• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
‘ভূমি ভবন কমপ্লেক্স’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

‘এক ছাদের নিচে মিলবে ডিজিটাল ভূমি সেবা’

‘এক ছাদের নিচে মিলবে ডিজিটাল ভূমি সেবা’

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভূমি সেবাকে জনগণের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার মাধ্যমে ভোগান্তি লাঘবের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সম্পূর্ণ ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে সরকার কাজ শুরু করেছে। এর সুফল জনগণ শিগগির পেতে শুরু করবে। ভূমি সেবা জনগণের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এখন থেকে একই ছাদের নিচে ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতে সকল ভূমি সেবা পাবে জনগণ।

বুধবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি ভবন কমপ্লেক্স, উপজেলা ও ইউনিয়নের ভূমি অফিস ভবন, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ কার্যক্রম এবং ভূমি ডাটা ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ভূমি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন তিনি। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ যেন ভোগান্তির শিকার না হয়, ভূমি সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে যেন দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে না হয়, সেজন্যই ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজড করা হচ্ছে। চলমান প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে জনগণ মূহুর্তের মধ্যে সহজেই ভূমি সেবা পাবে। আমরা সেই ব্যবস্থাই করছি।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সেবাদানকারী সকল দপ্তর ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে সেবা প্রদানের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভূমি সম্পর্কিত সকল সেবা এক জায়গা থেকে নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ চালুর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে শতভাগ মিউটেশন (নামজারী) সম্পন্ন করার মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আমি চাই, মানুষ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হন। মানুষ যেন ভোগান্তিতে না পড়েন।

তিনি আরও বলেন, ভূমি সেবা মানুষের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে অনলাইনে খতিয়ান সংগ্রহ, উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর, অনলাইন ডাটাবেজসহ ভূমিসেবার সকল ক্ষেত্রে অধিকতর ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

ই-মিউটেশন বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ ভূমি মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের ‘ইউনাইটেড নেশন্স পাবলিক সার্ভিস এ্যাওয়ার্ড-২০২০’ অর্জন করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের এ পুরস্কার বাংলাদেশে এই প্রথম। এ স্বীকৃতি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয়কে আরও গতিশীল করেছে। বিশ্ব দরবারে আমাদের মর্যাদা আরও সুসংহত হয়েছে।

দেশের চলমান উন্নয়নের অব্যাহত ধারা ও বিএনপির রাজনীতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ সেবা পায়, দেশের উন্নতি ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। আমরা যখন সরকারে আসি তখন আন্তরিকতা, আদর্শ, নীতি ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করি। কারণ এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগ।

তিনি আরও বলেন, যারা উড়ে এসে জড়ে বসে, তারা দেশের উন্নয়ন না করে নিজের পকেট ভরে। জনগণের জন্য তাদের দায়বদ্ধতা থাকে না। এটা হলো বাস্তবতা। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা যখন শুরু হল, তখন থেকে দেশের ভাবমূর্তি বিদেশে নষ্ট হতে শুরু করে। বাংলাদেশ নাম শুনলে মনে করতো দুর্ভিক্ষ, ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করেছি।

অনুষ্ঠানে ভূমি ভবন ছাড়াও ৯৯৫টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস এবং ১২৯টি উপজেলা ভূমি অফিস, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ কার্যক্রম এবং ভূমি ডাটা ব্যাংকের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত ভূমি সংস্কার বোর্ড, ভূমি আপিল বোর্ড এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ঢাকা শহরের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থিত। এতে ভূমি সংক্রান্ত সেবা পেতে গ্রাহকদের ভোগান্তিতে পড়তে হতো। জনগণের এই ভোগান্তি লাগবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ছাড়াও ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যালয় ও একটি আধুনিক রেকর্ড রুমের যাবতীয় সেবা একই ভবন থেকে প্রদানের উদ্দেশ্যে সরকার ভূমি ভবন কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়। ভূমি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অফিসগুলো তেজগাঁওয়ের ভূমি ভবন কমপ্লেক্স থেকে তাদের নিজ নিজ সেবা প্রদান করবে।

উদ্বোধন করা নতুন এই কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, বঙ্গবন্ধু কর্নার ও কর্মজীবী নারীদের সুবিধার্থে একটি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৮৪ কোটি টাকা। ১৩ তলা বিশিষ্ট নির্মিত ভবনটির আয়তন প্রায় ৩২ হাজার ২ বর্গ মিটার।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সেবাদানকারী সকল দপ্তর ও সংস্থাকে একই ছাদের নিচে এক ভবনে এনে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘এক জায়গায় সকল সেবা’ প্রদানের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ভূমি ভবন কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।

 

এবি/এসএন

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:২৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।