• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
এশিয়া কাপ

হার্দিক নৈপুণ্যে ৫ উইকেটের জয় পেল ভারত

হার্দিক নৈপুণ্যে ৫ উইকেটের জয় পেল ভারত

স্পোর্টস প্রতিবেদক

এশিয়া কাপে পাকিস্তানের দেওয়া ১৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৫ উইকেটের জয় পেয়েছে ভারত। উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে শেষ ওভার পর্যন্ত চাপ সামলে জয় পায় রোহিতরা। ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন হার্দিক পান্ডিয়া (১৭ বলে ৩৩)। পান্ডিয়া বোলিংয়ে নেন ৩টি উইকেট।

পাকিস্তানের দেওয়া ছোটো লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছিল রোহিতের দল। পাকিস্তানি বোলারদের বোলিং নৈপুণ্যে সহজ লক্ষ্য তাড়া করা একেবারেই সহজ হয়নি। রোমাঞ্চ ছাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রতিশোধই নিল কোহলি-রোহিতরা।

এই মাঠেই গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে ভারতকে ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান। তারপর এই প্রথমবার মুখোমুখি হয়ে সেই ক্ষতে প্রলেপ দিল ভারত।

১৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভার থেকেই নাসিম-শাদাবদের তোপের মুখে পড়েন ভারতীয় খেলোয়াড়রা। রাহুলকে নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে মাঠে নামেন অধিনায়ক রোহিত। কিন্তু প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে নাসিম শাহের বলে বোল্ড আউটের শিকার হন রাহুল। সতেজ হয়ে উঠে নিরব পাকিস্তান গ্যালারি।

এরপর ক্রিজে আসেন শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা, ভারতীয় সাবেক বিরাট কোহলি। রোহিত-বিরাট জুটি দলকে চাপমুক্ত করার চেষ্টায় বুঝেশুনে ব্যাট চালাতে থাকেন। পাকিস্তানি বোলার নাসিম, শাদাব-দাহানিদের তোপ সামলে অর্ধশতকের দেখা পায় ভারতীয়রা।

৮ম ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকানো রোহিত ষষ্ট বলে মোহাম্মদ নাওয়াজের বলে ইফতেখারের তালুবন্দি হন। এক ছক্কার মারে অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে ১২ রানের ইনিংস।

রোহিতের উইকেট পতনের পর কোহলিকে সঙ্গ দিতে গেলেও ১০ম ওভারের প্রথম বলে নাওয়াজের উইকেটে পরিণত হন কোহলি। তালুবন্দি করেন সেই ইফতেখার।

শততম ম্যাচের মাইল ফলকে দাঁড়িয়ে দুঃসময় কাটানো বিরাটের ব্যাটে ৩৫ রানের ইনিংস যোগ হয়। তার ব্যাটে এক ছক্কা ও তিন বাউন্ডারির মার দেখে হাইবোল্ডেজ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ।

কোহলি-রোহিতরা দেখেশুনে ব্যাট চালিয়েও দলকে চাপমুক্ত করতে পারেননি। তাদের বিদায়ে আক্ষরিক অর্থে দল আরও চাপে পড়ে। তবে, জাদেজার সঙ্গে যোগ দিয়ে সুরয়কুমার যাদব ব্যাটে ধার দেওয়ার চেষ্টা করেন।

১৪ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ৩ উইকেটে ৮৯ রান। ১৫তম ওভারে তরুণ নাসিমের হাতে আবারও বল তুলে দেন বাবর। দ্বিতীয় বলে যাদবকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান নাসিম।

মাঠে হার্দিক-জাদেজা। গুরুত্বপূর্ণ ৪ উইকেট হারানো ভারতে তখনও ৫৭ রান প্রয়োজন। দুই হার্ডহিটার সময়মতো ব্যাট চালাতে ভুলেননি। অবশ্য, মাঝে এলবি’র ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরার পথে ছিলেন জাদেজা।

১৮তম ওভারে নাসিমের বলে এলবিডবিøউর শিকার হন জাদেজা। রিভিউ নিয়ে সেই ফাঁড়া থেকে বেঁচে যান। লাইনের বাইরে বল পড়ায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণ হয় ডিআরএসের কল্যাণে।

নাসিমের চতুর্থ বলে জাদেজা জীবন ফিরে পেয়ে জলে উঠেন। অবশ্য, নাসিম তার চতুর্থ বলটি ডেলিভারি দিতে গিয়ে পায়ে চোঁট পেয়ে বসেন। ঝুঁকি নিয়ে পরের বল করতে গিয়ে জাদেজার ছক্কায় পরিণত হয়।

১৯তম ওভারে হারিস রউফের বলে তিন বাউন্ডারির কল্যাণে হার্দিক পান্ডিয়া দলকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেন। শেষ ওভারে ভারতের জন্য প্রয়োজন ছিল ৬ বলে ৭ রান। প্রথম বলে মোহাম্মদ নাওয়াজ জাদেজাকে ফেরালেও চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন হার্দিক।

অপরাজিত হার্দিক খেলেন ১৭ বলে ৩৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। তার ব্যাট থেকে আসে এক ছক্কা ও ৪টি বাউন্ডারির মার। আউট হওয়ার আগে জাদেজার ব্যাট থেকে আসে ২৯ বলে ৩৫ রানের অসাধারণ ইনিংস।

রোববার রাত ৬টায় দুবাই স্টেডিয়ামে শুরু হয় চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী ভারত-পাকিস্তান হাইবোল্টেজ ম্যাচ। টসে জিতে বাবরদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় রোহিতরা। হার্দিক-ভুবনেশ্বরের বোলিং তোপে বড় সংগ্রহের দেখা পায়নি তারা। ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে ১৪৬ রানে আটকে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। ভারতের লক্ষ্য ১৪৭।

অধিনায়ক রোহিত শর্মা অভিজ্ঞ ভুবনেশ্বর কুমারের হাতে প্রথমে বল তুলে দেন। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রথম শুরুতেই পাকিস্তানকে চেপে ধরেন এই পেসার। ওভারের দ্বিতীয় বলেই আবেদন। ভুবনেশ্বরের বাউন্সারটি গিয়ে আঘাত করে রিজওয়ানের পায়ে। আবেদনে সাড়াও দেন বাংলাদেশের আম্পায়ার মাসুদুর রহমান। সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন রিজওয়ান। রিভিউতে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণ হয়। এ যাত্রায় বেঁচে যান মোহাম্মদ রিজওয়ান।

তৃতীয় ওভারে ভুবনেশ্বরই ভারতকে প্রথম সাফল্য এনে দেন। চতুর্থ বলে বাউন্সার পুল করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দেন বাবর। ৯ বলে ১০ রান করে সাজঘরে ফেরেন বাবর।

এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটি গড়ার চেষ্টা করলে ষষ্ঠ ওভারের পঞ্চম বলে আভেশ খানকে মারতে গিয়ে আউট হন ফখর জামান। ৬ বলে ১০ রান করে তিনি ফিরে যান।

অবশ্য বলটি গ্লাভসে নিলেও ব্যাটে লেগেছে কি না নিশ্চিত ছিলেন না উইকেটরক্ষক দিনেশ কার্তিক। আবেদন করেননি ভারতীয় ফিল্ডাররাও। ফাখরই নিজে বেরিয়ে যান ক্রিজ থেকে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৪৩ রান তোলে পাকিস্তান।

এরপর ৩৮ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়েন ইফতিখার আহমেদ আর রিজওয়ান। ১৩তম ওভারে তাতে মই দেন হার্দিক পান্ডিয়া। তার বাউন্সার হুক করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক কার্তিকের গ্লাভসবন্দী হন ইফতিখার। তার ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে ২৮ রান।

নিজের পরের ওভারে এসে জোড়া শিকার করেন হার্দিক। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রিজওয়ানকে ফেরার পরের বলে খুশদিল শাহকে (২) ফিরিয়ে পাকিস্তানকে চাপে ফেলে দেন ভারতীয় অলরাউন্ডার। রিজওয়ানের ব্যাট থেকে আসে ৪২ বলে ৪৩ রানের ইনিংস। এটি পাকিস্তানি ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এরপর ভুবনেশ্বরের লেগকাটারে আসিফ আলি ৭ বলে ৯, অর্শদীপ সিংহের বলে মোহাম্মদ নেওয়াজকে ১ রান করে বিদায় নেন।

১১৪ রানে ৭ উইকেট হারানো পাকিস্তান বোলার হারিস রউফ আর শাহনেওয়াজ দাহানির শেষ উইকেট জুটির কল্যাণে লড়াকু ১৪৭ রানের টার্গেট দিতে সক্ষম হয়। রউফ ৭ বলে ১৩ আর দাহানি ৬ বলে ২ ছক্কায় করেন ১৬ রান।

১৯তম ওভারে জোড়া উইকেট শিকার করা ভুবনেশ্বরই ছিলেন ভারতের পক্ষে সবচেয়ে সফল। ৪ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন এই পেসার। ৩টি উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: হার্দিক পান্ডিয়া।

২৯ আগস্ট ২০২২, ১২:৩৬এএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।