• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘অলৌকিক’ গুণে ভরা সজিনা পাতা

‘অলৌকিক’ গুণে ভরা সজিনা পাতা

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

সজিনা ডাটা আমাদের দেশে জনপ্রিয় একটি সবজি। সজিনা ডাটার মৌসুম এপ্রিল-মে মাসে শেষ হলেও জুন মাসেও এটি বাজারে পাওয়া যায়। গুণেমাণে অনন্য সজিনা ডাটার পুষ্টিগুণের কথা আমাদের সবারই কমবেশি জানা। কিন্তু সজিনা পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি? গ্রামাঞ্চলে এখনও সজিনা পাতা খাওয়ার প্রচলন আছে। অনেকেই ছোটখাটো অসুখ সারাতে সজিনা পাতা ব্যবহার করেন।

ভেষজগুণে ভরপুর সজিনা পাতা নিয়ে আমাদের এবারের পর্ব। ‘আমরাই বাংলাদেশ’র প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নিই সজিনা পাতার গুণাগুণ-

পরিচয়

সজিনার বৈজ্ঞানিক নাম Moringa oleifera (মরিঙ্গা ওলেইফেরা)। এটি Moringaceae পরিবারের Moringa জাতীয় বৃক্ষ। সজিনার কাঁচা লম্বা ফল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এর পাতা খাওয়া হয় শাক হিসেবে। সজিনা পাতাও পুষ্টিগুণে ভরা। খরা সহিষ্ণু ও গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে এটি বেশি জন্মে।

সজিনা গাছের পাতাকে বলা হয় ‘অলৌকিক পাতা’। গবেষকরা বলছেন, সজিনা পাতা নিউট্রিশন্স সুপার ফুড।

সজিনা পাতার উপকারিতা

সাধারণ একটি কমলার চেয়ে পুষ্টিগুণে সাতগুণ এগিয়ে সজিনা পাতা। ক্যালসিয়ামের দিক থেকে এটি দুধের চেয়ে চারগুণ এগিয়ে। দুধের চেয়ে সজিনা পাতায় প্রোটিনও বেশি থাকে। এমনকি গাজরের চেয়েও সজিনা পাতায় ভিটামিন এ বেশি থাকে। এতে কলার চেয়ে তিনগুণ বেশি পটাশিয়াম রয়েছে।

অ্যানেমিয়া দূর করে : সজিনা পাতায় প্রচুর জিঙ্ক ও আয়রন রয়েছে, যা অ্যানেমিয়া দূল করে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে : শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সজিনা পাতা অত্যন্ত কার্যকরি একটি ভেষজ উপাদান।

পরিপাকে সহায়তা করে : সজিনা পাতায় রয়েছে ২০ শতাংশ প্রোটিন, যা মেটাবলিজম ও শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলি পরিপূর্ণরূপে সম্পাদনে সহায়তা করে। মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় এমাইনো এসিডের ৯টি সজিনা পাতায় বিদ্যমান।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ : সজিনা পাতায় থাকা খনিজ ও ভেষজ উপাদান শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : সজিনা পাতা শরীরের ডিফেন্স ম্যাকানিজম শক্তিশালী করে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে এইডস আক্রান্ত রোগীদের জন্য সজিনা পাতা খুবই উপকারি একটি ভেষজ উপাদান।

হজমশক্তি বৃদ্ধি ও ওজন কমাতে সহায়তা করে : সজিনা পাতা আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এতে থাকা আঁশ মল নরম করে ও হজমশক্তি বাড়ায়। আর হজমশক্তি বৃদ্ধি পেলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে পারে না। ফলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমতে শুরু করে।

বুকের দুধ বৃদ্ধি ও শিশুর বিকাশে সহায়তা : প্রসুতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সজিনা পাতা খুবই কার্যকরি একটি উপাদান। সজিনা পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিয়মিত এক চা চামচ পানিতে মিশিয়ে খেলে প্রসূতি নারীর দুধ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া সজিনা পাতায় থাকা প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও আয়রন শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে সহায়তা করে। বুকের দুধ খাওয়ানোকালীন প্রসূতি মা দিনে ৬ টেবিল চামচ পর্যন্ত সজিনা পাতার গুঁড়া খেতে পারবেন।

যকৃত ও কিডনীর সুরক্ষায় : সজিনা পাতায় এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে, যা যকৃত ও কিডনী সুস্থ রাখতে কার্যকরি।

বার্ধক্যজনিত রোগ ও ক্যান্সার নিরাময় : সজিনা পাতায় ৩৬ রকমের অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান বা বৈশিষ্ট রয়েছে। এসব উপাদান বার্ধক্যজনিক রোগ নিরাময় ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : খাবার লবনে রয়েছে সোডিয়াম ক্লোরাইড, যা রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। কিন্তু সজিনা পাতায় রয়েছে পটাসিয়াম ক্লোরাইড, যা লবনের ঘাটতি পূরণ করলেও রক্তচাপ বৃদ্ধি করে না। কাজেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সজিনা পাতা বেশ কার্যকরি।

বসন্ত রোগ নিরাময় : বসন্ত বা পক্স রোগ নিরাময়ে সজিনা ডাঁটা বেশ কার্যকরি। এছাড়া সজিনা ফুল ভাজি করে খেলেও গুটি বসন্ত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

পরামর্শ : সজিনা পাতায় থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান কিডনী সুস্থ রাখে। তবে কিডনী রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সজিনা পাতা খাওয়া উচিত। এছাড়া প্রসূতি মা বা গর্ভধারণ পরবর্তী সময়ে দুগ্ধপানকালীন সজিনা পাতা খাওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

এবি/এসএন

০৪ আগস্ট ২০২১, ০৪:১৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।