রোগ সারাতে ওস্তাদ মিষ্টি ‘তাল মিছরি’
প্রতিকী ছবি
আবহমান বাংলার গ্রামীণ জনজীবনে প্রাকৃতিক খাবারের প্রচলন বেশি। ফল-ফলাদি, পিঠা-পুলি ও মিষ্টিজাত খাবারের প্রাকৃতিক উৎস এখনো গ্রামাঞ্চলে বিদ্যমান। তবে অনেক খাবারই কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। এমনই একটি জনপ্রিয় খাবার ‘তাল মিছরি’। এই খাবারটিকে প্রাকৃতিক বলার কারণ, এটি তৈরিতে কোনো কেমিক্যাল বা মেশিনের সাহায্য নেয়া হয় না। সম্পূর্ণ কাঁচা বা অপ্রস্তুতকৃত একটি মিষ্টি জাতীয় উপাদান এই তাল মিছরি।
বাংলাদেশে এটি বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার। মিষ্টি জাতীয় হলেও এটির রয়েছে নানা রকম ভেষজ গুণাগুণ। সাধারণ রোগ নিরাময়ে তাল মিছরি বেশ কার্যকরী।
প্রিয় পাঠক- আপনাদের জন্য আমাদের এবারের পর্বে রয়েছে তাল মিছরির আলোচনা। চলুন দেখে নেয়া যাক, কি আছে তাল মিছরিতে-
পরিচয়
তালমিছরি প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হওয়া একটি মিষ্টি জাতীয় খাদ্য দানা। যাকে বলা হয় আনপ্রসেসড সুগার। সাধারণ চিনি বা সাধারণ মিছরিতে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধিকারী উপাদান গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স থাকে ৫৫ শতাংশ। সেখানে তাল মিছরিতে একই উপাদান থাকে মাত্র ৩৫ শতাংশ। কাজেই এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিমুক্ত একটি মিষ্টি খাবার।
তাল মিছরির পুষ্টিগুণ
উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, তালি মিছরিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেলস ও খনিজ উপাদান। বিশেষ করে এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, জিংক, ফসফরাস, অ্যামাইনো এসিড, খাদ্যআঁশ, সুগার। তাল মিছরিতে রয়েছে ব্যথা বিনাশী উপাদান।
এটি নিয়মিত খেলে রক্তশূণ্যতা, সর্দি-কাশি, হাড়ের সমস্যা, চোখের সমস্যা, কিডনির পাথর, পেটের ব্যথাসহ নানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
তাল মিছরির উপকারিতা
টাইমস অব ইন্ডিয়া, জি নিউজ ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, তাল মিছরি-
হাড়ের সমস্যা নিরাময়: হাড়ের দীর্ঘদিনের ব্যথা নিরাময়ে তাল মিছরি খুবই উপকারী। এতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। ফলে হাড়ের ব্যথা দূর হয়।
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে: এতে রয়েছে প্রচুর ফসফরাস ও জিঙ্ক, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে।
ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ: ডায়রিয়া থেকে মুক্ত থাকতে হলে নিয়মিত তাল মিছরি খাওয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়া ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর দ্রুত সুস্থতার জন্য তাল মিছরি পানিতে মিশিয়েও খাওয়াতে পারেন।
রক্তশূন্যতা দূর করে: তাল মিছরি রক্তশূন্যতা দূর করতে ব্যাপক ভাবে কার্যকরী। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পটাসিয়াম ও আয়রন।
কিডনীর পাথর দূর করে: যারা কিডনীতে পাথরজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাল মিছরি খেতে পারেন। কারণ কিডনিতে জমে থাকা পাথর দূর করার উপাদান রয়েছে তাল মিছরিতে।
হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে: রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে অ্যানিমিয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, দুর্বলতা, ক্লান্তি বোধ হয়। আপনি যদি এমন সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে তাল মিছরি খান, উপকার পাবেন।
হজম শক্তি বাড়ায়: নিয়মিত তাল মিছরি খাওয়ার অভ্যাস আপনার হজমশক্তি বাড়িয়ে দেবে। কারণ এতে রয়েছে প্রাকৃতিক আঁশ।
শক্তিবর্ধক: আপনি কি জানেন, তাল মিছরি খাওয়ার পর মানবদেহে তাৎক্ষণিক শক্তি বৃদ্ধি ঘটে? তাই দুপুরে খাওয়ার পরের আলস্য বোধ দূর করতে তাল মিছরি খেতে পারেন।
কফ ও গলার ব্যথা কমায়: ঠাণ্ডাজনিত কফ ও গলা ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন? এখনই খেয়ে নিন তাল মিছরি। এটি মুহুর্তেই আপনার বুকে জমে থাকা কফ ও গলা ব্যথা থেকে মুক্তি দেবে।
পেট ব্যথা দূর করে: পেটের ব্যথায় ভুগছেন? এখনই খেয়ে নিন তাল মিছরি। এটি আপনার পেটের জ্বালা- পোড়া ও অস্বস্তি ভাব দূর করবে নিমিষেই।
সতর্কতা
তাল মিছরি একটি মিষ্টি জাতীয় উপাদান। তাই এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিতি বজায় রাখা জরুরি। এছাড়া যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তাল মিছরি খেতে পারেন।
তথ্যসূত্র- জি নিউজ, ইন্ডিয়া টাইমস ও উইকিপিডিয়া।
এবি/এসএন