• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শীতকালীন সংক্রমণ বাড়ছে: হাসপাতালে রোগীর চাপ

শীতকালীন সংক্রমণ বাড়ছে: হাসপাতালে রোগীর চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার প্রকোপ শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে শীতকালীন সংক্রমণ। প্রতি বছরের মতো এবারও জ্বর, ফ্লু, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ শীতকালীন রোগীর চাপ বাড়ছে জেলা হাসপাতালগুলোতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। শীতকালীন এসব সংক্রমণ রোধে আগাম প্রস্তুতি না থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশের শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সাবেক উপাচার্য ডা. অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “৫০ বছরেও স্বাস্থ্য খাত যদি সিজনাল ফ্লু সামলাতে হিমশিম খায় তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হবে কবে? সিজনাল ডিজিজ যেহেতু একটি বাৎসরিক সমস্যা ফলে এটিকে তো স্বাস্থ্য খাতের অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখতে হবে। বর্ষা আসার আগে যেমন বন্যা মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়া হয়, তেমনি সিজনাল ডিজিজ মোকাবেলায়ও প্রস্তুতি রাখতে হবে। কোভিড মহামারিতে তো আমরা স্বাস্থ্য খাতের সীমাবদ্ধতা দেখেছি, এখন সংক্রমণ কম, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখন স্বাস্থ্য খাতকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।”

অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি বছর শীতকালে দেশে রাইনো ভাইরাস ও ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রভাবে শ্বাসতন্ত্রের নানা মৌসুমি রোগ বাড়ে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব রোগী সামাল দিতে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকায় রোগীদের মেঝেতে থাকতে হয়, বেড সংকটের কারণে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাড়িতে থেকে হোমিওপ্যাথি বা অন্যান্য চিকিৎসা নেয়। অনেকে এক রকম বিনা চিকিৎসায় মারাও যায়। পূর্ব প্রস্তুতি থাকলেই এ পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব।”

সরেজমিনে জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে দেখা গেছে, নার্স-চিকিৎসকদের প্রস্তুতি ও লোকবল সংকটে শীতকালীন সংক্রমণে আক্রান্তরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। বেড না পেয়ে অনেকেই হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে আছেন। হাসপাতালের শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে রোগীদের চাপ বেশি বলে জানা গেছে।

যশোর জেনারেল হাসপাতাল, পাবনা, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুরসহ অধিকাংশ জেলা হাসপাতালে শীতকালীন রোগীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। রোগীর বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এসব জেলার হাসপাতালগুলো বেডের তুলনায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, যশোর জেলা বাদেও নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলা থেকে এই হাসপাতালে রোগী আসে। রোগীর চাপে এমন অবস্থা তৈরি হয় রোগী রাখার জন্য কোথাও তিল পরিমাণ জায়গা নেই, তারপরেও কোন রোগী আসলে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না।
এদিকে পাবনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবু জাফর বলেন, “শীতের কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। হাসপাতালের ধারণক্ষমতার বাইরে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। হাসপাতালে ডাক্তার স্বল্পতার কারণে চিকিৎসা সেবা দিতে সমস্যা হলেও কর্তব্যরত ডাক্তাররা ওভারটাইম ডিউটি করে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে।”

জানা গেছে, প্রতি বছর নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালগুলো থেকে শীতকালীন রোগের তথ্য সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার এ্যান্ড কন্ট্রোল রুম।

নিয়ন্ত্রণ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালের নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে শীতজনিত রোগে ২.২৬ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে ৪৯ জন জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং ডায়রিয়ায় ভুগে মারা যান। ২০২০ সালেও হাসপাতালগুলোতে শীতকালীন রোগীর সংখ্যা দুই লাখের বেশি ছিল।

কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালগুলোকে শীতকালীন রোগের তথ্য পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে এ বছরের শীতকালীন ডাটা সংগ্রহ করা শুরু হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, “প্রত্যেক হাসপাতালে বিভিন্ন ক্যাটাগরির বিভাগ হয়েছে, সেসব বিভাগে নির্দিষ্ট বেড থাকে। শীতকালে সিজনাল রোগী বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে রোগীদের মেঝেতে রাখতে হয়, এছাড়া তো কোন পথ নেই কারণ আমরা রোগী ফিরিয়ে দিতে পারিনা।”

তিনি আরও বলেন, “শুধু সিজনাল রোগী নয়, সব রোগীদের চিকিৎসা সেবা বাড়াতে ৩০ বেডের হাসপাতালকে ৫০ বেডে বা ৫০ বেডের হাসপাতালকে ১০০ বেড বা ২৫০ বেডে রূপান্তর করা হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে ওষুধ সংকট এখন অনেক কমেছে। কিন্তু সমস্যা হলো, জনবল সংকট রয়েছে।”

 

এবি/এসএন

২১ নভেম্বর ২০২১, ০৩:২৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।