• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

সুষ্ঠু মানসিকতার বিপর্যয় ও হিরো আলমদের কথিত উত্থান

সুষ্ঠু মানসিকতার বিপর্যয় ও হিরো আলমদের কথিত উত্থান

ফাইল ছবি

অ্যাডভোকেট আব্দে ওয়াহিদ

সময়ের আলোচিত সমালোচিত চরিত্র আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। নায়ক থেকে কবি, কবি থেকে রাজনীতিবিদ কখনো বা গায়ক, সব কিছুতেই যেন তার পদচারণা থাকা চায়। সব্যসাচী হওয়ার অলীক ইচ্ছেশক্তি বা সব গুণাবলীতে নিজেকে গুণান্বিত করাকে তিনি হয়তো হাতের মোয়া ভাবেন। অথবা বিশেষ গুণসম্পন্ন হওয়ার ব্যর্থ বাসনা হিরো আলমের কাছে নিছক খামখেয়ালীপনা।

তিনি হয়তো মনে করতে পারেন, কবি হতে হলে কিংবা গায়ক বা রাজনীতিবীদ হতে হলে যোগ্যতার কোন বালাই কিংবা শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। হিরো আলমের ধারণা, তিনি যখন যা চাইবেন, সেটাতেই তিনি বাজিমাত করবেন। দিবাস্বপ্নে বিভোর এই মানুষটি আমাদের হাস্যরসাত্মক জীবনাচারের কারণেই হয়তো সস্তা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।

কিন্তু হিরো আলমের নানাবিধ কর্মকাণ্ড প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ ঘটনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। সিগারেট বিক্রেতা থেকে তিনি নিজেকে কথিত নায়ক বানিয়েছেন। কখনো কবি, রাজনীতিবীদ বা গায়ক হিসেবেও নিজেকে তুলে ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। এমনকি জনপ্রতিনিধি হতে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের দুটি আসনে প্রার্থীতাও করেছেন তিনি। যদিও একটি আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে হিরো আলমের। অন্যটিতে অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন, প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে।

এমনকি হিরো আলম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে তার সাথে ভোটের প্রার্থীতা করার মতো মন্তব্যও করেছেন। আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জনাব ওবায়দুল কাদের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। তিনি একজন আপাদমস্তক রাজনীতিক। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে ওবায়দুল কাদের। তিনি একাধারে তিন তিন বারের আওয়ামী লীগের সম্পাদক। ছাত্রলীগের টানা দুইবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি জীবনের দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক নিপীড়ন, কারাবরণ ও হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। নোয়াখালীর মানুষ তাকে চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন।

ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন কৃতিত্বের সাথে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বর্ণাঢ্য এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ওবায়দুল কাদের। তিনি গোটা দেশের মানুষের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়। নিদারুণ কর্ম সাধনে, সুন্দর বাচনিক প্রকাশ এবং সুদর্শন উপস্থাপনের মাধ্যমে ওবায়দুল কাদের বিশেষভাবে জনগণের কাছে আজ প্রিয়। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে পাল্টে দিয়েছেন সড়কের আদি ইতিহাস। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ হিরো আলমদের মতো ভার্চুয়াল জনপ্রিয়তা পাওয়া হাসির খোরাক যোগানো মানুষও শিষ্ঠাচার ভুলে প্রলাপ করছেন।

হিরো আলমের কথিত জনপ্রিয়তা মূলত আমাদের ব্যক্তিত্বের ও রুচিবোধের অধঃপতনেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে না। বরং, দেশের বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন শ্রেণির (কবি, সাহিত্যিক, গায়ক, রাজনীতিবীদ) কীর্তিমান ব্যক্তিত্বদের অর্জন ও গুণকে খাটো করছে। হিরো আলমরা জ্ঞানী-গুণী চরিত্রগুলো হাসির পাত্রে পরিণত করার ঘৃণ্য খেলায় মেতেছে আমাদের মানসিকতার বিপর্যয়ের সুযোগ নিয়ে। আমাদের মানসিক বিপর্যয় না হলে তাদের এই উত্থান হতো না। তাদের থামাতে হবে। হিরো আলমের বর্তমান মন্তব্য ও কর্মকাণ্ড শুধু ঔদ্ধত্যের প্রকাশই নয়, এগুলো সুষ্ঠু সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গে বেমানান। বলতে পারি, হিরো আলম বা তার মতো অন্যরা দেশ ও দেশের বিশেষ গুণসম্পন্নদের উপহাসের পাত্র বানানোর অপকর্মে নেমেছে। যা সুস্থ মানসিকতা ও রুচিবোধ দিয়েই রুখতে হবে।

 

লেখক:

অ্যাডভোকেট আব্দে ওয়াহিদ

আইনজীবী

আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪১এএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।