• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইনডোর প্ল্যান্টস: নন্দন গৃহে নির্মলতা

ইনডোর প্ল্যান্টস: নন্দন গৃহে নির্মলতা

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

নান্দনিক বসবাসের অন্যতম অনুসঙ্গ ইনডোর প্ল্যান্টস। সখের বাসা মনের মতো করে সাজাতে কার না ভালো লাগে? প্রিয় ঘরের প্রতিটি কোনায় কোনায় যদি থাকে বাহারি দৃষ্টিনন্দন গাছের টব, তবে তা মানসিক প্রশান্তির জন্য যথেষ্ট। শহর কিংবা গ্রাম, প্রিয় আবাসস্থলে এখন ইনডোর প্ল্যান্ট’স এর দিকে ঝুঁকছেন সবাই। পরিপাটি করে ঘর সাজানোর সাথে সাথে ঘরে থাকা এসব প্ল্যান্টস ঘরের প্রাকৃতিক পরিবেশও বজায় রাখে।

তবে এসব ইনডোর প্ল্যান্টস নিয়ে ঝামেলারও কমতি নেই। নিয়মিত পরিচর্যার পাশাপাশি ঘরের নির্মল পরিবেশ বজায় রাখতে সঠিক ইনডোর প্ল্যান্টস বাছাই করা জরুরি। প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক আদ্যোপান্ত-

জনপ্রিয় যেসব ইনডোর প্ল্যান্টস

জারবেরা : বীজ থেকে এই গাছ আস্তে আস্তে বড় হয়। ভালো করে যত্ন নিলে এই গাছ ২/৩ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। কিন্তু জারবেরা একটু বেশি রোদ পছন্দ করে। তাই ঘরের যেখানে রোদ ভালো আসে সেখানে এই গাছ রাখতে হবে। এছাড়া নিয়মিত পানিও দিতে হবে।

পাম গাছ : অন্দরসজ্জায় পাম গাছের জনপ্রিয়তা সবার ওপরে। পাম গাছের পরিচর্যা বেশি করা লাগে না। তাই, অন্দরসজ্জার এই গাছ অনায়াসে লাগাতে পারেন। এই গাছের খুব বেশি আলোরও প্রয়োজন হয় না। পাম গাছ মশার কয়েলের ধোঁয়া, আসবাবপত্রের আঠার গন্ধ ও সিগারেটের ক্ষতিকর ধোঁয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে।

পিস লিলি : এই গাছ কম আলোতেও বাঁচতে পারে। তবে একদমই আলো পৌঁছতে পারেনা এমন স্থানে রাখা যাবে না। তাহলে ফুল ফুটতে অসুবিধা হয়। এই গাছটি পানিতে বেঁচে থাকে। তবে মাটিতে লাগানোই উত্তম। এই গাছ ঘরের অক্সিজেন ও আর্দ্রতার ভারসাম্য রক্ষা করে।

ফার্ন গাছ : জনপ্রিয়তায় ফার্ন গাছও কম নয়। তবে এই গাছ সূর্যের তীব্র আলোয় রাখা যাবে না। ফার্ন গাছ একটু বেশিই আর্দ্রতা পছন্দ করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত পানি ফার্ন গাছের জীবন বিনষ্ট করতে পারে। অতিরিক্ত পানি ফার্ন গাছের সংস্পর্শে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

অ্যালোভেরা : আপনার বাড়ির অন্দরের নিঃসন্দেহে ভালো সঙ্গী হতে পারে অ্যালোভেরা। এই গাছের জন্য সরাসরি সূর্যালোক ক্ষতিকর। তাই, এটি এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে মৃদু সূর্যের আলো পড়ে। ঔষুধি গুণে ভরা অ্যালোভেরা গাছ বাড়ির ভেতরের দূষণ টেনে নিয়ে বাড়িকে রাখে দূষণ মুক্ত।

স্নেক প্ল্যান্ট: অন্দরমহলকে টক্সিন মুক্ত রাখতে সাহায্য করে এই গাছ। স্নেক প্ল্যান্ট প্রচুর অক্সিজেন সরবরাহ করে। এই গাছ বাতাসে থাকা নাইট্রোজেন পার অক্সাইড শুষে নেয়। নিয়মিত এই গাছের পরিচর্যা করতে হয়।

ইনডোর প্ল্যান্টের যত্নে যা করবেন

নিয়মিত গাছে পানি দিন : ঘরে কিংবা বেলকনিতে থাকা গাছের কিন্তু নিয়মিত আর্দ্রতা প্রয়োজন। এজন্য মাটিকে একদম শুকনো না রেখে কিছুটা নরম রাখা দরকার। মাটি যদি খুব বেশি শুকনো অথবা অতিরিক্ত ভেজা থাকে, তাহলে গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেবে। আবার একদম কম পানি এবং অতিরিক্ত পানিও গাছের ক্ষতি করে।

মাটি পরীক্ষা করুন : মাটির অবস্থা তথা আর্দ্রতা বোঝার জন্য সহজ একটি পরীক্ষা করতে পারেন। একটি আঙুলের উপরিভাগ মাটির ভেতর আলতো করে ঢুকিয়ে দিন। যদি আঙুলে মাটির আর্দ্রতা বোঝা যায়, তাহলে বুঝতে হবে গাছ ভালো আছে। কিন্তু যদি ড্রাই মনে হয় তাহলে বুঝতে হবে গাছে পানি প্রয়োজন। মাটির আর্দ্রতা কম বেশি হলে গাছের পাতার রং বদলে যায়। মাটি থেকে গন্ধ বের হয় এবং গাছের পাতা পড়ে যায়।

সূর্যের আলো লাগান : ঘরে থাকা গাছ সপ্তাহে অন্তত দুদিন সুর্যের আলোতে রাখুন। কারণ সূর্যের আলো গাছের খাবার তৈরি ও জীবনক্রিয়া সক্রিয় রাখে। সূর্যের আলোর পরিমাণ, সময়, তীব্রতা গাছের বৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলে। তবে গাছ কখনো সরাসরি সূর্যের আলোতে রাখবেন না। ঘরেই এমন জায়গায় রাখুন যেখানে সূর্যের মৃদু আলো পড়ে।

গাছ বেশি বেশি নাড়াচাড়া করবেন না : গাছ বারবার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করবেন না। এটি গাছের জন্য ক্ষতিকর। একটি নির্দিষ্ট পরিবেশে গাছও নিজেদেরকে মানিয়ে নেয়। কাজেই বারবার জায়গা পরিবর্তন গাছের বৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে।

গাছ পরিষ্কার রাখুন : গাছে কিন্তু শুধু পানি দিলেই যত্ন শেষ নয়। গাছের পাতা ও কাণ্ডে জমে থাকা ধুলা-বালি নিয়মিত পরিষ্কার করুন। গাছের পাতায় ধুলা জমলে তা গাছের খাবার তৈরির প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করে। নরম ভেজা কাপড়, ব্রাশ দিয়ে পাতা পরিষ্কার করতে পারেন।

পোকা-মাকড় দূর করুন : ঘরে থাকা গাছের বড় একটি সমস্যা পোকার আক্রমণ। মিলিবাগের মতো ছোট ছোট সাদা পোকা বা অন্যান্য পোকার আক্রমণ ইনডোর প্ল্যান্টসে বেশি হয়। এসব পোকা দূর করার ওষুধ এনে স্প্রে করতে পারেন।

যেমন পানি ব্যবহার করবেন

অনেকেই ভাবেন, গরমের সময় গাছেরও ঠান্ডা বা শীতের সময় কিছুটা উষ্ণ পানি প্রয়োজন। এটি ভুল ধারণা। গাছের বেঁচে থাকার জন্য সাধারন তাপমাত্রার পানিই যথেষ্ট। ঠাণ্ডা বা গরম পানি নয়।

ইনডোর প্ল্যান্টের উপকারিতা

বাতাস নির্মল রাখে: ঘরের দূষিত বায়ু শোষণ করে ঘরের বাতাস নির্মল করে। সতেজ বাতাস সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি।

বিষাক্ত পদার্থ দুর করে: ইনডোর প্ল্যান্ট বা গাছ ঘরে থাকা ফর্মালডিহাইড, বেঞ্জিন, জাইলিন, টলুইন ও অ্যাসিটনের মতো বিষাক্ত যৌগ শুষে নেয়।

মন ভালো রাখে: ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে ঘর সাজালে শরীর ভালো থাকে।এটি মনকেও রাখে সতেজ।

 

তথ্যসূত্র: হাউজ বিউটিফুল ও হোম ডিজাইন।

০৯ মার্চ ২০২৩, ১২:২০পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।