• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মাটির পাত্রে খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতা

মাটির পাত্রে খাওয়ার অবিশ্বাস্য উপকারিতা

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

আবহমান বাংলার ঘরে ঘরে মাটির তৈজসপত্র ব্যবহারের ইতিহাস সুপ্রাচীন। শতাব্দির পর শতাব্দি চলছে এই পাত্রের ব্যবহার। মাটির পাত্রের নানা ধরণ এরই মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির মিশেলে এখন দৃষ্টিনন্দন মাটির পাত্র তৈরি হচ্ছে। ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই বাজারে পাওয়া নানা রকম মাটির তৈজসপত্র। এসব মাটির পাত্র ফুলদানি, শো পিস, খাবার থালা, বাটি, গ্লাস হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।

দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই স্বাস্থ্যসম্মত মাটির পাত্র। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হওয়ায় মাটির পাত্রে খাবার খাওয়া কিংবা পানি পান করা সবচেয়ে নিরাপদ।

মাটির পাত্রের গুণাগুণ ও উপকারিতা নিয়ে এই পর্ব সাজানো হয়েছে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক-

মাটির পাত্রে পানি পান করবেন কেন

গবেষণায় দেখা গেছে, মাটির পাত্র তৈরিতে ব্যবহৃত কাদামাটি প্রকৃতিতে ক্ষারীয় বলে পরিচিত। যা খাবারের অ্যাসিডের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে। মাটিতে থাকা উপাদান পিএইচ স্তরকে নিরপেক্ষ করে। ফলে খাবার সহজে হজম হয়।

এছাড়া মাটির পাত্রে রান্নার সময় তেল কম লাগে। ধীরগতিতে রান্না ও তাপ নিরোধক হওয়ায় মাটির পাত্রে রান্না করলে খাবারের প্রাকৃতিক তেল ও আর্দ্রতা বজায় থাকে।

খাদ্যের পুষ্টিমান বজায় রাখে মাটির পাত্র। সেই সঙ্গে খাবারের প্রকৃত গন্ধও অটুট থাকে।

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার সংরক্ষণের জন্য মাটির পাত্র খুবই নিরাপদ। এতে খাবার সংরক্ষণ করলে তা বেশি সময় ধরে শীতল থাকে। এছাড়া দুধ টক হতে বাধা দেয় মাটির পাত্রে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান।

মাটির পাত্রে চা-কফি পান করে নিজেই পরখ করে দেখুন। চা-কফির স্বাদ ও গন্ধ অনন্য মনে হবেই। মাটির কাপে চা-কফি খাওয়া বা পানি পান করা খুবই নিরাপদ।

মাটির পাত্রের স্থায়ীত্ব বেশি থাকে। উচ্চ তাপে মাটির পাত্র ভেঙে বা গলে যায় না। কারণম, মাটির পাত্রগুলো উচ্চতাপে পুড়িয়ে বানানো হয়। তা ছাড়া এটি তাপ প্রতিরোধী বলে পরিচিত।

হজমশক্তি ঠিক রাখে: শরীরের মেটাবলিজম সঠিক রাখতে কাজ করে মাটির কলস। এর কারণ হলো মাটির পাত্রে একধরনের ইলেকট্রন থাকে যেটি শরীরের জন্য উপকারী। যে কারণে মাটির পাত্রে রাখা পানি পান করলে শরীরে মেটাবলিক রেট বাড়তে থাকে।

শরীরে আর্দ্রতা ধরে রাখে: গরমে প্রাকৃতিকভাবে ঠান্ডা পানি পাওয়ার জন্য মাটির কলসির বিকল্প নেই। এটি এসময় শরীরের পক্ষে খুবই সহায়ক। এই পানি শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখতে কাজ করে। ফলে শরীর থাকে অনেকটাই সতেজ। এতে কোনো ধরনের রাসায়নিক থাকে না। ফলে এতে খারাপ প্রতিক্রিয়াও নেই।

রোদের তীব্রতা থেকে বাঁচায়: গরমে রোদের তীব্রতা থেকে বাঁচতে আপনাকে সাহায্য করবে মাটির পাত্রে রাখা ঠান্ডা পানি। এটি সান স্ট্রোক থেকে সুরক্ষা দেবে। মাটির পাত্রে রাখা পানি পান করলে শরীরের গরম কমে গিয়ে শরীর ঠান্ডা হয়।

টক্সিন দূর করে: শরীরে টক্সিক কেমিক্যালের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে মাটির পাত্রে রাখা পানি। আয়রন, স্টিল কিংবা প্লাস্টিক জাতীয় পাত্রে পানি রাখলে সেখান থেকে নানা ধরনের দূষিত পদার্থ ঢুকতে পারে শরীরে। তবে মাটির পাত্রে পানি রাখলে সেটি সম্ভব নয়। শরীরের অ্যাসিড দূর করতেও কাজ করে মাটির পাত্র।

মাটির পাত্রে খাবার খাবেন কেন

গবেষকরা বলছেন, অ্যালুমিনিয়াম, টাইটানিয়াম, নিকেল এবং ক্রোমিয়ামের মতো ধাতব পাত্রে রান্না করলে খাবার ধাতুর সংস্পর্শে এসে অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে। কিন্তু মাটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক, তাই মাটির পাত্রে খাবারের পুষ্টিগুণ অপরিবর্তিত থাকে।

প্লাস্টিকের বোতলের বদলে পানি সংরক্ষণ করুন মাটির পাত্রে। কারণ প্লাস্টিকের পাত্র তৈরিতে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। যা সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর। প্লাস্টিকের বোতল পানির স্বাদও পরিবর্তন করে দেয়। কিন্তু মাটির পাত্রে পানির স্বাদ ও গন্ধ অটুট থাকে।

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, প্লাস্টিক পাত্রে সংরক্ষণ করা পানি শরীরের টেস্টোস্টেরন হরমনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। আর মাটির পাত্রে সংরক্ষিত পানি পান করলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বজায় থাকে।

মাটিতে থাকা ক্ষারজাতীয় উপাদান হজমক্রিয়া উন্নত করে। এটি অ্যাসিডিক সমস্যা দূর করতেও সহায়তা করে। মাটির পাত্রে রাখা খাবারের পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে।

যেসব কারণে ব্যবহার করবেন মাটির পাত্র

মাইক্রোওয়েভ রোধ করে: বেশির ভাগ মাটির পাত্রই মাইক্রোওয়েভে ব্যবহার করা যায়। মাইক্রোওয়েভে মাটির পাত্র রাখলে উচ্চ তাপমাত্রার সংস্পর্শে এলে কোনো ক্ষতিকর গ্যাস বের হয় না।

কাচের পাত্রের উত্তম বিকল্প: মাটির পাত্র হতে পারে কাচের পাত্রের উত্তম বিকল্প। তবে মাটির পাত্র ব্যবহারে অধিক সতর্ক হতে হবে। হাত থেকে পড়ে গিয়ে মাটির পাত্র ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যগত বিষয় বিবেচনায় মাটির পাত্রের তুলনা মাটির পাত্রই।

মাটির পাত্রে রান্নার উপকারিতা

স্বাস্থ্যবিষয়ক একাধিক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, মাটির পাত্রে রান্না করার উপকারিতা ব্যাপক। বিশেষ করে-

স্বাদ ও গন্ধ বজায় থাকে: স্বাদ ও পুষ্টির বিবেচনায় সব ধরনের রান্নার জন্য মাটির পাত্র উপযোগী। আয়ুর্বেদশাস্ত্র অনুযায়ী, মাটির পাত্র রান্না ধীর করে এবং খাবারের স্বাদ ও মান উন্নত করে।

স্বাস্থ্যসম্মত: ভারতের শরীরবিদ ডা. সরস সলীল বলেছেন, মাটির পাত্র এক ধরনের ক্ষারীয় উপাদান দিয়ে তৈরি, যা খাবারের অ্যাসিড প্রক্রিয়াজাতকরণে সাহায্য করে এবং হজমে সহায়তা করে। তাছাড়া মাটির পাত্রে রান্না করা খাবারে লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সালফারের মান বেশি থাকে।

প্রাকৃতিক ক্ষারীয় উপাদান: মাটির পাত্র কাদা দিয়ে তৈরি করা হয়। যাতে প্রাকৃতিক ভাবে ক্ষারযুক্ত হয়। তাছাড়া এটি খাবারের পুষ্টি উপাদান (আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার) ঠিক রাখে।

সতর্কতা: মাটির পাত্র ধোয়া-মুছার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। ভালো মানের মাটির পাত্র বাছাই করে কিনুন।

 

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও প্যারেন্টিং ডট কম।

৩০ জুলাই ২০২২, ০৭:৩৪পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।