শীতে খাবারেই হবে শরীর গরম
পৌষের হিমেল হাওয়ায় সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। বছরের এই এসময়টাতে ঠাণ্ডা-কাশির সংক্রমণ বেড়ে যায়। সুস্থ থাকতে ও শীতকালীন সংক্রমণ দূরে রাখতে আমরা নানা রকম উপায় অবলম্বন করে থাকি। গরম কাপড় ও রোদ পোহানোর পাশাপাশি ঘরে বসেই শরীর গরম রাখতে পারেন। এজন্য প্রয়োজন কিছু মসলা ও খাবার। এসব মসলা ও খাবার আমাদের হাতের কাছেই থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মসলা মস্তিষ্কের বিকাশেও সহায়তা করে। পাশপাশি মসলা দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে উদ্দিপনা তৈরি করে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও আনন্দবাজারে প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, আমাদের নিত্য ব্যবহার্য মসলাগুলো শীতে শরীর গরম রাখতে সহায়তা করে। যেমন-
শীতে শরীর গরম করে যেসব মসলা
আদা: সর্দি, কাশি, গলা ব্যথার চিকিৎসায় যুগ যুগ ধরে আদা ব্যবহার হয়ে আসছে। আদা শরীর উষ্ণ রাখে। যে কারণে শীতকালে আদা চা পান দারুণ কার্যকর। আদা চা তৈরি করতে আদা থেঁতলে এক কাপ পানিতে দিয়ে ফোটান। এতে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। গলা ব্যথার জন্য এই পানীয় দারুণ কার্যকর।
হলুদ: শীতকালে প্রত্যেকদিন এক গ্লাস হলুদ-দুধ মিশ্রিত পানীয় পান করুন। এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে। এ ছাড়া দুধ-হলুদ মিশ্রিত পানীয় বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।
মেথি: মেথি, আদা, মৌরী ও গুঁড় দিয়ে লাড্ডু বানিয়ে খেতে পারেন। মেথি অ্যান্টিভাইরাল উপাদানে ভরপুর। এটি ভাইরাস মেরে ফেলার ক্ষমতা সম্পন্ন একটি প্রাকৃতিক উপাদান।
জাফরান: জাফরান রান্নায় চমৎকার রঙ যোগ করে। কিন্তু আপনি কি জানেন, ঠাণ্ডার সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য জাফরানের কয়েকটি আঁশ দারুণ কাজ করে।
মৌরী: ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় মৌরী গলার সমস্যা ও ঠাণ্ডাজনিত গলা ব্যথা দূর করে। এ ছাড়া এটি ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া বিরোধী সক্ষমতা থাকায় শীতের ঋতুতে এটি ফ্লু ও ভাইরাসজনিত সংক্রমণ থেকে আপনাকে দূরে রাখবে। দুটি মৌরী বীজ ১৫ মিনিট পানিতে সিদ্ধ করে চা বানিয়ে নিন। এতে কয়েক ফোঁটা মধু যোগ করুন। এই চা দিনে কয়েকবার পান করুন।
লবঙ্গ: এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। একইসঙ্গে এটি প্রদাহবিরোধী, অ্যান্টিসেপটিক ও দাঁত ভালো রাখে। ওষধিগুণ থাকায় এটি বিশ্বব্যাপী রান্নাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
জায়ফল: আমাদের অত্যন্ত পরিচিত একটি মসলা জায়ফল। এটি খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এক কাপ গরম দুধে জায়ফল গুঁড়া, কয়েক ফোঁটা মধু ও থেতলানো এলাচ যোগ করে খেলে শীতকালীন সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে।
গোলমরিচ: এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হজমশক্তি বাড়িয়ে দেয়। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই চমৎকার মসলাটি আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন।
এলাচ: এলাচে রয়েছে খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রক্ত পরিষ্কার করে এবং বিপাক ক্রিয়া উন্নত করে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এলাচ আপনার দেহকে গরম রাখতে সহায়তা করবে। চায়ের সঙ্গে শীতকালে এলাচ মিশিয়ে নিন।
দারুচিনি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য উপাদানে ভরপুর দারুচিনি বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখে। গরম পানিতে এক চিমটি দারুচিনি গুঁড়ার সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে খান। এটি শীতের সকালের আপনার জন্য হতে পারে মহৌষোধ।
শীত তাড়াতে আরও যা খেতে পারেন
শুকনো ফল: শীতে শরীর গরম রাখতে বেশ কার্যকর শুকনা ফল (ড্রাই ফ্রুটস)। কাঠবাদাম, কাজুবাদাম বা আখরোট ভালো চর্বির বিশেষ উৎস। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ও শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে। খেজুর ও কিশমিশ খেলেও ভালো ফল মিলবে। শীতপ্রধান দেশগুলোতে নাশতা হিসেবে এসব খাবার প্রাধান্য পায়। আয়রন পেতে খেজুর দুর্দান্ত। গর্ভবতী নারীরা দিনে এক মুঠো শুকনা ফল খেতে পারেন।
ডিম: ডিমকে বলা হয় ‘শক্তির পাওয়ার হাউস’। ডিম কেবল আপনার শরীরকেই উষ্ণ রাখে না, এতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন ও ভিটামিন, যা আপনার শরীরকে শীতকালে বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করবে।
মধু: শীতকালে কুসুম গরম পানিতে প্রতিদিন এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। এটি আপনার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী করবে। এ ছাড়া মধু আপনাকে সর্দিকাশি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।
তুলসি পাতা: এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা শুকনো কাশি-সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করে। তুলসি পাতার চা অ্যালার্জিজনিত ব্রঙ্কাইটিস এবং হাঁপানিও নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। এক কাপ পানিতে পাঁচটি লবঙ্গ এবং আটটি তুলসি পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। এতে সামান্য লবণ মেশান। কাশি থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন এটি পান করুন।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, বোল্ড স্কাই ও আনন্দবাজার।