• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

রহস্যময় পুরুষ ইলিশের গল্প!

রহস্যময় পুরুষ ইলিশের গল্প!

প্রতিকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইলিশের বিচরণ কেবল মেঘনার অববাহিকাতেই সীমাবদ্ধ নয়। সাগর থেকে তারা মিয়ানমারের ইরাবতী নদী এবং পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথী-হুগলী নদীতে প্রবেশ করে। তা ছাড়া ইলিশের উপস্থিতি রয়েছে আরও সুদূরে। পূর্বের মেকং বদ্বীপ থেকে শুরু করে পশ্চিমের পারস্য উপসাগরেও দেখা মেলে তাদের।

আপনি যখন নিজ শহরের স্থানীয় বাজার থেকে একটি ইলিশ কিনবেন, সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল যে সেই মাছটি হবে নারী ইলিশ, যার পেটভর্তি ডিম। ইলিশের মৌসুমে আক্ষরিক অর্থেই দেশের কোণে কোণে প্রতিটি বাজার উপচে পড়ে নারী ইলিশে। অথচ পুরুষ ইলিশ যেন অমাবস্যার চাঁদের মতোই দুর্লভ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অক্টোবর মাসে যখন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম চলে, তখন প্রায় সমপরিমাণ নারী ও পুরুষ ইলিশই নদীর উজান পেরিয়ে আসে মিঠাপানিতে। তাহলে এই পুরুষ ইলিশরা সব যায় কই? কীভাবে তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে স্রেফ উধাও হয়ে যায়?

মধ্য-সেপ্টেম্বরে আমি যখন চাঁদপুরে দেশের সর্ববৃহৎ ইলিশের পাইকারি বাজারে হাজির হলাম, আমি এ ব্যাপারটা দেখে খুবই অবাক হলাম যে মাটিতে সারি বেঁধে থাকা সকল ইলিশই নারী ইলিশ।

মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা ওয়ার্ল্ডফিশ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার ইলিশ বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল ওয়াহাব বলেন, 'ইকোফিশ প্রকল্প থেকে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রজনন মৌসুমে একটি ইলিশের ঝাঁকে নারী পুরুষের অনুপাত থাকে ৫৫:৪৫।'

তাহলে আমরা চারদিকে কেবল নারী ইলিশই দেখি কেন? কয়েক বছর আগে একই প্রশ্ন তাড়া করে বেড়ায় আব্দুল কাইয়ুম নামের আরেক সাংবাদিক ও পপুলার সায়েন্সের লেখককেও। তিনি চেষ্টা করেন রহস্যভেদের।

কাইয়ুম বলেন, 'বেশ কয়েকজন জেলে ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে আমি জানতে পারি, পুরুষ ইলিশ আসলে আমরা যতটা ভাবি ততটা বিরল নয়। জেলেরা তাদের জালে পুরুষ মাছও ধরে, কিন্তু কোন মাছটি পুরুষ আর কোনটি নারী, তা তারা আলাদা করতে পারে না, কেননা পুরুষ ইলিশের কোনো জননাঙ্গ নেই।'

ড. ওয়াহাব বলেন, 'নারী ইলিশরা যেভাবে পানিতে তাদের ডিম ছাড়ে, পুরুষ ইলিশরা পানিতে ঠিক সেভাবেই ছাড়ে তাদের বীর্য। আর এই দুটি জিনিস প্রায় একই রকম দেখতে। শুধু এটুকুই ব্যতিক্রম যে, পুরুষ ইলিশদের ভেতরে ডিম থাকে না, কিন্তু সে কথা ডিম ছাড়া নারী ইলিশদের বেলায়ও প্রযোজ্য।'

ইকোফিশের চাঁদপুরভিত্তিক গবেষণা সহযোগী কিঙ্কর সাহা বলেন, 'বেশ কয়েক বছর আগে একটি গবেষণার কাজে আমি ছিলাম চর ভৈরবের একটি মাছধরা নৌকায়। পানি থেকে জাল গোটানোর পর জেলেরা সবাই খুব মর্মাহত হয়ে পড়েন। জালে আটকা পড়া মাছগুলো ছিল আকারে ছোট এবং এরা দেখতেও ছিল তুলনামূলকভাবে দুর্বল, ক্ষীণকায় ও অনাকর্ষণীয়। একটু ভালোভাবে খেয়াল করতেই আমি বুঝলাম, সেখানকার প্রায় ৬২ শতাংশ মাছই ছিল পুরুষ। এটি ছিল প্রধানত একটি পুরুষ ইলিশের ঝাঁক, যা বেশ বিরল একটি ব্যাপার, কেননা একটি মাছের ঝাঁকে সাধারণত ৪০-৪৫ শতাংশ ইলিশ পুরুষ হয়ে থাকে।'

চাঁদপুরের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড. আনিসুর রহমান বলেন, 'নারী ইলিশের মাঝে যে দীপ্তি দেখা যায়, পুরুষ ইলিশের ভেতর তা অনুপস্থিত। তারা দেখতে কদাকার না হলেও কিছুটা অনাকর্ষণীয় তো বটেই।'

ইলিশের বিচরণ কেবল মেঘনার অববাহিকাতেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা মিয়ানমারের ইরাবতী নদী এবং পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথী-হুগলী নদীতে প্রবেশ করে। তা ছাড়া ইলিশের উপস্থিতি রয়েছে আরও সুদূরে। পূর্বের মেকং বদ্বীপ থেকে শুরু করে পশ্চিমের পারস্য উপসাগরেও দেখা মেলে তাদের। এমনকি ইউফ্রেটিস নদীতেও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে ইলিশকে।

'কিন্তু মেঘনার মোহনায় যে পরিমাণ ইলিশ দেখা যায়, আর কোথাও এই মাছকে এত বেশি দেখা যায় না,' বলেন ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ প্রকল্পের প্রধান ড. ওয়াহাব।

 

এবি/এসএন

০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৩:২৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।