• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

কেমন হবে ছোট্ট সোনামনিদের খাবার

কেমন হবে ছোট্ট সোনামনিদের খাবার

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

আদরের শিশু সন্তানের খাবার নিয়ে মা-বাবার চিন্তার অন্ত নেই। বাড়ন্ত শিশুদের বয়স উপযোগী পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের দেশে নানা রকম অভ্যাস প্রচলিত রয়েছে। তবে শিশুর সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের মায়ের দুধের পাশাপাশি কখন ও কীভাবে সম্পূরক খাবার দিতে হয় সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পান না। অথচ শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশের সময় পুষ্টিহীনতা এড়াতে এটা খুবই জরুরি।

প্রিয় পাঠক, আজকের এই পর্বে আমরা ৬ মাস থেকে দুই বছর বয়সী শিশুর খাদ্য কেমন হবে তা নিয়ে কিছু পরামর্শ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এজন্য আমরা ইউনিসেফের শিশু খাদ্য বিষয়ক নীতিমালা, বিবিসির প্রতিবেদন ও পুষ্টিবিদদের একাধিক নিবন্ধের ওপর জোর দিয়েছি। সেই আলোকে শিশুর খাবার কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে কিছু পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা তুলে ধরেছি। চলুন দেখে নেয়া যাক-

শিশু খাদ্য কি?

ইউনিসেফের শিশুখাদ্য নীতিমালা অনুযায়ী, পুষ্টি উপাদান নিশ্চিত করা এবং শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিশুকে যেসব খাবার দেয়া উচিত, সেগুলোই শিশুখাদ্য। তবে শিশুর জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত অবশ্যই মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। মায়ের বুকের দুধের বিকল্প কোনো খাদ্য নেই।

পাশাপাশি শিশুর বয়স ছয় মাস পূর্ণ হলে তাকে সাধারণ শাকসবজি ও ডিমের মতো পারিবারিক খাবার চটকে বা খিচুড়ির মতো নরম করে খাওয়াতে পারেন। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে অন্যান্য পারিবারিক খাবারের পাশাপাশি মায়ের দুধ খাইয়ে যেতে হবে। বারবার মনে রাখতে হবে, দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধই শিশুর প্রধান খাবার।

মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি যখন অন্যান্য সবজি, ডিম, মাছ-মাংস, কলিজ¦া ও বাদাম জাতীয় খাবার দেবেন, তখনই কেবল তা পরিপূরক খাবার হিসেবে গণ্য হবে।

ইউনিসেফের গবেষণা বলছে, ছয় মাস থেকে ২৪ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয় এবং এমন একটি সময়ের মধ্যে শিশুর ভিত্তিগত শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। প্রারম্ভিক এই পর্যায়ে পুষ্টির ঘাটতি শিশুর জন্য অপূরনীয় এক ক্ষতি।

ফর্মুলা দুধ কখন দেবেন

গবেষণাসূত্রে ইউনিসেফের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি মায়েরা প্রায়ই সন্তানের জন্য ফর্মুলা খাবার পছন্দ করেন। অধিকাংশ মা-ই স্বামীকে মাছ-মাংস কেনার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়েও সমস্যার মুখোমুখি হন। কোনো কোনো কমিউনিটিতে শিশুকে মাছ ও মাংস খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কুসংস্কারও রয়েছে। আবার কখনও কখনও বাড়িতে এসব খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলেও তা ছোট শিশুদের খেতে দেয়া হয় না।

বাজারে নানা ব্র্যান্ডের ফর্মুলা দুধ পাওয়া যায়। দেখেশুনে কিনতে পারলে ভালো মানের ফর্মুলা দুধ বা প্যাকেটজাত শিশুখাদ্য পাওয়া যায়। এই দুধ সাবু বা সুজির সঙ্গে মিশিয়ে ৭ মাসের বেশি বয়সের শিশুকে পরিমাণ মতো খাওয়ানো যেতে পারে। তবে সেক্ষেতে বাচ্চার ওজন ও গঠন নির্ণয় করা জরুরি। তাই, ফর্মুলা দুধ খাওয়ানোর আগে শিশুখাদ্য বিশেষজ্ঞ বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন।

বিভিন্ন বয়সে শিশুর খাদ্য যেমন হবে

জন্ম থেকে পাঁচ মাস : জন্মের পরপরই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে মায়ের দুধ দিতে হবে। শিশু যতবার কাঁদবে, ততবার তাকে মায়ের দুধ খেতে দিতে হবে। দুধ দেয়ার আগে ভালো করে স্তনের বোঁটা পরিষ্কার করে শিশুর মুখে দিতে হবে। বুকে পর্যাপ্ত দুধ না এলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ‘মেটোক্লোপ্রামাইড’ সেবন করলে বুকে দুধ বাড়বে। তাতেও কাজ না হলে কিংবা কোনো কারণে শিশুকে বুকের দুধ দেওয়া সম্ভব না হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নিতে হবে।

চার মাস বয়সের শিশু: চার মাস বয়সের পর থেকে শিশু কিছুটা শক্ত খাবার হজম ক্ষমতা অর্জন করে। তখন বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নেবেন।

ছয় মাস থেকে দুই বছর: শিশুকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াবেন। সাধারণত সকাল ৬টায়, সকাল ১০টায়, দুপুর ২টায়, সন্ধ্যা ৬টায় ও রাত ৯টা বা ১০টায় খাওয়াবেন। প্রতিবারে শিশু পাঁচ থেকে আট আউন্স খাবে। সকাল ৬টায় দুধ। সুজি বা চালের গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে ঘন করে রান্না করা দুধ। সকাল ১০টায়, ডিম, হালুয়া, খিচুড়ি, পায়েস, ফলের রস ইত্যাদি। দুপুর ২টায় ভাত, মাছ, গোশত, শাকসবজি, ফলমূল। শিশু খাবার শেষে দুধ খেতে চাইলে দুধ। সন্ধ্যা ৬টায় সকাল ১০টার মতো। রাত ৯-১০টায় সকাল ৬টার মতো।

শিশু খাবে যেসব শাকসবজি

গাজর, আলু, টমেটো, শিম, বরবটি, লাউ, বেগুন, কাঁকরোল, ঝিঙে, পটোল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালংশাক, লেটুস, লালশাক, কুমড়ো শাক, লাউশাক শিশুকে খাওয়াতে পারেন। সেদ্ধ চালের সঙ্গে যেকোনো এক প্রকারে ডাল ও এক প্রকারের সবজি মিশিয়ে নরম খিচুরি তৈরি করুন। এটি শিশুর জন্য খুবই উপকারি। এছাড়া আপনার শিশুকে কমলা, পেঁপে, পেয়ারা, আপেল, আঙুর, কলা খাওয়াতে পারেন।

দুই বছর থেকে পাঁচ বছর: দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুরা বড়দের সব খাবার খেতে পারবে। তাকে দিনে চার-পাঁচবার খাওয়াতে হবে। এ সময় খাদ্যে ক্যালরির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সকাল ৭টায় ডিম, রুটি, ভাজি, হালুয়া, খিচুড়ি বা ডাল-রুটি এবং শেষে দুধ ও ফলমূল খাওয়াতে পারেন। দুপুর ১২টায় ভাত, মাছ, গোশত, ডাল, শাকসবজি রাখুন। শিশু দুধ খেতে চাইলে তাকে দুধ খাওয়ান।

আপনার শিশুকে দিনে পাঁচবার খাওয়াতে চাইলে সকাল ৭টায় নাস্তা দেয়ার পর সকাল ১০টায় আবার নাস্তা দেবেন। তারপর দুপুরের খাবার দেবেন ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে।

যা করা জরুরি

⇒ যেকোনো বয়সের শিশুকে খাওয়ানোর আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে।

⇒ বুকের দুধ খাওয়ানো ও তা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা মেনে চলুন।

⇒ সামাজিক ও পারিবারিক চাপের কারণে শিশুর খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও জবরদোস্তি আনবেন না।

⇒ সন্তানের খাবারের পাশাপাশি মায়ের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিন। বুকের দুধ খাওয়ান এমন মায়েদের বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার দিন। এতে সন্তান বেশি পুষ্টি পাবে।

⇒ সরকারি নির্দেশনা মেনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনার শিশুর সকল টিকা সম্পন্ন করুন।

⇒ মা ও শিশুর জন্য একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করুন। কারণ সুষ্ঠু পরিবেশ শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।

 

তথ্যসূত্র: ইউনিসেফ, বিবিসি ও হেলথ লাইন।

২৫ জুলাই ২০২২, ০৬:২৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।