• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হলে উঠেছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা, প্রাণ ফিরেছে ক্যাম্পাসে

হলে উঠেছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা, প্রাণ ফিরেছে ক্যাম্পাসে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলেছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আবারও শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ঢাবি ক্যাম্পাস। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো শিক্ষার্থীরা উঠতে শুরু করেছেন। প্রাণের ক্যাম্পাস ও হলে উঠতে হলে শিক্ষার্থীদের মেনে চলতে হচ্ছে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই মুখে মাস্ক, কাঁধে ব্যাগ ও হাতে বইপত্রের ব্যাগ নিয়ে শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে শুরু করে। ঘণ্টাখানিকের মধ্যেই ঢাবি ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে প্রবেশ করতে থাকে। এসময় হলের পক্ষ থেকে রজনীগন্ধা ফুল ও চকলেট দিয়ে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয়া হয়। তবে হলে উঠতে হলে শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম এক ডোজ করোনা টিকা নেয়ার কার্ড দেখাতে হচ্ছে। তারপরই শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন।

এছাড়া প্রতিটি হলের প্রবেশ পথেই রাখা হয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও স্যানিটাইজার। রয়েছে তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, প্রথম ধাপে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা হলে উঠার সুযোগ পাচ্ছেন। পর্যায় ক্রমে অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে উঠানো হবে।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল পরিদর্শনে যান উপাচার্য অধ্যাপক মো. আকতারুজ্জামান। এসময় তিনি বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য আনন্দের দিন। এই দিনটি একেবারে ঈদের দিনের মতো। প্রতিটি হলে আনন্দমুখর পরিবেশ ফিরে এসেছে। শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয়া হচ্ছে।

উপাচার্য অধ্যাপক মো. আকতারুজ্জামান আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা টিকা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলে উঠছে। এই হল, এই ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের। আমরা তাদেরকে কাছে পেয়ে আজ আনন্দিত। শিক্ষকদের মধ্যেও আজ প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

ঢাবি উপাচার্য আরও বলেন, সকল শিক্ষার্থীকে হলে ওঠানো ও ক্লাসে ফেরানোর বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করোনা সংক্রমণ আরেকটু নিয়ন্ত্রণে এলেই আমরা সকল শিক্ষার্থীদের হলে ফেরাবো।

করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এর আগে গত বছরের ১৮ মার্চ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়।

বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণ হার কমে এসেছে। তাই হল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাবি প্রশাসন। তবে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের আগে সব শিক্ষার্থীকে করোনাভাইরাসের টিকার আওতায় আনা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৩ হাজার শিক্ষার্থী করোনা টিকার এক ডোজ নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আসিফ হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করে এখনও এসএমএসের জন্য অপেক্ষায় আছেন।

এদিকে দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীরা হলে ফেরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ভবন, স্থাপনা ও চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া করোনাকালে শিক্ষার্থীরা হল, টিভি রুম, ক্যান্টিন, রিডিং রুম ও অন্যান্য জায়গা কিভাবে ব্যবহার করবেন তার জন্য বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

আবাসিক হল ব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা হলো- কক্ষের বাইরে আসলে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়মিত ও সার্বক্ষণিক সঠিক নিয়মে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি পালনে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কক্ষের মেঝেতে শোয়া ও এক বিছানায় একাধিক ব্যক্তি শোয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেবলমাত্র আবাসিক ও দ্বৈতাবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবে। তবে কোনো বহিরাগত বা বাহির থেকে আসা কাউকে কক্ষে অবস্থান করতে দেয়া যাবে না। প্রয়োজন সাপেক্ষে কক্ষে এবং কক্ষের বাহিরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ কক্ষ এবং কক্ষের প্রয়োজনীয় আশপাশ সবসময় নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং এক্ষেত্রে হল প্রশাসন সহযোগিতা প্রদান করবে।

এছাড়া হল ডাইনিং, ক্যান্টিন, মেস, দোকান, সেলুন, রিডিংরুম, অডিটোরিয়াম, টিভিরুম, অতিথি কক্ষ, পাঠাগার, মসজিদ ও উপাসনালয়ে ভিড় না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, উক্ত স্থানসমূহে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বিধি অনুসরণ এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ডাইনিং-এ পালাক্রমে খাবার খেতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অতিথি কক্ষে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ বন্ধ রাখতে হবে। বেড়াতে বা ঘুরতে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সভা-সমাবেশ, রেস্তোরাঁ, পার্টি ও গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে।

 

এবি/এসএন

০৫ অক্টোবর ২০২১, ০৪:৩২পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।