• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশি-বিদেশী পাইলট বাড়ছে, কমছে কর্মক্ষেত্র

দেশি-বিদেশী পাইলট বাড়ছে, কমছে কর্মক্ষেত্র

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

দেশে সরকারি বেসরকারি অন্তত পাঁচটি পাইলট প্রশিক্ষণ সেন্টার রয়েছে। এসব প্রশিক্ষণ সেন্টার থেকে প্রতি বছর সবমিলিয়ে কয়েকশ পাইলট ও বিমান ক্রু বের হচ্ছে। নারী, পুরুষ এমনকি বয়স্করাও প্রশিক্ষণ শেষে বেসরকারি বিমান সংস্থায় চাকরি করছেন। তবে বেশির ভাগ প্রশিক্ষণার্থী পাইলট হওয়ার পরও আকাশে উড়াল দিতে পারছেন না। ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, আরব আমিরাত ও তুরস্কের ফ্লাইং একাডেমির প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে পেরে উঠছেন না বাংলাদেশীরা। যে কারণে অনেকের আকাশে উড়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে।

জানা গেছে, দেশে সরকারি পাইলট ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। রয়েছে তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে পাইলট হওয়া যায়। এসব প্রতিষ্ঠানে বছরে দুইবার ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠান ভেদে প্রতিটি ব্যাচে ৪০ থেকে ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। তবে সরকারি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারে প্রতি ব্যাচে দুটি কোর্সের অধীন (দুই কোর্সে ১৬ জন, বছরে দুটি ব্যাচে) মোট ৬৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সরকারি ট্রেনিং সেন্টারের কোর্সের মেয়াদ ৩ বছর।

এ ছাড়া বেসরকারি ফ্লাইং সংস্থা এরাইরাং ফ্লাইং একাডেমি ও গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি সংস্থাগুলোতে আড়াই বছরে পাইলট কোর্স সম্পন্ন করা হয়। প্রতিটি কোর্সে সীমিত আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বছরের জানুয়ারি ও জুন-জুলাইয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম চলে। এসব প্রতিষ্ঠানে পাইলট হিসেবে কোর্স করার জন্য ৩৩ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়।

জানা গেছে, সরকারি ফ্লাইং একাডেমি বা ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অধিকাংশ পাইলট সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন ফ্লাইং সংস্থায় যোগ দেন। তবে বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের পাইলট হতে হলে সরকারি সংস্থা থেকে অনুমোদন বা প্রত্যয়ণপত্র নিতে হয়। বেসামরিক বিমান চালানোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ‘সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’ এর একটি তথ্য বলছে, প্রতি বছর দেশে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকশ পাইলট বের হচ্ছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের সকলেই যোগ্য ও মেধাবী। কিন্তু পাইলটদের চাকরির ক্ষেত্র বাংলাদেশে এখনো ততটা সম্প্রসারিত হয়নি। বরং প্রতি বছর বাংলাদেশের পাইলটদের নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন পার করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি’র তথ্য বলছে, পাইলট প্রশিক্ষণের প্রথম ধাপে অর্থাৎ গ্রাউন্ড কোর্সে সাধারণত শেখানো হয় বিমানের কারিগরি, এয়ার ল, এয়ারক্রাফট জেনারেল নলেজ, ফ্লাইট পারফরম্যান্স অ্যান্ড প্লানিং, হিউম্যান পারফরম্যান্স অ্যান্ড লিমিটেশন, ন্যাভিগেশন, অপারেশনাল প্রসিডিউর ও প্রিন্সিপাল অব ফ্লাইট। দ্বিতীয় ধাপে সিভিল অ্যাভিয়েশনে স্টুডেন্ট পাইলট লাইসেন্সের (এসপিএল) আবেদন করতে হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (সিএএবি) একটি পরীক্ষা নেয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে শিক্ষার্থী পাইলট লাইসেন্স (এসপিএল) এর লাইসেন্সের মাধ্যমে ৪০ থেকে ৫০ ঘণ্টা বিমান চালনার অনুমতি পাওয়া যায়।

এরপর প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্সের (পিপিএল) জন্য আবেদন করতে হয়। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। তারপর পিপিএল মিলবে। আর যেকোনো এয়ারলাইন্সে চাকরি করার জন্য কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (সিপিএল) থাকতে হবে। এ লাইসেন্স পেতে কমপক্ষে দেড়শ থেকে ২০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা দি ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্রতি বছর প্রায় ১৭ হাজার নতুন পাইলট প্রয়োজন। কিন্তু প্রতি বছর বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠিত বিদেশী ফ্লাইং একাডেমি থেকে লক্ষাধিক পাইলট সনদ নিয়ে বের হচ্ছেন। যে কারণে পাইলট পেশায় স্থায়ী হওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৩পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।