• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘মহানন্দার তীরে কাঞ্চনজঙ্ঘার চিকচিকে হাতছানি’

‘মহানন্দার তীরে কাঞ্চনজঙ্ঘার চিকচিকে হাতছানি’

ছবি- সংগৃহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

কার্তিকের শেষ দিকে শীতের হালকা আমেজ। সকাল-সন্ধ্যায় মৃদু কুয়াশা। ভোরের চিকচিকে আলোয় দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। সফেদ বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রতি ভ্রমণপিপাসুদের টান পুরনো। তবে কাঙ্খিত কাঞ্চনজঙ্ঘা ছুঁয়ে দেখতে হলে পাড়ি দিতে হবে সীমান্ত। সে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা। কিন্তু তাই বলে তো আর প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার স্বাধ অধরা থাকতে পারে না। ঠিক তাই, দূর থেকে হলেও বাংলাদেশে পা রেখেই দেখে নিতে পারেন ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় গেলে এখন খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে নয়নাভিরাম ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’। স্থানীয় জনসাধারণের ভাষ্যে, এ বছর ১১ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলে। এরপর আকাশ মেঘলা হয়ে যাওয়ায় এটি মেঘের আড়ালে হারিয়ে যায়। কিন্তু গত ৯ নভেম্বর আবারও পঞ্চগড় থেকে দেখা গেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা।

জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের পঞ্চগড় জেলায় উঁকি দিয়েছে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এখন খালি চোখেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এই শুভ্র পর্বত। কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখতে এরই মধ্যে পঞ্চগড়ে ভিড় করেছেন পর্যটকেরা। ভারতের সিকিম ও নেপালের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন সৌন্দর্য্যের রানী।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া কেন্দ্রের অফিসার ইন-চার্জ রাসেল শাহ বলেন, সম্প্রতি বাতাসে ধুলাবালি কম থাকায় এবং আকাশ পরিষ্কার ও মেঘমুক্ত থাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘা সীমান্ত এলাকা থেকে খালি চোখে দেখা যাচ্ছে।

এদিকে পঞ্চগড়ের আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘার উঁকি দেওয়ার খবর এবং এর অনিন্দ্য সুন্দর সব ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধা সীমান্তে ছুটছেন ভ্রমণপিপাসুরা। শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য্য অবলোকন করা থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখতে রাজি নন কেউই। এমনকি জেলার সরকারি-বেসরকারি রেস্ট হাউজগুলো আগাম বুকিং দিয়ে রাখছেন অনেকে।

কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য্য দেখতে পঞ্চগড়ে আসা দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনিম ইবনাত ও আফিয়া মোবাশশিরা বলেন, ‘সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় যে আলোর খেলা চলে, সেই সৌন্দর্য্যে সবাই মুগ্ধ হতে বাধ্য। এটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ আপনাকে নিজে এসে দেখতে হবে।’

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি বিষয়ক আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ বলেন, ‘যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে, তাহলে পঞ্চগড় জেলার সব জায়গা থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা সম্ভব। কিন্তু তেঁতুলিয়া ডাক বাংলোর কাছে মহানন্দা নদীর তীর এবং শালবাহন ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা সবচেয়ে সুন্দরভাবে দেখা যায়।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান ও নাহিরুল ইসলাম জানান, পর্যটকদের ভিড় বেড়ে যাওয়ার সুবাদে এখানে ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো চাঙা হয়ে উঠেছে। বহু মানুষ এখন এই মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন যেন পর্যটকদের আগমনের সুবাদে তারা কিছু বাড়তি উপার্জন করতে পারেন। তাছাড়া সরকার ইতোমধ্যেই বড় সংখ্যক পর্যটকের থাকা-খাওয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছে।

তেঁতুলিয়া ডাক বাংলোর তত্ত্বাবধায়ক শহীদুর রহমান জানান, তেঁতুলিয়ায় দুটি জেলা কাউন্সিল ডাক বাংলো রয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে পিকনিক কর্নার এবং বেরাং কমপ্লেক্সে আরও দুটি রেস্ট হাউজ আছে। পাশাপাশি তেঁতুলিয়ায় এখন অনেক বেসরকারি হোটেল-রেঁস্তোরা গড়ে উঠেছে। কাজেই পর্যটকদের থাকা-খাওয়া নিয়ে এখন আর কোনো বিড়ম্বনার সুযোগ নেই।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটকদের কাছে এই সময়ের মূল আকর্ষণ ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’। আমরা সবাইকেই এখানে আসতে উদ্বুদ্ধ করি, তবে তা অবশ্যই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে।’

 

এবি/এসএন

১৪ নভেম্বর ২০২১, ০৩:৩৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।