• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখে বাহারি ‘চেরি’

ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখে বাহারি ‘চেরি’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে চেরি ফল। পৃথিবীতে প্রায় ১২০০ ধরনের চেরি ফল পাওয়া যায়। তবে আমাদের দেশে প্রধানত লালচে বা খয়েরি রঙের চেরি বেশি পাওয়া যায়। এটি পুষ্টিমানে ও গুণাগুণে ভরপুর একটি ফল। আকারে ছোট হলেও চেরি ফলের ভেষজগুণাগুণ আকাশছোঁয়া। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চেরি চাষ হচ্ছে।

কথিত আছে, প্রত্নতাত্ত্বিকগণ ইউরোপ ও এশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রাগৈতিহাসিক গুহাগুলোতে চেরি ফলের ফসিলের সন্ধান পেয়েছিলেন। তবে চেরি ফলের প্রথম লিখিত বর্ণনা পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ বছর আগে, গ্রিক লেখক থিওফ্রাস্টাসের লেখা ‘উদ্ভিদের ইতিহাস’ বইতে।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে চেরি ফলে-

পরিচয়:
চেরি হল "প্রুনাস" গণের অন্তর্ভুক্ত এক প্রকার ফল। বাণিজ্যিকভাবে যে চেরির জাত চাষ করা হয় তা মূলত Prunus avium। তবে বুনো চেরি ফসলি মাঠে চাষের অনুপযোগী। যদিও ব্রিটিশ দীপপুঞ্জতে Prunus avium কে বুনো চেরি বলা হয়। চেরির অনেক জাত "কেরাসাস (Cerasus)" উপপ্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এই উপপ্রজাতি উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে বেশি পাওয়া যায়। তাছাড়াও চেরির বহুল প্রচলিত দুটি প্রজাতি আমেরিকায় ও তিনটি প্রজাতি ইউরোপের দেশগুলোতে পাওয়া যায়। বাকিগুলো এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়।

পুষ্টিগুণ:
জনপ্রিয় সাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, চেরি ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ফসফরাস, ফাইবার ও অন্যান্য খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম চেরি ফলে রয়েছে-
ক্যালরি- ৯৭ কিলোক্যালরি,
প্রোটিন- ২ গ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট- ২৫ গ্রাম,
খাদ্যআঁশ- ৩ গ্রাম,
ভিটামিন সি- ১৮ শতাংশ,
পটাসিয়াম- ১০ শতাংশ,
কপার- ৫ শতাংশ এবং
ম্যাঙ্গানিজ- ৫ শতাংশ।

উপকারিতা:

হেলথ লাইন, হেলথ বেনিফিট টাইমস ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, চেরি ফল-

হৃদযন্ত্র ভালো রাখে: এই ফলে রয়েছে কম ক্যালরি। এটি রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। মিষ্টি চেরি পলিফেনলস ও পটাশিয়ামের ভালো উৎস। এ ছাড়া এই ফল দেহের অতিরিক্ত সোডিয়াম অপসারণ করে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ত্বক ও চুল উন্নত করে: ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই-সহ অনেক পদের খাদ্যপ্রাণে ভরপুর চেরি। এ ছাড়া এতে রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পলিফেনলস উপাদান। পাশাপাশি ভিটামিন ই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। এতে থাকা ভিটামিন বি রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। ফলে ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত হয়। নিয়মিত চেরি খেলে চেহারার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং চুল পড়া রোধ করে। এটি লাবণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে।

ঘুমের ঘাটতি দূর করে: চেরিতে রয়েছে মেলাটোনিনের মতো উপাদান। যা মূলত চিন্তা ও উদ্বেগ দূর করে মনে প্রশান্তি আনে। নিয়মিত চেরি খেলে রাতে ভালো ঘুম হয়, শরীর মন সতেজ ও প্রফুল্ল থাকে।

হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা ও গেঁটে বাত দূর করে: রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে গেঁটে বাত বা হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা হয়। এই কষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে চেরি খেতে পারেন। এটি নিয়মিত খেলে গেঁটে বাত নিরাময় হয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: যেসব ফলের গ্লাইসেমিক সূচক ৫৫-এর নিচে, চিকিৎসকরা সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের সেসব ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আপনি কি জানেন, চেরির জি আই ২২? কাজেই চেরি খেয়ে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

গর্ভবতীদের জন্য সহায়ক: চেরি ফল প্লাসেন্টা ও ভ্রূণের মধ্যে রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়াও এটি ঠান্ডা ও ফুসকুড়ি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। ফলে এটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।

হজমশক্তি উন্নত করে: হজমশক্তি যার যত ভালো, তিনি তত সুস্থ। তাই হজমশক্তি বাড়াতে খেতে পারেন চেরি ফল। এতে থাকা খাদ্যআঁশ হজমশক্তি বৃদ্ধিতে বুস্টার হিসেবে কাজ করে।

পেটের চর্বি কমায়: আপনি যদি পেটের বাড়তি চর্বি কমাতে চান, তাহলে খেতে পারেন চেরি ফল। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন সি, পর্যাপ্ত খাদ্যআঁশ ও ক্যালরি। কিন্তু এতে চর্বি ও কার্বোহাইড্রেট খুবই কম পরিমাণে রয়েছে।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: যারা স্মৃতিশক্তির দুর্বলতায় ভুগছেন, তারা খেতে পারেন চেরি ফল। এটি আলঝেইমারের প্রকোপ কমায় এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ব্যাপক সহায়তা করে।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, হেলথ লাইন ও হেলথ বেনিফিট টাইমস

 

এবি/এসএন

২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:৪৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।