• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্টিতে ভরপুর শীতকালীন সবজি ‘ফুলকপি’

পুষ্টিতে ভরপুর শীতকালীন সবজি ‘ফুলকপি’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতের সবজি। অনেকে সারাবছর অপেক্ষা করেন শীতের জন্য। কারণ শীতকাল মানেই বাজারে রং বেরঙয়ের সবজি। শীতকালে সবজির দামও থাকে কম। শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি সবজির নাম ‘ফুলকপি’। এটি দিয়ে চপ ও সালাদ তৈরি করা যায়। এছাড়া নানা ভাবে ফুলকপি খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। পুষ্টিগুণে অনন্য ফুলকপি সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

প্রিয় পাঠক, এই পর্বে ফুলকপির পুষ্টিগুণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাই আর দেরি নয়, চলুন দেখে নেয়া যাক, কি আছে ফুলকপিতে-

পরিচয়:
ফুলকপি ব্রাসিকেসি পরিবারভুক্ত ব্রাসিকা অলেরাসিয়া (Brassica oleracea) প্রজাতির সবজিগুলোর একটি। এটি একটি বার্ষিক ফসল যা বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। সাধারণতঃ ফুলকপির পুষ্পাক্ষ অর্থাৎ সাদা অংশটুকুই খাওয়া হয়। তবে সাদা অংশের চারপাশে ঘিরে থাকা ডাঁট এবং পুরু, সবুজ পাতা দিয়ে স্যুপ রান্না করা হয় অথবা ফেলে দেওয়া হয়। এটি দিয়ে আচারও তৈরি করা যায়। পাতা দিয়ে ঘিরে থাকা সাদা অংশটুকু দেখতে ফুলের মতো বলেই ফুলকপির এমন নামকরণ। ১৮২২ সালে ব্রিটিশরা ভারতে ফুলকপি প্রবর্তন করেছিল।

পুষ্টিগুণ:

ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজে প্রকাশিত স্বাস্থ্যবিষয়ক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক।

একটি মাঝারি আকারের ফুলকপিতে রয়েছে-

ক্যালরি- ২৫ কিলোক্যালরি,
কার্বোহাইড্রেট- ৪.৯৭ গ্রাম,
প্রোটিন- ১.৯২ গ্রাম,
ফ্যাট- ০.২৮,
আঁশ- ২ গ্রাম,
ফোলেট- ০.৫৭ মাইক্রোগ্রাম,
নিয়াসিন- ০.৫০ মাইক্রোগ্রাম,
থায়ামিন- ০.০৫,
প্যানথানিক এসিড- ০.৬৬৭ মাইকোগ্রাম।

উপকারিতা:
ফুলকপিতে ক্যান্সার নিরোধক উপাদান পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পুষ্টি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের বরাত দিয়ে উইকিপিডিয়া জানিয়েছে, ফুলকপি-

কোলস্টেরল কমায়: এতে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ রয়েছে, যা শরীরে কোলস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে সহায়তা করে: গবেষণায় দেখা গেছে, ফুলকপি মস্তিষ্ক ভালো রাখে, ওজন কমায় এবং সর্দি-কাশিসহ নানা রোগ প্রতিরোধ করে।

হাড় ও দাঁত শক্ত করে: ফুলকপিতে রয়েছে দাঁত ও মাড়ির উপকারী ক্যালসিয়াম ও ফ্লোরাইড। এর ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: মারাত্মক ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে ফুলকপি। এতে আছে সালফোরাপেন, যা ক্যানসার কোষকে মেরে টিউমার বাড়তে দেয় না। স্তন ক্যানসার, কোলন ও মূত্রথলির ক্যানসারের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতাও আছে ফুলকপির।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: ফুলকপি হৃদযন্ত্রের জন্য বেশ উপকারী। এতে যে সালফোরাপেন আছে, তা হৃদরোগের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ করে: ফুলকপিতে আছে ভিটামিন ‘বি’, ‘সি’ ও ভিটামিন কে, যা এ সাধারণ সর্দি, ঠান্ডা, কাশি জ্বর, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, গা-ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া ফুলকপির আরও সব প্রয়োজনীয় উপাদান রোগ প্রতিরোধেও অংশ নেয়।

শক্তি বৃদ্ধি করে: এই সবজিতে আছে প্রচুর আয়রন। রক্ত তৈরিতে আয়রন সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি গর্ভবতী মা ও অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

চুল ও ত্বকের জন্য উপকারী: কম ক্যালরিযুক্ত ও উচ্চমাত্রার আঁশসমৃদ্ধ ফুলকপি চুল ভালো রাখে। ত্বকের সংক্রমণও প্রতিরোধেও এটি অত্যন্ত কার্যকরী।

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: চোখের যত্নে ফুলকপি অতুলনীয়। এতে থাকা ভিটামিন ‘এ’ চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।

অন্যান্য গুণাগুণ:
বাল্টিমোর জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকদের বরাত দিয়ে উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, ফুলকপির পাতায় আইসো থায়োসায়ানেটস নামক রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। যা মলাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া ফুলকপির কচি পাতা থেকে সংগৃহীত আইসো থায়োসায়ানেটস নির্যাস প্রয়োগে বুকের টিউমারের আকার ও সংখ্যা হ্রাস করে। ফুলকপির পাতায় প্রচুর ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, খাদ্যশক্তি ও আয়রন রয়েছে। এতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কচুশাকের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ, সবুজ কচুশাকের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ, লালশাকের চেয়ে দ্বিগুণ, কলমিশাকের চেয়ে ৬ গুণ, পুঁই ও পাটশাকের চেয়ে ৭ গুণ, পালং ও ডাঁটা শাকের চেয়ে ৮ গুণ বেশি রয়েছে।

তথ্যসুত্র: উইকিপিডিয়া, জি নিউজ ও বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিস

 

এবি/এসএন

১৯ অক্টোবর ২০২১, ০৮:০৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।