অস্বস্তিকর খুশকির প্রাকৃতিক সমাধান
প্রতিকী ছবি
শীত এলেই খুশকি সমস্যা বেড়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে মাথা ও ত্বকের আর্দ্রতা হ্রাস পায়। আর এ কারণেই খুশকির সমস্যা বাড়ে। এ ছাড়া পুষ্টিহীনতা ও সুষম খাদ্য গ্রহণের অভাবেও খুশকির প্রকোপ বাড়তে পারে। পুষ্টিবিদ ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা খুশকি সমস্যা নিয়ে নানা ধরণের মতামত দিয়েছেন। খুশকি নিরাময়ে হাতেগোনা কয়েকটি শ্যাম্পু বাজারে জনপ্রিয়তা পেলেও মূলত প্রাকৃতিক উপায়েই খুশকি সমস্যার সমাধান দীর্ঘস্থায়ী।
জনপ্রিয় মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবজার্নাল হেলথ লাইন ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, খুশকির সমস্যা দূর করতে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার সবচেয়ে নিরাপদ। কারণ রাসায়নিক উপাদান মাথার ত্বকে ক্ষতি করতে পারে।
প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক ঘরোয়া উপায়ে খুশকি দূর করার উপায়-
যেসব উপাদান খুশকি তাড়ায়
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার: খুশকির সমস্যা দূর করতে অ্যাপল সাইডার ভিনিগার ব্যবহার করতে পারেন। সমপরিমাণ ভিনিগার ও পানি একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে মালিশ করুন। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে তা ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুবারের বেশি এটা ব্যবহার করা যাবে না।
নারকেল তেল ও লেবু: নারকেল তেল ও লেবু খুশকি দূর করতে দারুণ কাজ করে। দুই টেবিল-চামচ নারকেল তেল ও সমপরিমাণ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে মালিশ করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। মিশ্রণটি মাথায় শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
গ্রিন টি: চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রিন টি ব্যাক্টেরিয়া রোধী উপাদান। এটি মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। খুশকি কমাতে গ্রিন টি ব্যবহার নিরাপদ। এক কাপ গরম পানিতে দুটি গ্রিন টি ব্যাগ ২০ মিনিট ধরে ডুবিয়ে রাখুন। ঠাণ্ডা হয়ে আসলে তা মাথার ত্বকে ব্যবহার করে ৩০ মিনিট অপেক্ষার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
টক দই: খুশকি দূর করতে টক দই বেশ কার্যকর। মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগান। এরপর ১০ মিনিট রেখে ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলুন। খুশকি পালাবে।
খুশকি থেকে ছেলেরা মুক্তি পাবেন যেভাবে
খুশকি এমন একটি সমস্যা, যা এখন নারী ও পুরুষ উভয়ের মাঝেই দেখা যায়। তবে নারীদের তুলনায় পুরুষরা খুশকি সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন। ছেলেরা চাইলে কয়েকটি উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে খুশকি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
নিম: আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, খুশকির সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে নিম, মেথি, জবা ফুল, অ্যালোভেরা এবং আমলকী। নিমের অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান মাথার স্ক্যাল্পের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। তাই খুশকির বিরুদ্ধে নিম প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে। মাথার খুশকি দূর করতে সপ্তাহে তিনদিন মাথার স্কাল্পে নিম তেল ম্যাসাজ করুন।
আমলকী: খুশকির সমস্যা সমাধানে আমলকীর জুড়ি মেলা ভার। এতে থাকা অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান মাথার স্ক্যাল্পের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোধ করে।
ভৃঙ্গরাজ: প্রাকৃতিক এই উপাদানটি মাথার ত্বকে শুষ্কতা, অকালপক্বতা খুশকি দূর করে। এছাড়া এতে থাকা আয়রন, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক খনিজ উপাদান দেহে পুষ্টি জোগায়।
মেথি: খুশকি দূর করার অন্যতম কার্যকরী একটি ভেষজ টোটকা ‘মেথি’। নারকেল তেলে আধ ভাঙা করে মেথি মিশিয়ে নিন। মেথি যত নারকেল তেলে ভিজবে, ওই তেল তত বেশি খুশকি দূর করবে। এটি চুল পড়া রোধেও কার্যকরী।
অ্যালোভেরা: খুশকি দূর করার আরেকটি কার্যকরী উপাদান ‘অ্যালোভেরা’। সপ্তাহে অন্তত একদিন অ্যালোভেরা অথবা আমলকীর রস মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন। এতে চুল পড়া রোধ হবে এবং খুশকি দূর হবে।
খুশকি দূর করতে আরও যা করতে পারেন
চর্মরোগ ও বিউটি এক্সপার্টরা বলছেন, মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে খুশকির প্রবণতা কমানো সম্ভব। এজন্য মাথায় তেল মালিশ ও চিরুনি করা যেতে পারে। এছাড়া-
→ নিয়মিত চুল আচঁড়াতে ‘ব্রাশের’ পরিবর্তে চিরুনি ব্যবহার করুন। মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখতে সপ্তাহে দুবার শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
→ প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি তেল দিয়ে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মাথা মালিশ বা ম্যাসাজ করুন।
পরামর্শ
প্রাকৃতিক উপাদান ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলো ব্যবহারের পরও যদি আপনাদের খুশকি সমস্যা থেকে যায়। তাহলে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খুশকি নিরোধক শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া অভিজ্ঞ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।