• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

ভাসানচরেও রোহিঙ্গাদের সহায়তা দেবে জাতিসংঘ

ভাসানচরেও রোহিঙ্গাদের সহায়তা দেবে জাতিসংঘ

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চলছে আগে থেকেই। এবার ভাসানচরে স্থানান্তরিত মিয়ানমারের নাগরিকদেরও (রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী) মানবিক সহায়তা দেবে সংস্থাটি। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে জাতিসংঘ। শনিবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাও সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম।

চুক্তি স্বাক্ষর শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া ও কুতুপালং ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে জাতিসংঘ। এতে আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটা অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তর করেছি। বর্তমানে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ভাসানচরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের চাহিদা পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। এবার জাতিসংঘ ভাসানচরে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। যা সরকারের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করেছে। এটি আমাদের জন্য স্বস্তির বিষয়।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব বলেন, বেসামরিক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ভাসানচরে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর-এর যৌথ উদ্যোগে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (এফডিএমএন) খাদ্য ও পুষ্টি, সুপেয় পানি, পয়ঃনিস্কাশন, চিকিৎসা, মিয়ানমার কারিকুলাম ও ভাষায় এফডিএমএনদের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং জীবিকায়নের ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরে বসবাসরত রোহিঙ্গা ও কর্মরত জাতিসংঘ এবং এর সহযোগী সংস্থা ও দেশিয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয় দেখাশুনা করবে। এছাড়া ভাসানচরে এফডিএমএনদের বসবাসের কারণে পাশ্ববর্তী স্থানীয় এলাকা ও জনগণের ওপর যে প্রভাব পড়বে, তা নিরসনে জাতিসংঘ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। এরা সবাই মিয়ানমারের নাগরিক। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য কক্সবাজারের উখিয়ায় ক্যাম্প করা হয়েছে। এছাড়া ভাসানচরে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের ব্যবস্থা করেছে। গত ৩ ডিসেম্বর থেকে গত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮৪৬ জন মিয়ানমারের নাগরিকদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এদিকে দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিব বলেন, আগামী তিন মাসে অর্থাৎ নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে আরও ৮০ হাজার মিয়ানমারের নাগরিককে আমরা ভাসানচরে নেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। কাজেই কক্সবাজারের মতো ভাসানচরেও জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা শুরু হলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সরকারের জন্য আরও সহজ হবে। এ লক্ষ্যে তিন সদস্যের যে কমিটি গঠিত হয়েছে, ওই কমিটির ফলপ্রসূ আলোচনার ফলেই আজ জাতিসংঘ মানবিক সহায়তায় সম্মত হয়েছে।

দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিব বলেন, অতি শিগগিরই এ সমঝোতা স্মারকের আলোকে অপারেশন প্ল্যানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করা হবে। মিয়ানমারের নাগরিকদের অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, এর একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন। এসব নিয়েও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র, জননিরাপত্তা বিভাগ, এনএসআই ও জাতিসংঘের বাংলাদেশের আবাসিক সমন্বয়কারী (অন্তবর্তীকালীন) তোমু পটিয়ানেন, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টর রিচার্ড রিগ্যানসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

এবি/এসএন

০৯ অক্টোবর ২০২১, ০৫:২০পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।