• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
শিগগির বাতিল হবে বললেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

চাকরির আবেদনে সত্যায়ন প্রক্রিয়ায় বিড়ম্বনা

চাকরির আবেদনে সত্যায়ন প্রক্রিয়ায় বিড়ম্বনা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাকরির আবেদনে ছবি ও সনদপত্র সত্যায়নের বাধ্যবাধকতা আর থাকছেনা। এতদিন সরকারি চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ বিভিন্ন কাগজপত্র প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাকে দিয়ে সত্যায়ন করতে হতো। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে পরিচিত না হওয়ায় সত্যায়ন করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তেন চাকরিপ্রার্থী ও সত্যায়নকারী উভয়ই। এখন থেকে এই বিড়ম্বনা আর থাকছেনা বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বর্তমানে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার সত্যায়ন ছাড়াই খুব সহজেই চাকরিপ্রার্থীর তথ্য যাচাই-বাছাই করা সম্ভব। কাজেই কোনো কর্মকর্তাকে দিয়ে কাগজপত্র সত্যায়ন করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। আর তাই এই প্রক্রিয়াটি বাদ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, চাকরির আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দেয়া কাগজপত্র আসল নাকি নকল তা নিশ্চিত করতেই এতদিন সত্যায়নের প্রক্রিয়া চালু ছিল। একজন প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা চাকরিপ্রার্থীর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সত্যায়ন করতেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে কর্মকর্তাদের পরিচয় না থাকায় সত্যায়ন করা নিয়ে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হতো। এ নিয়ে একাধিকবার বিব্রতকর ঘটনাও ঘটেছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, এতদিন সরকারের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা, অষ্টম গ্রেডের বেতন স্কেল থেকে তদুর্ধ্ব, বিশেষ ক্ষেত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার, মেয়র ও স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও গণমাধ্যমের সম্পাদক চাকরিপ্রার্থীদের কাগজপত্র সত্যায়নের এখতিয়ার রাখতেন।

তবে বর্তমানে এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই এই প্রক্রিয়াটি বাতিলের পথে হাটছে সরকার। কারণ এখন মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকসহ প্রায় সব বোর্ড ও বিশ^বিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর নম্বরপত্রসহ হালনাগাদ তথ্য দেয়া থাকে। কাজেই খুব সহজেই এখন শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা সম্ভব।

এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আইডি নম্বর দিয়েও অতি সহজেই যেকোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়। কাজেই প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের দিয়ে বা তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে সত্যায়নের প্রক্রিয়া তেমন গুরুত্ব বহন করছে না। এর যৌক্তিকতা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সরকারি চাকরির আবেদনে সত্যায়ন প্রক্রিয়া বাদ দেয়ার ব্যাপারে ২০১৫ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সচিব পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সত্যায়ন প্রক্রিয়া বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবেদনকারীরা অনলাইনে যোগ্যতার ভিত্তিতে আবেদন করতে পারবেন বলে জানা গেছে। অনলাইনে আবেদনের পর মৌখিক পরীক্ষার সময় মূল সনদ দেখালেই যাচাই-বাছাই চূড়ান্ত হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

কিন্তু দীর্ঘ ৬ বছর পার হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত সত্যায়ন প্রক্রিয়া বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত শতভাগ কার্যকর করতে পারেনি সরকার। এখনো অধিকাংশ সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা কর্তৃক শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ সত্যায়নের শর্ত বলবৎ রয়েছে। এছাড়া চারিত্রিক ও নাগরিকত্ব সনদের সত্যায়িত কাগজ দেখানোর শর্তও জুড়ে দেয়া হয়েছে। ফলে বিড়ম্বনা কমেনি মোটেই।

এসব বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সত্যায়ন প্রক্রিয়া বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তা শিগগির কার্যকর করা সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে আমরা এই প্রকিয়া থেকে বের হয়ে আসবো। আমরা সত্যায়ন প্রক্রিয়ার একটি বিকল্প পদ্ধতি বের করার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, কাগজপত্র সত্যায়নের ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়। অনেক চাকরিপ্রার্থী নিজেই নিজের কাগজপত্র সত্যায়ন করে জমা দেন। ফলে হয়রানি বা ভোগান্তি বাড়ে। কিন্তু চাকরিপ্রার্থীরা যেন আর হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ডিজিটালাইজেশনের যুগে প্রবেশ করেছি। আগামীতে এসব প্রক্রিয়া আরও ডিজিটাল, সহজ ও জনবান্ধব হবে বলে আশা করি।

 

এবি/এসএন

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:৪১পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।