• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

ইউরোপে ‘ওমিক্রন’ নিয়ে উদ্বেগ: গার্মেন্ট শিল্পে শঙ্কা

ইউরোপে ‘ওমিক্রন’ নিয়ে উদ্বেগ: গার্মেন্ট শিল্পে শঙ্কা

প্রতিকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ওমিক্রন’ নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। করোনার নতুন এই ধরনের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য তৈরি পোশাকের বৃহত্তম বাজার ইউরোপে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে বিধিনিষেধ বা লকডাউন জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি প্রতিকূল হলে আঘাত আসতে পারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে। তাই মহামারি মোকাবিলায় ইউরোপ যাতে সফল হয় সেই প্রত্যাশাই করছেন বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, করোনার এই নতুন রূপ অত্যন্ত 'উদ্বেগজনক'।

এদিকে প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় দেশগুলোর পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন দেশের পোশাক প্রস্তুতকারীরা। রপ্তানি বাজারের সাময়িক ধীরতার মধ্যেও তারা আশা করেছিলেন, এবার হয়তো বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডগুলো তাদের অর্ডার স্থগিত করবে না।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, "রপ্তানির অন্যতম প্রধান গন্তব্যস্থল জার্মানিতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে; অন্যদিকে, নেদারল্যান্ডস ইতোমধ্যেই লকডাউন আরোপ করেছে।"

তিনি বলেন, কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ধাক্কার পর ইউরোপীয় দেশগুলোতে পুনরায় দোকান খোলার গত তিন মাসে, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিখাত সবে পুনরুদ্ধার করতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে কোভিডের নতুন ধরন রপ্তানি খাতের জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, "আমরা মূলত ক্রেতাদের তাদের অর্ডার আটকে রাখার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন।"

বিজিএমইএ'র তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯-এর প্রথম ঢেউয়ের সময় বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও ক্রেতারা তাদের ৩.১৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের পোশাকের অর্ডার বাতিল ও স্থগিত করেছিল, যা দেশের অন্তত ১ হাজার ১৩৬টি কারখানার ওপর প্রভাব ফেলেছে।

শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, "বিগত কয়েকমাস যাবত ক্রেতারা পণ্য দ্রুত পাঠানোর জন্য আমাদের ওপর চাপ দিলেও, এখন তারা আমাদের উৎপাদন কমিয়ে দিতে বলছে।"

জানা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিখাত থেকে আয় করেছে ৪.৭২ বিলিয়ন ডলার, যা একমাসে দেশে আয়ের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সাময়িক তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানিখাতে ওই মাসের জন্য নির্ধারিত আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩.৪৬ বিলিয়ন ডলার। এই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করায় এ বছরের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০.৩৭ শতাংশ।

অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে পোশাকের চালান ৫৩.২৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৫৬ বিলিয়ন ডলারে, যা এই অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মোট রপ্তানি আয়কে উন্নীত করেছে ১৫.৭৪ বিলিয়ন ডলারে।

বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, "বাজার পরিস্থিতি কেমন হয় তা বুঝতে আমাদের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যদি ব্র্যান্ডগুলো পণ্য বিক্রি করতে না পারে বা তাদের ব্যবসা প্রভাবিত হয়, তবে এটি আমাদের ব্যবসায়েও প্রভাব ফেলবে।"

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, "ক্রেতারা মহামারির প্রথম ধাক্কা থেকে শিক্ষা নিয়েছে। তারা জানে, যদি তারা কোনো অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করে, তাহলে এটি তাদের ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করবে।" নতুন এই বিধিনিষেধের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নখভুক্ত দেশগুলো জীবন ও জীবিকার ব্যাপারটিও বিবেচনায় রাখবে বলে তিনি আশাব্যক্ত করেন।

 

এবি/এসএন

২৮ নভেম্বর ২০২১, ০৩:২০পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।