• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানি: ভালো পশু চিনবেন, কিনবেন যেভাবে

কোরবানি: ভালো পশু চিনবেন, কিনবেন যেভাবে

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

ঈদুল আযহা আসছে। ত্যাগের মহিমায় ধর্মপ্রাণ মুসলিম পশু কোরবানি করবেন এই ঈদে। ঈদুল আযহা মূলত পশু কোরবানির মাধ্যমে হৃদয়ের পশুত্বকে কোরবানি করার শিক্ষা দেয়। প্রতি বছরের মতো এবারও দেশে হাজার হাজার পশুর হাট বসেছে। পশুর পরিচর্যায় খামারগুলোতে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা পছন্দের পশু ক্রয়ের জন্য ঘুরছে এ হাট থেকে ও হাটে।

ইসলামী শরিয়তে নিখুঁত ও সুস্থ সবল পশু কোরবানির বিধান রয়েছে। তাই সবাই চেষ্টা করেন একটি সুস্থ সবল ও সুন্দর পশু ক্রয় করতে। তারপরও কেউ কেউ পশু ক্রয় করতে গিয়ে ঠকে যান। ভুল করে কেউ কেউ খুঁতযুক্ত পশুও কিনে ফেলেন। এতে তৈরি হয় বিড়ম্বনা।

প্রিয় পাঠক, আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে কোরবানির পশু কেমন হবে এবং পশু ক্রয়ের আগে যে সতর্কতাগুলো মেনে চলা দরকার, তা আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। চলুন দেখে নেয়া যাক।

প্রাথমিক ধারণা

আমাদের মনে রাখা উচিত কোরবানি মানে যে শুধু একটি পশু জবাই, তা কিন্তু নয়। এই পশুর উপর শুধু নিজেদের হকই নয় আছে গরীবদের হকও। তাই কোরবানির পশু টি সুস্থ এবং ভালো হওয়া কোরবানি কবুলের সাথে সাথে গরীবদের হক আদায় এবং নিজেদের জন্যেও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের দেশে পশুর হাটগুলোতে এখন নানা ধরনের দেশি-বিদেশী পশু পাওয়া যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। তাই পশুর হাট থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এক্ষেত্রে সকলকে সতর্ক ও সুরক্ষিত থাকতে হবে।

কোরবানির পশু কেনার আগে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে

ইসলামী শরিয়তের বিধান মতে, সুস্থ সবল পশু দিয়ে কোরবানি দিতে হবে। কাজেই এমন দুর্বল পশু কেনা যাবে না যার হাড়ের মজ্জা শুকিয়ে গেছে বা কোরবানির স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারবে না। এরকম পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অপরদিকে মোটা-তাজা পশু দিয়ে কোরবানি করা মুস্তাহাব।

এ ছাড়া কোন পশুর একটি পা যদি এমন ভাবে নষ্ট হয়ে যায় যে, চলার সময় সেটি দিয়ে কোন সাহায্য নিতে পারে না তবে ওই পশু দিয়ে কোরবানি হবে না।

♦ একই ভাবে শিং গোড়া থেকে ভেঙে গেলে সেই ক্ষত যদি মগজ পর্যন্ত পৌছায়,
♦ দাঁত মোটেও না উঠলে বা যদি অর্ধেক দাত পড়ে যাওয়া পশু,
♦ দৃষ্টি শক্তি তিন ভাগের এক ভাগ কমে বা নষ্ট হয়ে গেছে এমন,
♦ লেজের অন্তত তিন ভাগের এক ভাগ কাটা গেলে,
♦ কান একেবারে না উঠলে (অবশ্য খুব ছোট কান থাকলেও হবে),
♦ গাভীন বলে জানা গেলে সেই পশু দিয়ে কোরবানি হবে। তবে পেটে বাচ্চা জীবিত পাওয়া গেলে সেটিকেও আল্লাহর নামে জবেহ করতে হবে।

সুস্থ ও সবল পশুর বৈশিষ্ট্য

⇒ পশু সাধারণত চঞ্চল হবে
⇒ জাবর কাটবে
⇒ নাকের উপর ভেজা ভাব থাকবে
⇒ চামড়া টাইট থাকবে
⇒ সুস্থ পশুর পিঠের কুঁজ মোটা ও টান টান হয়।
⇒ পশু পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রতি খুব সংবেদনশীল এবং সজাগ থাকবে। চোখ উজ্জ্বল দেখাবে।
⇒ পশু সব সময় কান ও লেজ নাড়াচাড়া করবে।
⇒ নাকের মধ্যখানের কালো জায়গাটি (মাজল) ভেজা থাকবে।
⇒ পায়খানা-প্রস্রাব স্বাভাবিক থাকবে ও নিয়মিত করবে।

কোরবানির পশু কেনার সময় যে বিষয় বিবেচনা করতে হবে

◊ দুই বছরের কম বয়সের গরু বা মহিষ এবং ৬ মাসের কম বয়সের ছাগল বা ভেড়া কোনভাবেই কোরবানির জন্য উপযুক্ত নয়। দাঁত দেখে প্রাপ্ত বয়স্ক গরু বাছাই করা উচিত।

◊ শিং ভাঙ্গা আছে কিনা, লেজ, মুখ, দাঁত, খুর এসব কিছুই ভালোমতো পরীক্ষা করে নেয়া উচিত।

◊ পশু কেনার আগে এর শরীরের কোথাও ক্ষত চিহ্ন আছে কিনা তা ভালোভাবে দেখে নেয়া উচিত।

◊ কোরবানির জন্য গাভী না কেনাই ভালো। কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে গাভীটি গর্ভবতী কিনা। গর্ভবতী গরু কিন্তু কোরবানি দেওয়া যায় না।

◊ স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেয়া গরু হবে খুব শান্ত। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারবে না। পশুর উরুতে অনেক মাংস মনে হবে।

◊ গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি নিজ থেকে জিব দিয়ে খাবার টেনে নিয়ে খেতে থাকে তবে বোঝা যাবে গরুটি সুস্থ। যদি অসুস্থ হয়, তবে সে খাবার খেতে চায় না।

◊ ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দেখতে হবে। ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মনে হয় যেন হাঁপাচ্ছে আর প্রচণ্ড ক্লান্ত দেখায়।

◊ পশু দুর্বল হয়ে গেলে ঢুলতে থাকা এবং হাঁটাচলা করতে অস্বীকার করা। মুখে ক্ষত থাকলে, খাদ্যের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে মুখ দিয়ে লালা পড়ে, মাথা নিচের দিকে রেখে ঝিমায় এবং কান নিচের দিকে ঝুলে থাকে।

◊ গরুর পা ও মুখ ফোলা, শরীর থলথল করবে, অধিকাংশ সময় গরু ঝিমাবে, সহজে নড়াচড়া করবে না। এসব গরু অসুস্থতার কারণে সবসময় নীরব থাকে। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না। খাবারও খেতে চায় না। এইসব পশু কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে।

◊ হাটের যে চকচকে চামড়ার গরু আপনার নজর কাড়ছে সেই গরুই ট্যাবলেট প্রয়োগ করা গরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মানুষের শরীরের কোন অংশ ফুলে গেলে বা পানি জমলে সেই অংশের ত্বক যেমন চকচক করে, ট্যাবলেট খাইয়ে মোটা করা গরুগুলোও তেমনি চকচকে হয়।

◊ অতিরিক্ত হরমোনের কারণে পুরো শরীরে পানি জমে মোটা দেখাবে। আঙ্গুল দিয়ে গরুর শরীরে চাপ দিলে সেখানে দেবে গিয়ে গর্ত হয়ে থাকবে।

◊ অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত মোটা গরু না কেনায় ভালো কারণ অধিক চর্বি যুক্ত মাংস খাওয়া ঠিক না ওপর দিকে স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেয়া গরু অধিক মোটা হয়ে থাকে।

◊ চেষ্টা করা উচিত দেশি পশু কেনার। কারণ বিদেশ থেকে আসা পশুর সাথে অনেক সময় অনেক সংক্রামক রোগ চলে আসতে পারে।

◊ দিনের আলো থাকতে থাকতেই গরু কিনে ফেলা উচিত, কারণ রাতের বেলায় অনেক সময় রোগাক্রান্ত গরু দেখে বুঝতে অসুবিধা হতে পারে।

বাড়তি সতর্কতা

কোরবানির পশু কেনার সময় আমরা বেশ ভালো অংকের টাকা সাথে বহন করি। এই বিষয়ে অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অন্যথায় ঈদের আনন্দ হয়ত শেষ মুহূর্তে শেষ হয়ে যেতে পারে।

কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রিয় বস্তুর ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এই ত্যাগের সাথে যেমন আমাদের নিজের ঈদ আনন্দ জড়িত, তেমনি জড়িত কিছু দরিদ্র মানুষের আনন্দও। তাই আমাদের কোরবানির পশুটি হওয়া উচিত সুস্থ সবল। এর জন্য আমাদের পশু কেনার আগে উপরের বিষয়গুলি অবশ্যই মাথায় রাখা প্রয়োজন।

সবশেষে আমাদের যাদের কোরবানির সামর্থ্য আছে বা কোরবানি দিচ্ছি আমাদের আশে পাশে অনেকেই আছে যারা কোরবানি দিতে পারছে না। সবার সাথে ভাগাভাগি করেই হোক আমাদের এই ঈদ আনন্দ।

০৩ জুলাই ২০২২, ০৩:৪৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।