• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্ব স্ট্রোক দিবস পালিত

স্ট্রোকে আক্রান্তের হার বাড়ছে, মুক্তির উপায় সচেতনতা

স্ট্রোকে আক্রান্তের হার বাড়ছে, মুক্তির উপায় সচেতনতা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘাতক ব্যাধি স্ট্রোক। দিনদিন এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর গড়ে প্রায় দেড় কোটি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে মারা যান অর্ধ কোটি মানুষ, পঙ্গুত্ব বরণ করেন প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। বিশ্বে প্রায় অর্ধেক মৃত্যুর কারণ এই স্ট্রোক। বাংলাদেশেও দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু হয় এই রোগে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার হার প্রায় ৮০ গুণ বেড়ে যাবে। বাংলাদেশও এই আশঙ্কার বাইরে নয়। আমাদের দেশেও দিনদিন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে।

বর্তমানে দেশে প্রতি ১ হাজার জনে প্রায় ১২ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন বলে গবেষণায় দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘাতক এ ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকতে সচেতনতার বিকল্প নেই। তাই এই রোগ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সারাদেশে রবিবার বিশ্ব স্ট্রোক দিবস পালিত হচ্ছে।

দেশে নিউরোলজির চিকিৎসায় নেতৃত্বদানকারী ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সসের (নিনন্স) আয়োজনে রবিবার সকালে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে সচেতনামূলক র‌্যালী, সেমিনার ও সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোসাইটি অব নিউরোলজিস্ট অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সোসাইাকটি অব স্ট্রোক ও নিউরোইন্টারভেনশনের আয়োজেন এদিন সকাল ৮ টায় বর্ণাঢ্য র‌্যালির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সুচনা হয়। র‌্যালিতে চিকিৎসকদের পাশাপাশি রোগীর আত্মীয়-স্বজন যোগদান করেন।

এছাড়া এ উপলক্ষ্যে রবিবার সকাল ১১ টায় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ চেয়ারপার্সন হিসেবে ছিলেন উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ফিরোজ আহম্মেদ কোরাইশি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. মো. বদরুল আলম ও আবু নাসার রিজভী।

রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ডা. খাইরুল কবির পাটোয়ারি, ডা. শিরাজী শফিকুল ইসলাম ও ডা. এটিএম হাছিবুল হাসান। অনুষ্ঠান উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মালিহা হাকিম, অধ্যাপক জাহেদ হোসেন, অধ্যাপক খুরশীদ মাহমুদ, অধ্যাপক রাজিব নারায়ন চৌধুরী, অধ্যাপক জহিরুল হক চৌধুরী, ডা. সুভাষ কান্তি দে।

প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বক্তারা বলেন, স্ট্রোকের চিকিৎসা যত দ্রুত করা সম্ভব তত ফলাফল ভালো হয়। স্ট্রোকের চিকিৎসায় দেরি করলে উন্নতি হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়। তাই দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

স্ট্রোকের লক্ষণগুলো সম্পর্কে সেমিনারে বক্তারা বলেন, যদি মুখ বেঁকে যায়, এক হাত অবশ হয়ে যায়, কথা জড়িয়ে যায়, তাহলে দেরি না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। সাড়ে চার ঘন্টার মধ্যে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিলে অত্যাধুনিক আইভি থ্রোম্বলাইসিস করা সম্ভব। স্ট্রোক প্রতিরোধে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, ধুমপান না করা ও নিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন করা জরুরি।

সেমিনারে বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক ও নিউরোইন্টারভেনশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক কাজী মহিবুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্ট্রোকের আধুনিক সব চিকিৎসা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স (নিনন্স) হাসপাতালে হচ্ছে। স্ট্রোকের অত্যাধুনিক চিকিৎসা যেটাকে মেকানিক্যাল থোম্বেক্টমি বলে আগামী বছর থেকে দেশে প্রথমবারের মত নিনন্সেই শুরু হবে বলে আশা করছি। নিনন্সেই নিয়মিতভাবে স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা আইভি থ্রোম্বলাইসিস, রক্তনালীর ফোস্কা বা এনিউরিজম, এভিএম বা অস্বাভাবিক রক্তনালীর চিকিৎসা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব স্ট্রোক ও নিউরোইন্টারভেনশনের সভাপতি অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন খান বলেন, বাংলাদেশে সরকারিভাবে একমাত্র নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নিয়মিতভাবে আইভি থ্রোম্বলাইসিস করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় এ হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ স্ট্রোকের অত্যাধুনিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে।

সোসাইটি অব নিউরোলজিস্ট অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ফিরোজ আহম্মেদ কোরাইশি স্ট্রোকের আধুনিক চিকিৎসা আইভি থ্রোম্বলাইসিস জেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের আহবান জানান।

নিউরোসায়েন্সস হাসপাতালের যুগ্ম-পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম মন্ডল বলেন, নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল স্ট্রোক চিকিৎসায় দিকপালের কাজ করছে। স্ট্রোকের অত্যাধুনিক চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে এটি। এ পর্যন্ত একশোর বেশি আইভি থ্রোম্বলাইসিস করেছে। রোগীরাও সুস্থ আছে। শুধু তাই নয় গরীব রোগীদের এ অত্যাধুনিক চিকিৎসা ফ্রি করছে নিনন্স। উপজেলার চিকিৎসক ও নার্সদের স্ট্রোকের চিকিৎসার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের হার বাড়ছে। এটা প্রতিরোধ করতে সচেতনতার বিকল্প নেই।

 

এবি/এসএন

৩১ অক্টোবর ২০২১, ০৩:৩৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।