• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

৫০ বছরেও কাঁচা সড়কে পড়েনি ইট-পাথর, অর্ধলাখ মানুষের ভোগান্তি

৫০ বছরেও কাঁচা সড়কে পড়েনি ইট-পাথর, অর্ধলাখ মানুষের ভোগান্তি

চলাচলের অনুপযোগী জয়ধরকান্দি-মহিষবেড় কাঁচা রাস্তা।

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় ৫০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র জয়ধরকান্দি-কুন্ডা কাঁচা রাস্তা এখনো পাকা হয়নি। এতে নাসিরনগর উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম ও নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের ৫টি গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। চলাচলের অনুপযোগী প্রায় ৬ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটি এখন এই জনপদের বিড়ম্বনার আরেক নাম।

রাস্তাটি দিয়ে শুকনো মৌসুমে সরাইল উপজেলার জয়ধরকান্দি, তেলিকান্দি, করিমপুর, কাসেমপুর এবং নাসিরনগর উপজেলার মহিষবেড়, মুহাম্মদপুর, শিমুলকান্দি বাগি, কদরকান্দির লোকজন চলাচল করে। বছরের প্রায় ৭ মাস ওই এলাকার বাসিন্দারা নৌকায় চলাচল করে। রাস্তাটি দিয়ে চলাচলের কোনো পরিবেশ থাকেনা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শুকনো মৌসুমে রাস্তাটি দেখতে খেতের বড় আইলের মতো দেখায়। বৃষ্টি হলে পুরো রাস্তাটি কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। এতে এলাকাবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন। শিশু, বৃদ্ধ, প্রসূতি নারী, অসুস্থ রোগী, স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও মুসল্লিদের প্রায়ই কাদাপানিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি পাকা করণের দাবি জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী। কিন্তু জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এতে সাড়া দিচ্ছে না। রাস্তাটি সরাইল উপজেলার পাকশিমুল এলাকার জয়ধরকান্দি গ্রাম থেকে শুরু হয়ে মহিষবেড় হয়ে নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডায় শেষ হয়ে সরাইল- নাসিরনগর হাইওয়ে সড়কে মিলিত হয়েছে।

এ কাঁচা পথ পড়ি দিয়ে ওই ১০ গ্রামের মানুষ উপজেলা সদর, থানা ও আদালতসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে করে। জয়ধরকান্দি গ্রামের জিয়াসমিন আক্তার (২৫) বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হলেও আমাদের এলাকার উন্নয়ন হয়নি। আমাদের এলাকা অবহেলিত থেকে গেছে। সরকার দেশে অনেক উন্নয়ন করলেও এ রাস্তাটি পাকা করণের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।’

মহিষবেড় গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জিল্লুর রহমান (৫০) জানান, চরম ভোগান্তির শিকার হয়ে এখানকার লোকজনের যাতায়াত করতে হয়। বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বেশি। এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের জামাকাপড় ও বই খাতায় কাঁদা মেখে যায়। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারে সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

স্থানীয় জয়ধরকান্দি আইডিয়াল একাডেমির সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কাদির বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫২ বছর পর থেকেই একটি রাস্তার অভাবে আমরা দুর্ভোগে ভুগছি। একটি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। যা দিয়ে বছরে পাঁচ মাস সিএসজি-অটো রিকশা কোনো রকমে চলাচল করে। সামান্য বৃষ্টি হলেই চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বাকি সাত মাস কাঁচা রাস্তাটি বর্ষার পানিতে ডুবে থাকে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিনিয়তই মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমরা বছরের পর বছর একটি রাস্তার অপেক্ষায় আছি। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা বারবার শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। আজ অবধি জয়ধরকান্দি-মহিষবেড় রাস্তাটি হয়নি।

জয়ধরকান্দি আলীম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. শাহিন আহমেদ (১৮) বলেন, রাস্তা না থাকায় আমরা সময় মতো ক্লাস করতে পারি না। আসা-যাওয়া করতে প্রতিদিন আমাদেরকে অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হয়। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন জয়ধরকান্দি-মহিষবেড় রাস্তাটি ১২ মাস চলাচলের উপযোগী করে দিতে মর্জি হয়।'

নাসিরনগর উপজেলা চেয়ারম্যান রাফি উদ্দিন আহম্মদ জানান, এই রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে তৎপরতা চালমান আছে। স্থানীয় সাংসদ এবং ডিসির সাথে এই নিয়ে কথা হয়েছে।

সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, জয়ধরকান্দি সরাইল উপজেলার সবচেয়ে বৃহৎ গ্রাম। প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস এ গ্রামে। সরাইল ও নাসিনগর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এই রাস্তাটি দিয়ে চলাফেরা করে। রাস্তাটির বিষয়ে সরাইল ও নাসিনগর আসনের দুই এমপি মহোদয়ের সাথে শীঘ্রই কথা বলবো।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির সরাইল উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী মো.আব্দুর রহিম মিয়া জানান, রাস্তাটির এমন বেহাল অবস্থার কথা তার জানা নেই। তবে তিনি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:১৫পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।