• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১
গ্রাহকের অর্থে ইভ্যালি’র রমরমা ব্যবসা

কর্মচারীদের বেতন বন্ধ, স্ত্রীকে মাসে ১০ লাখ দেন রাসেল

কর্মচারীদের বেতন বন্ধ, স্ত্রীকে মাসে ১০ লাখ দেন রাসেল

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্রাহক হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ইভ্যালির দুই শীর্ষ কর্তার গ্রেপ্তারের পর নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। বিলাসবহুল গাড়ি ও সাভারে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও জমিজমা কিনেছেন রাসেল ও তার স্ত্রী। আর এসব সম্পদ ক্রয়ে তারা ব্যবহার করেছেন কোম্পানীর টাকা।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র‌্যাবের সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এদিকে ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এদিন আদালতে হাজির করে আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। 

র‌্যাব জানিয়েছে, গত জুন মাস থেকে ইভ্যালির কর্মচারীদের বেতন-ভাতা আটকে দেন সিইও মো. রাসেল। কিন্তু একই সময়ে তিনি তার স্ত্রীর মাসিক বেতন ৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকায় উন্নীত করেন। একই সময়ে কোম্পানীর কাজের কথা বলে তারা ব্যক্তিগত মালিকানায় কোম্পানীর অর্থ দিয়ে রেঞ্জ রোভার ও অডি ব্র্যান্ডের ব্যয়বহুল দুটি গাড়ি কিনেছেন। কোম্পানীর কর্মকর্তাদের জন্য ২৫-৩০টি যানবাহন থাকা সত্বেও রাসেল ও তার স্ত্রী কোম্পানীর অর্থ দিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি দুটি কিনে নিজেরা ভোগ করছেন।

এছাড়া এরই মধ্যে ঢাকার সাভারে ইভ্যালির সিইও মো. রাসেলের নামে ক্রয় করা কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ ও জমিজমার সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব। এসব সম্পদ ও জমিজমা ক্রয়ে ব্যয় করা হয়েছে ইভ্যালির অর্থ। স্ত্রী শামীমার নামেও কেনা হয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। আর এসব সম্পদ ক্রয়ের টাকা এসেছে কোম্পানী থেকে। এসব কথা র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন।

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের প্রধান খন্দকার আল মঈন বলেন, ইভ্যালির সিইও হলেও মো. রাসেলের আরও কয়েকটি ব্যবসায়িক প্লাটফর্ম রযেছে। ই-ফুড, ই-খাতা, ই-বাজার নামে এসব প্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে তুলেছেন। সামান্য বিনিয়োগে বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেয়ার স্ট্রাটেজি নিয়ে মো. রাসেল ইভ্যালি গড়ে তোলেন বলে স্বীকার করেছেন। তিনি ইভ্যালিতে যে বিশাল অংকের ছাড় ও বিশাল অফার দিতেন, এর সবই ছিল জনগণকে প্রলুব্ধ করার কৌশল। এসব চটকদার অফার দিয়ে তিনি অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতে পেয়েছেন।

র‌্যাবের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মো. রাসেল জানিয়েছেন, ইভ্যালির বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৪৪ লাখের বেশি। কোম্পানীটি বিভিন্ন সময়ে লোভনীয় অফার দিয়ে অল্প সময়ে অসংখ্য গ্রাহক সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যদিয়ে তারা হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।

জানা গেছে, গ্রেপ্তার রাসেল ২০০৭ সালে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ২০১০ সালে তিনি এমবিএ শেষ করেন। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন মো. রাসেল। ২০১১ সালে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি শুরু করেন। তিনি প্রায় ৬ বছর ব্যাংকে চাকরি করেন। ২০১৭ সালে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নামেন মো. রাসেল। শিশু পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও পরে তিনি ইভ্যালি চালু করেন।

২০১৮ সালে ইভ্যালি নিয়ে ব্যবসা বাড়ানোর প্রতি মনোযোগী হন তিনি। পরে ইভ্যালিকে তিনি কোম্পানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। কোম্পানীতে নিজে হন সিইও এবং স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইভ্যালির প্রধান কার্যালয় ও কাস্টমার কেয়ার স্থাপন করা হয়। এছাড়া ঢাকার আমিনবাজার ও সাভারে দুটি ওয়ার হাউজ চালু করে ইভ্যালি। পরে ধীরে ধীরে ইভ্যালিতে নিয়োগ দেয়া হয় প্রায় ২০০০ ব্যবস্থাপনা স্টাফ ও ১৭০০ অস্থায়ী কর্মচারী। বর্তমানে ইভ্যালিতে নিয়োজিত রয়েছেন ১৩০০ জন স্থায়ী স্টাফ ও প্রায় ৫০০ জন অস্থায়ী স্টাফ। বর্তমানে ইভ্যালিতে কর্মরত কমর্চারীদের এক মাসের বেতনের পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা। কিন্তু গত জুন মাস থেকে মাত্র দেড় কোটি টাকা বেতন হিসেবে খরচ করেছেন মো. রাসেল। কাজেই অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে।

এদিকে র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির দায়-দেনা ছিল ৪০৩ কোটি টাকা। চলতি সম্পদ ছিল ৬৫ কোটি টাকা, বিভিন্ন পণ্য বাবদ গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নেয়া ছিল ২১৪ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন গ্রাহক ও কোম্পানীর কাছে ইভ্যালির বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৯০ কোটি টাকা। তবে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল জানিয়েছেন, তার দেনা এখন হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে লোকসানি এ কোম্পানিটি কখনোই ব্যবসায়িক ভাবে লাভের মুখ দেখেনি। গ্রাহকের অর্থ দিয়েই চলেছে কোম্পানীর কর্ণধারদের বেতন-ভাতা। ফলে বেড়েছে দেনার পরিমাণ।

 

এবি/এসএন

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:২৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।