• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অনেক সম্পাদক এখন ‘মালিকের পিআর কর্মকর্তা’: অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

অনেক সম্পাদক এখন ‘মালিকের পিআর কর্মকর্তা’: অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাংবাদিকরা ‘বিপদের মধ্যে’ আছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, অনেক সম্পাদককে এখন মালিকের ‘জনসংযোগ কর্মকর্তা’ হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা তো জানি, এখন সাংবাদিকরা কী বিপদের মধ্যে আছেন। তারা যে সংবাদ নিয়ে যান, সেটা প্রকাশ পায় না। সেটা এখন মালিকের অধীনে চলে যায় এবং পত্র-পত্রিকার মালিক এখন সবাই টাকার জোরে হচ্ছেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক আতাউস সামাদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘অনেক সম্পাদককে বলতেই হয়, অনেক সম্পাদকের দায়িত্ব হচ্ছে মালিকের পাবলিক রিলেশনস অফিসার হিসেবে কাজ করা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন নানাভাবে হরণ হচ্ছে। মালিক হরণ করছে। আবার অন্যদিকে রাষ্ট্রও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করছে, রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব হরণ করছে।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের সমস্ত পেশার মধ্যেই বিভাজন তৈরি হয়েছে। পেশাজীবীরা আজ ঐক্যবদ্ধ নয়। তবে পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যেমন পুলিশদের অ্যাসোসিয়েশন, চিকিৎসকদের অ্যাসোসিয়েশন, অ্যাডমেনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস হোল্ডারদের অ্যাসোসিয়েশন হয়েছে। তাদের কারও সঙ্গে অন্যায় হলে তারা সোচ্চার হচ্ছেন। তারা বিবৃতি দিচ্ছেন। এটা জরুরি।

তিনি বলেন, সাংবাদিকদেরও ঐক্য প্রয়োজন। তবে তা কোনো ভাবেই যেন পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি বা রক্ষার জন্য না হয়। সাংবাদিকদের ঐক্য হতে হবে দেশের জন্য, মানুষের জন্য। তাহলে তা সবার জন্যই মঙ্গল হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরে আসবে।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের ওপর ‘অপমানজনক তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের যে উন্নয়ন, সেই উন্নয়ন হচ্ছে একপেশে। এই উন্নয়ন ওপরের দিকে খাড়াখাড়ি হয়ে চলে গেছে। এই উন্নয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে না। এটা বৈষম্যের উন্নয়ন। যত উন্নয়ন হচ্ছে, তত বৈষম্য বাড়ছে।

সাংবাদিক আতাউস সামাদকে স্মরণ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি তার সাংবাদিকতার বিবর্তনটা দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদদাতা থেকে শুরু করে তিনি বিবিসির সংবাদদাতা হয়েছেন। আমার দেশ পত্রিকার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তিনি এনটিভির দায়িত্ব নিয়েছেন।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় পাকিস্তান অবজার্ভারের সংবাদদাতা হিসেবে আতাউস সামাদকে দেখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সময় তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের চিঠি মওলানা ভাসানীর কাছে নিয়ে গেছেন। এই যে কাজ তো অন্য কোনো সাংবাদিক করতে পারত না।

আতাউস সামাদ স্মৃতি পরিষদের আয়োজনে স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের উপদেষ্টা সাংবাদিক শওকত মাহমুদ। সভায় আতাউস সামাদের কর্ম ও জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান, কবি হেলাল হাফিজ, সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান, মুন্নি সাহা, শামসুল হক জাহিদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান প্রমুখ।

পরে সাংবাদিকতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য রয়টার্সের আলোকচিত্র সাংবাদিক এবিএম রফিকুর রহমানের হাতে আতাউস সামাদ স্মৃতি সম্মাননা ২০২১ পদক তুলে দেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

 

এবি/এসএন

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৬:০০পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।