• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ওষুধিগুণে ভরা বেল পুষ্টিতেও সেরা

ওষুধিগুণে ভরা বেল পুষ্টিতেও সেরা

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

‘গাছে বেল পাকিলে তাতে কাকের কি’। এটি একটি গানের লাইন। আসলেই তো বেল পাকলে কাকের কোনো লাভ নেই। তবে মানুষের জন্য পাকা বেল যেন আশির্বাদ। গরমে প্রশান্তি পেতে এক গ্লাস ঠাণ্ডা বেলের শরবত সবার প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। গ্রামাঞ্চলে আধাপাকা বেল পুড়িয়ে খাওয়ার প্রচলনও রয়েছে। বেল শুধু ফল হিসেবেই পুষ্টিগুণে ভরপুর নয়, বেলের পাতাও ভেষজগুণে ভরপুর।

‘আমরাই বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য আমাদের এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে বেল ফলের পুষ্টিগুণ নিয়ে। চলুন এক নজরে দেখে নিই বেলের পুষ্টিগুণ ও অজানা কিছু তথ্য-

পরিচয়
বেল একটি পুষ্টিকর ও উপকারি ফল। কাঁচা পাকা দুই অবস্থাতেই বেল সমান উপকারি। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও আমাশয় রোগ নিরাময়ে কাঁচা বেল খুব কার্যকরি। এছাড়া পাকা বেলের শরবত কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়সহ নানা রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরি। পাকা বেলের শরবত পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। বেলের বৈজ্ঞানিক নাম- Aegle marmelos Correa।

যেসব উপাদানে ভরপুর বেল

বেলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ, ভিটামিন সি। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান।

এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম বেলে রয়েছে খাদ্য শক্তি- ৮৭ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৭৭.৫ গ্রাম, শর্করা ১৮.৮ গ্রাম, আমিষ ২.৬ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৮ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.২ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন সি ৯ মিলিগ্রাম।

বেলের উপকারিতা

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : আবহমান কাল থেকে দেশের গ্রামগঞ্জে একটি প্রবাদ চালু আছে। তাহলো-‘পেট পরিষ্কার করতে চাও, নিয়মিত বেল খাও’। গবেষকরা বলছেন, বেল খেলে মল নরম হয়। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। নিয়মিত বেলের শরবত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে উপশম পাওয়া যায়।

ডায়েরিয়া কমায় : ডায়রিয়ার জন্য কাঁচা বেল সবচেয়ে সফল একটি ভেষজ উপাদান। ডায়রিয়া দ্রুত বিদায় দিতে হলে কাঁচা বেল টুকরো করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিন। শুকনো বেল গুঁড়ো করে এক চা-চামচ লাল চিনি ও গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে পান করুন। ডায়রিয়া দূর হবে।

পেপটিক আলসার থেকে মুক্তি : দীর্ঘদিন ধরে আলসারে ভুগতে থাকা মানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েও অনেকেই মুক্তি পাননি। তাদের জন্য বেল হতে পারে কার্যকরি একটি ভেষজ টোটকা। নিয়মিত বেলের শরবত পান করলে আলসার দূর হয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে : পাকা বেলে মেথানল রয়েছে, যা শরীরের ব্লাড সুগার কমাতে খুব কার্যকরি। গবেষণায় দেখা গেছে, মেথানল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আর এই মেথানল রয়েছে বেলে।

যক্ষ্মা নিরাময় : ‘যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই’ এই প্রবাদটি এখন মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি এখন কার্যকরি ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। তবে আপনি যদি ভেষজ উপায়ে যক্ষ্মা নিরাময় করতে চান, তাহলে টানা চল্লিশ দিন লাল চিনি ও মধুর সঙ্গে বেল মিশিয়ে শরবত পান করুন। ভালো ফল পাবেন।

জয়েন্টের ব্যাথা দূর করে : বয়স ও ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেকের শরীরের জয়েন্টে ব্যাথা বেড়ে যায়। এই সমস্যা দূর করতে চাইলে বেল খাওয়া জরুরি। কারণ, বেলে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা জয়েন্টের ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয়।

স্কার্ভি কমায় : স্কার্ভি মূলত দাঁতের একটি সমস্যা। ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়। এই রোগ নিরাময়ে বেল অত্যন্ত কার্যকরি। কারণ বেলে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : ক্যান্সার এখন খুব পরিচিত একটি রোগ। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ কান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, নিয়মিত বেল শরবত পান করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। কারণ, বেলে রয়েছে প্রলেফিরেটিভ ও অ্যান্টি মুটাজেন উপাদান। যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

বয়সের দাগ দূর করে : অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ফেনোলিক কম্পাউন্ডে ভরপুর বেল। এই দুটি উপাদান মানব দেহের কোষ তৈরিতে খুব কার্যকরি। আর আমাদের দেহের কোষ উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলে বয়সের দাগ দূর হয় এবং বার্ধক্য কমে আসে।

রক্ত শুদ্ধ করে বেল : রক্ত শুদ্ধ বা পরিষ্কার করতে বেলের জুড়ি মেলা ভার। বেলের পুষ্টিগুণ রক্তের ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়। ফলে রক্ত চলাচল ও স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

শক্তি বৃদ্ধি করে : কর্মব্যস্ত মানুষ একটা সময় দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই আপনি যদি দ্রুত শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে বেলের শরবত পান করতে পারেন। কারণ প্রতি ১০০ গ্রাম বেলে রয়েছে ৮৭ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি।

লিভার সুস্থ রাখে : লিভার ভালোর রাখার জন্য সবচেয়ে কার্যকরি উপাদান হলো বিটা ক্যারোটিন। আর এই উপাদানটি বেলে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। এছাড়া বেলে রয়েছে থিয়ামিন ও রাইবোফ্লেভিন। এই দুটি উপাদানও লিভারের শক্তি বৃদ্ধি করে।

আমাশয় ও পেটের সমস্যা দূর করে : আমাশয় যন্ত্রণাদায়ক একটি রোগ। আমাশয়ের কারণে পেটে ব্যাথা, টক বমি, গ্যাস্ট্রিক বেড়ে যাওয়া, ক্ষুধামন্দাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। আমাশয় ও পেটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে হলে কচি বেল টুকরো করে কেটে সারা রাত বিশুদ্ধ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ওই পানি ছেঁকে নিয়ে পান করুন। আমাশয় দূর হবে।

পরামর্শ : ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে আক্রান্তদের জন্য বেল খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তবে পরিমিত বেলের শরবত খাওয়া যেতে পারে। তবুও বেল ও বেলের শরবত খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। কারণ বেলে রয়েছে সুগার, যা ডায়াবেটিস বাড়িয়ে দিতে পারে।

 

এবি/এসএন

০১ আগস্ট ২০২১, ০৮:১৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।