• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোগ নিরাময়ে প্রকৃতির সেরা উপাদান অর্জুনের ছাল

রোগ নিরাময়ে প্রকৃতির সেরা উপাদান অর্জুনের ছাল

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত উপাদানের মধ্যে অন্যতম অর্জুন গাছের ছাল বা বাকল। সুপ্রাচীন কাল থেকে নানা রোগ নিরাময়ে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আবহমান গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষ এখনো রোগ নিরাময়ে অর্জুনের ছাল খেয়ে থাকেন।

এখন বাণিজ্যিক ও সরকারিভাবেও অর্জুন গাছ লাগানো হচ্ছে। ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে অর্জুনের ছাল বেশ মূল্যবান। প্রিয় পাঠক, চলুন জেনে নিই অর্জুনের গুণাগুণ সম্পর্কে-

পরিচয় ও গুণাগুণ

অর্জুনের বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia arjuna। এটি টারমিনালিয়াগণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এর ইংরেজি নাম arjun। অর্জুন গাছের ছাল, পাতা ও ফল ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অর্জুনের বাকল থেকে আহরিত ট্যানিন চামড়ায় ব্যবহার করা হয়। এই টানিন মুখ, জিহ্বা ও মাড়ির প্রদাহ নিরাময় করে। অর্জুনের বাকল থেকে হৃদরোগের ওষুধ, পাতার রস আমাশয় রোগের ওষুধ বানানোতে ব্যবহার হয়।

উপকারিতা

শ্বাসকষ্ট দূর করে : যারা অ্যাজমাজনিত শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, তারা অর্জুন গাছের ছাল রস করে পান করুন। এছাড়া অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়ো করে দুধে মিশিয়ে পান করলেও উপকার পাবেন।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : অর্জুন গাছের ছাল হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এটি কার্ডিয়াক মাসল শক্তিশালী করে। হার্টের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখে। করোনারি হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়। অর্জুন গাছের ছাল সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন ওই ছাল বেটে দুধে মিশিয়ে খান।

ত্বকের পরিচর্যায় : অর্জুনের ছাল ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এটি ত্বকের কোষ মজবুত করে। অর্জুন গাছের ছাল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ব্রণের ওপর লাগালে ব্রণ কমে যায়। একই পদ্ধতিতে অর্জুন ছাল ব্যবহার করলে মুখের মেছতাও দূর হয়।

ক্ষত শুকাতে সহায়তা করে : যারা দীর্ঘদিনে খোস পাঁচড়া ও ক্ষত নিয়ে ভুগছেন, তারা অর্জুন গাছের ছাল রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে তা গুঁড়ো করে পানিতে মিশিয়ে পান করুন। টানা দুই সপ্তাহ এটি খেলে আপনার ক্ষত নিরাময় হবে।

আমাশয় দূর করে : পুরনো আমাশয়ে ভুগছেন? নাভিতে ব্যথা করে? ক্ষুধামন্দা? অর্জুন গাছের ছাল ছাগলের দুধে মিশিয়ে খান। আমাশয় দূর হবে।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে : হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে চাইলে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হালকা গরম পানিতে অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়ো মিশিয়ে খেয়ে নিন। এটি আপনার হজম ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে।

দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষা : দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায় অর্জুনের ছাল ব্যবহারের প্রচলন সুপ্রাচীন। অর্জুন ছাল গুঁড়া করে মাজনের মতো ব্যবহার করলে দাঁত ও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া ও গোড়া ফুলে যাওয়া বন্ধ হয়।

যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে : যৌন সক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে দাম্পত্য জীবনে অনেকেই অসুখী। তারা চাইলে নিয়মিত অর্জুনের ছালের গুঁড়া গরম পানিতে মিশিয়ে সেই পানি সেঁকে নিয়ে তাতে ১ চামচ শ্বেত চন্দন মিশিয়ে পান করতে পারেন। এটি খুব দ্রুত যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

কাশি নিরাময় : কোনোভাবেই কাশি আপনার পিছু ছাড়ছে না? তাহলে অর্জুন গাছের ছাল বাসক পাতার রসে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর তা শুকিয়ে গুঁড়ো করে রেখে দিন। এই গুঁড়া মুধ অথবা মিসরির সঙ্গে মিশিয়ে খান। উপকার পাবেন।

লিভার সুস্থ রাখে : লিভার সুস্থ তো শরীর ঠিক। তাই লিভার ভালো রাখতে হলে অর্জুন গাছের ছালের গুঁড়ো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সেই পানি পরদিন পান করুন। লিভারসিরোসিস সেরে উঠবে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে : গবেষকরা বলছেন, অর্জুন গাছের ছালে আছে গ্যালিক অ্যাসিড ও লুটেনোনিন। এই দুটি উপাদান ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি ঠেকিয়ে দেয়। তাই নিয়মিত দুধের সঙ্গে অর্জুন গাছের ছাল গুঁড়ো করে দুধে মিশিয়ে খেয়ে নিন। উপকার পাবেন।

তথ্যসূত্র : আনন্দবাজার, হেলথ টিপস বিডি, কৃষি তথ্য সার্ভিস (বিডি) ও উইকিপিডিয়া।

 

এবি/এসএন

০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:০৫পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।