• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
অযোগ্যতার দায় কার, প্রশ্ন নিয়োগবঞ্চিত ফার্স্টক্লাসপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ময়মনসিংহের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়েরই ফার্স্টক্লাস পাওয়া শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে চেয়ে পরীক্ষায় অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে! তখন মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দেয়া সার্টিফিকেট জমা দিয়ে, সময় ফিরিয়ে নিয়ে নিজেকে যোগ্য করার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। কারণ ঐখানে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশি যোগ্য হওয়া যায়। আনিসুর রহমান নামে নিয়োগবঞ্চিত এক প্রার্থী সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমন অভিযোগ করেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনবিদ্যা বিভাগ থেকে ফার্স্টক্লাসপ্রাপ্ত সাবেক ছাত্র। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন।

ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আনিসুর রহমান বলেন, ২৯ আগস্ট জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হল সুপারভাইজার পদে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন তিনি। পরে ৩১ আগস্ট মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। তার রোল নম্বর ছিল- এইচএস-৪৮।

আনিসুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজন হল সুপার এবং দুইজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। সে আলোকে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে হল সুপার পদের বিপরীতে প্রাথমিকভাবে সাতজনকে এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদের বিপরীতে প্রাথমিকভাবে ২২ জনকে নির্বাচিত করে কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক বাছাইয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রায় ডজনখানেক প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হন। অথচ মৌখিক পরীক্ষায় তাদের অধিকাংশই অযোগ্য বিবেচিত হন।

আনিসুর রহমানের ভাষ্য, ‘মৌখিক পরীক্ষা শেষে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রার্থীকে পরীক্ষা কেমন হয়েছে জানতে চেয়েছিলাম। মৌখিক পরীক্ষা ভালো হয়নি বলে জানান ওই প্রার্থী। কিন্তু আমার ভাইভা অনেক ভালো হয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ জানতে পারলাম হল সুপারভাইজার পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সেই প্রার্থী। কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হিসেবে আমি লজ্জিত। আমাকে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বঞ্চিত করেছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা নজরুলীয়ান (জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী), আপনাদের দেয়া শিক্ষাতেই, আপনাদের দেয়া সময়েই আমরা উচ্চ শিক্ষিত হয়েছি। আপনারাই আমাদের দীর্ঘ পাঁচ বছর নিরলস পরিশ্রম করে বিভিন্ন জায়গার জন্য যোগ্য করে তুলেছেন। কিন্তু আপনারাই যদি নিজ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সময় আমাদের অযোগ্য বলে বিবেচনা করেন, তাহলে এই অযোগ্যতা মূলত কাদের? আমার কাছে মনে হয়েছে, চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নজরুলীয়ান হিসেবে আমি আমার প্রাপ্যতা হারিয়েছি। আমি অধিকার বঞ্চিত হয়েছি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্স্টক্লাস রেজাল্ট অর্জন করেছি। আমার লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষাও ভালো হয়েছিল। নিয়োগ প্রক্রিয়া পুনঃবিবেচনা করে নিয়োগে স্বচ্ছতা আনার দাবি জানাই।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে আয়োজিত জাহানারা মুক্তা ও আনিসুর রহমান কর্তৃক সংবাদ-সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ ও নিয়োগবোর্ড নিয়ে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও উপাচার্যের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে। এসএম হাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর দে এর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করতে পরীক্ষা দিনই কেন্দ্রের বাইরে ‘লাইভ অনুষ্ঠান’-সহ বিশেষ প্রার্থীর ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে নিয়োগে অর্থ লেনদন ও প্রার্থীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এটি দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের অংশ।

সংবাদ সম্মেলনে আনিসুর রহমান অভিযোগ করেন, তিন জন ভাইভা বোর্ডে প্রবেশ করল তাদের প্রত্যেককে এক মিনিট এর উপরে রাখেনি, মানে তাদের ভাইভা নেইনি। আমি ১২-১৫ মিনিট ভাইভা বোর্ডে ছিলাম। দু একটি প্রশ্ন ছাড়া সকল প্রশ্নের উত্তর সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলাম। কিন্তু আমার নিয়োগ হয়নি। হয়েছে যিনি ভাইভা ভালো দেননি তার।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পরিচালক (জনসংযোগ) এসএম হাফিজুর রহমান দৈনিক ‘আমরাই বাংলাদেশ’-কে বলেন, মৌখিক পরীক্ষায় যোগ্যপার্থী বাছাইয়ে পাঁচ বা পনের মিনিট অংশ নেয়া কোনো বিষয় নয়। নিজেকে যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য এক মিনিটই যথেষ্ট।

২৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:১৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।