• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রথম রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপন

পারমাণবিক বিদ্যুৎ যুগের আরও কাছে বাংলাদেশ

পারমাণবিক বিদ্যুৎ যুগের আরও কাছে বাংলাদেশ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পারমাণবিক বিদ্যুতের স্বপ্ন পূরণে বড় ধাপ অতিক্রম করল বাংলাদেশ। পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল বসানো হয়েছে। রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল মূলত পরমাণু চুল্লিপাত্র। রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরমাণু চুল্লিপাত্র বা রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল বসানোর উদ্বোধন করেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক অ্যালেক্সি লিখাচেভ, এটমস্ট্রয় এক্সপার্টের প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সান্ডার লোশকিন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনকালে শেখ হাসিনা বলেন, পরমাণু শক্তির একটা অংশ হিসেবে আমরা নিজেদের একটা স্থান করে নিতে পারলাম। তবে আমাদের পরমাণু কার্যক্রম শান্তির জন্য। এখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, সেই বিদ্যুৎ গ্রাম পর্যায়ের মানুষের কাছে পৌছে যাবে। মানুষের জীবনমান ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।

জানা গেছে, রাশিয়ার সহায়তায় বাংলাদেশে প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের কলাকৌশূলীরা নিয়োজিত রয়েছেন। দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল বসানোর মধ্যদিয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। এই রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেলের ভেতরেই ইউরেনিয়াম থেকে শক্তি উৎপাদন হবে। যা বিদ্যুৎ তৈরির কাজে ব্যবহার করবে বাংলাদেশ। এই রিঅ্যাক্টরই মূলত পারমাণবিক বিদ্যুতের প্রাণ।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়া থেকে এই রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল বাংলাদেশে আসে। রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল বাহী জাহাজ রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের মোংলা সমুদ্র বন্দরে এসে পৌছায়। পরে তা পাবনার রূপপুরে নেয়া হয়।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (আইএইএ) নীতিমালা ও মান অনুসরণ করে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রিঅ্যাক্টর স্থাপনের পর প্রকল্পের কাজ শেষ করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। প্রথম ইউনিটের ৫০ শতাংশ কাজ এ বছরেই শেষ হবে।

তবে ২০২৩ সালের এপ্রিলে রূপপুরের ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা যাবে বলে আশা করছে সরকার। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যাবে।

এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনার রূপপুরে পরমাণু চুল্লির জন্য প্রথম ইউনিটের কংক্রিটের মূল স্থাপনা নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। পরের বছর জুলাই মাসে দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের জন্য কংক্রিট ঢালাই কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

জানা গেছে, রূপপুরের প্রকল্প এলাকায় এক হাজার ৬২ একর জমির ওপর চলছে বিপুল কর্মযজ্ঞ। প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৫ হাজার দেশি-বিদেশি শ্রমিক, প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞ কর্মরত রয়েছেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রোসাটমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশন।

প্রকল্পের দুই ইউনিট মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে অনুমোদন দেয়। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

 

এবি/এসএন

১০ অক্টোবর ২০২১, ০৩:৩৫পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।