• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

জি আর ও সি আর মামলা কি এবং পার্থক্য

জি আর ও সি আর মামলা কি এবং পার্থক্য

প্রতিকী ছবি

সেন্ট্রাল ডেস্ক

ফৌজদারী আইনে মামলা সাধারণত দুইভাবে রুজু হয়ে থাকে। একটি জি আর মামলা অপরটি সি আর মামলা। সহজভাবে বলতে গেলে যে মামলা থানায় অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে করা হয় তাকে জি.আর (জেনারেল রেজিষ্ট্রার) মামলা বলে। পক্ষান্তরে, যে মামলা সরাসরি আদালতে গিয়ে করা হয় তাকে সি.আর (কমপ্লেইন্ট রেজিস্ট্রার) মামলা বলে।

জি আর এবং সি আর মামলা সম্পর্কে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এ্যাডভোকেট তাজ মোহাম্মদ বলেন, ‘জি আর মামলা আমলযোগ্য অপরাধের জন্য থানায় ফৌজদারী কার্যবিধি ১৫৪ ধারানুযায়ী দায়ের করা হয়। জি আর মামলার তদন্তকারী অফিসার ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৬ ধারা মোতাবেক তদন্ত সম্পন্ন করে যদি অভিযোগের সত্যতা না পান, তাহলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৯ ধারার বিধান অনুসারে ১৭৩ ধারায় কোর্টে রিপোর্ট পেশ করে। পক্ষান্তরে তদন্ত অফিসার যদি অপরাধের সত্যতা পান, তাহলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭০ ধারার বিধান অনুযায়ী ১৭৩ ধারায় কোর্টে রিপোর্ট পেশ করে। এছাড়া, পুলিশ রিপোর্টে কাউকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ থাকলেও ওই পর্যায়ে আসামীকে অব্যাহতি দেয়া যায় না। ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের উপর নির্ভর করে।’

সি আর মামলা বা নালিশী মামলা: পুলিশ বা থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নিলে বা নিতে না চাইলে আদালতে গিয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪(জ) ধারানুযায়ী নালিশী মামলা বা সি আর মামলা করা যায়। কোন ব্যক্তি আদালতে এসে কোন সুনির্দিষ্ট বিষয়ে নালিশ করে, তাহলে আদালত হলফনামা পাঠ করিয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ২০০ ধারার বিধান মতে জবানবন্দী গ্রহণ করেন এবং আমলি ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের নিকট উক্ত ঘটনা তদন্তের জন্য প্রেরণ করে।

জি আর এবং সি আর মামলার মধ্যে পার্থক্য : বাদি যখন এজাহারের মাধ্যমে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট মামলা রুজু করে তখন এ মামলাকে জি. আর মামলা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। জি আর মামলা থানায় দায়ের করতে হয়। আর সি. আর মামলা দায়ের করতে হয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। জি আর মামলা দায়ের করার সময় দায়েরকারীকে কোন শপথ বাক্য পাঠ করতে হয় না। অন্যদিকে, সি আর মামলা দায়ের করার সময় দায়েরকারীকে যা বলবে সত্য বলবে, কোন মিথ্যা বলবে না এই মর্মে শপথ বাক্য পাঠ করতে হয়।

ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘জি আর মামলা দায়েরের পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এজাহারের ভিত্তিতে ইমেডিয়েট তদন্ত করে কিংবা অভিযোগের প্রাইমা ফেসি (যা ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা) নির্ধারণ করে আদালতের কোন রকম গ্রেপ্তারী পরোয়ানা ছাড়াই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেন। অন্যদিকে, সি আর মামলা দায়েরের পর ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করতে পারেন বা তদন্ত করার জন্য তিনি নিজে বা অন্য কাউকে নির্দেশ দিতে পারেন। জি. আর মামলার ক্ষেত্রে তদন্তে আসামীর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ না পেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করতে পারেন। অন্যদিকে, নালিশের ক্ষেত্রে আসামীর বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ না পেলে আসামীকে অব্যাহতি বা খালাস প্রদান করা হয়। জি আর মামলা শুধু আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে দায়ের করা হয়। অন্যদিকে, সি আর মামলা আমলযোগ্য বা অ-আমলযোগ্য উভয় ক্ষেত্রে দায়ের করা যায়।’

এ্যাডভোকেট মোঃ আলমগীর হোসেন আরও বলেন, ‘মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে থানায় করা জি আর মামলার তারিখ কম সময়ের ব্যবধানে হয়। আর আদালতে দায়ের করা সি আর মামলার তারিখ একটু দীর্ঘ সময় পর পর হয়। ইদানিং সি আর মামলার হার অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।’

০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:৩২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।