়া সম্পুর্ণ হালাল। ঘোড়া, খচ্চর ও গাধার মাংস খাওয়া মাকরূহ। কারণ ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

খরগোশের মাংস কীভাবে খাবেন

বাংলাদেশের বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোঁরায় খরগোশের মাংস পাওয়া যায়। অনেকে বাসা-বাড়িতেও এই মাংস রান্না করা হয়। আপনি চাইলে দেশীয় প্রচলিত নিয়মেই খরগোশের মাংস খেতে পারেন। তবে অনেকেই বারবিকিউ বা কাবাব হিসেবে খরগোশের মাংস খেতে পছন্দ করেন।

পরামর্শ

খরগোশ আমাদের প্রকৃতির অন্যতম নিরীহ একটি প্রাণী। এটি এখন বিলুপ্ত প্রায়। কাজেই খামারে পালিত ছাড়া খোলা জায়গা থেকে খরগোশ শিকার করবেন না। খরগোশের মাংসে ভিটামিন ও রাসায়নিক উপাদান প্রচুর রয়েছে, কাজেই পরিমিত মাংস খাবেন। যারা জটিল রোগে আক্রান্ত তারা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খরগোশের মাংস খেতে পারেন।

 

এবি/এসএন

০৬ আগস্ট ২০২১, ০৫:৪৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।