• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

রকমারি পুষ্টিগুণের অনন্য উপাদান ‘কারি পাতা’

রকমারি পুষ্টিগুণের অনন্য উপাদান ‘কারি পাতা’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

রান্নায় স্বাদ বাড়াতে আমরা প্রতিনিয়ত কত কিছুই না ব্যবহার করছি। নানা পদের মশলার পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদানও এখন রান্নার অনুসঙ্গ। এরকমই এক অনন্য অনুসঙ্গের নাম ‘কারি পাতা’। ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তানসহ বাংলাদেশেও এখন কারি পাতা খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছে। এই পাতা নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।

জাপানি বিজ্ঞানিদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কারি পাতায় থাকা ‘কার্বাজল অ্যাসকালোয়েড’ নামক উপাদান ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে ব্যাপক কার্যকরী। এ ছাড়া এটা কলোরেকটাল, লিউকেমিয়া এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে কারি পাতায়-

পরিচয়:
কারি পাতা কোথাও কোথাও বারসুঙ্গা নামে পরিচিত। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Murraya koenigii। যা মূলত Rutaceae গোত্রের একটি ক্রান্তীয় বা উপক্রান্তীয় উদ্ভিদ। কারিপাতা ভারত এবং শ্রীলঙ্কার আদি আঞ্চলিক উদ্ভিদ।
এই পাতা ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে অনেক ধরনের রান্নায় ব্যবহার করা হয়। প্রায়শই ঝোল জাতীয় রান্নায় ব্যবহার করা হয় বলে সাধারণত একে 'কারি পাতা' বলা হয়। যদিও অধিকাংশ ভারতীয় ভাষায় এর নাম 'মিষ্টি নিম পাতা'।

পুষ্টি উপাদান:
জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন, মেডিনেট, ওয়েবএমডি এবং উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, ক্যালরি, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, জিংকসহ নানা ধরণের খনিজ উপাদানে ভরপুর কারি পাতা। এটি সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

প্রতি ১০০ গ্রাম কারি পাতায় রয়েছে-

ক্যালরি- ৯৭ কিলোক্যালরি,
কার্বোহাইড্রেট- ১৩.৩ গ্রাম,
প্রোটিন- ৭.৯ গ্রাম,
ফ্যাট- ১.৩ গ্রাম,
ফোলেট- ৯৪ আইইউ,
নিয়াসিন- ২.৩ মিলিগ্রাম,
রিবোফ্লাভিন- ০.২১ মিলিগ্রাম,
থিয়ামিন- ০.০৮ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন এ- ১১৩০ আইইউ,
ভিটামিন সি- ৮ মিলিগ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ৮২০ মিলিগ্রাম,
কপার- ০.২১ মিলিগ্রাম,
আয়রন- ৫.১০ মিলিগ্রাম,
ম্যাগনেসিয়াম- ২২০ মিলিগ্রাম এবং
ফসফরাস- ৫৭ মিলিগ্রাম।

রাসায়নিক উপাদান: গবেষকরা বলছেন, বিভিন্ন খনিজ উপাদান ও ভিটামিনের পাশাপাশি কারি পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত রাসায়নিক উপাদান। যেমন এতে রয়েছে, মাহানিম্বিন (Mahanimbine), গ্রিনিম্বিন (girinimbine), কোয়েনিম্বিন (koenimbine), আইসোমাহানিন (isomahanine), মাহানিন (mahanine), ইন্ডিকোল্যাক্টোন (Indicolactone) এবং ২-মিথোক্সি-৩-মিথাইল-কার্বাজল (2-methoxy-3-methyl-carbazole)।

উপকারিতা:
হেলথ লাইন, ওয়েবএমডি, নেটমেডস ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে কারি পাতার বিভিন্ন উপকারী দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন: কারি পাতা-

দৃষ্টি শক্তির উন্নতি ঘটায়: কারি পাতায় রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ এবং আরও নানাবিধ মিনারেলস। এসব উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর দেহের ভিতরে এমন কিছু রদবদল ঘটায়, ফলে চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। এটি নিয়মিত খেলে ড্রাই আই এবং দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও দূর হয়।

হজম ক্ষমতা বাড়ায়: প্রাচীন আয়ুর্বেদিক পুঁথির বরাত দিয়ে নেটমেডস জানিয়েছে, কারি পাতায় থাকা ল্যাক্সেটিভ প্রপাটিজ হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। একই সঙ্গে এটি দেহের ক্ষতিকর টক্সিক উপাদনগুলো বের করে দেয়। ফলে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি মেটায়: এই উপাদানটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই সুস্থ শরীরের জন্য নিয়মিত কারি পাতা খেতে পারেন।

পেটের রোগ নিরাময় করে: যারা পেটের নানা সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত কিছুদিন কারি পাতা খেতে পারেন। এটি বদহজম, পেট ফাঁপা ও পেটের অন্যান্য সমস্যা দূর করে। এটি ডায়ারিয়ার প্রকোপ কমাতে প্রাকৃতিকভাবেই কার্যকরী। কারণ এতে রয়েছে কার্বেজল অ্যালকালয়েড নামক উপাদান।

লিভার ভালো রাখে: এই প্রকৃতিক উপাদানটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ক্ষতিকর টক্সিনের হাত থেকে লিভারকে রক্ষা করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে লিভারের উপর অ্যালকোহলের কুপ্রভাবও কমিয়ে দেয়।

ত্বকের সংক্রমণ রোধ করে: আপনি কি জানেন, কারি পাতায় থাকা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান ত্বকের ইনফেকশন কমাতে সহায়তা করে?

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: দেহে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে এবং ইনসুলিনের উৎপাদন কমে গেলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু কারি পাতা দেহের শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং ইনসুলিনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। গবেষকরা বলছেন, কারি পাতায় থাকা ফাইবার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: কারি পাতায় এমন অনেক উপাদান রয়েছে, যা রক্তে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। আর দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, নেটমেডস ও উইকিপিডিয়া

 

এবি/এসএন

২৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৮:৪৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।