উৎসবের আগে নিজের যত্ন
প্রতিকী ছবি
ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে কে না চায়? তবে ঈদের আনন্দ উপভোগের জন্য নিজেকে সতেজ ও প্রাণোবন্ত রাখা জরুরি। উৎসব এলেই আমরা নানা রকম চাপে জড়িয়ে পড়ি। কিন্তু উৎসব আনন্দের সব চাপ সামলে নিজেকে উৎসবে সতেজ ও প্রাণোবন্ত ভাবে উপস্থাপন করাটাও জরুরি।
ঈদুল আযহা আসন্ন। এত বড় উৎসব-আয়োজনে কাজের চাপ বেশি থাকবে। তারপরও সব কাজের মাঝেই নিজেকে সতেজ রাখতে হবে। বিশেষ করে নারীদের জন্য উৎসব যেন কাজের বোঝা নিয়ে হাজির হয়। কিন্তু আপনি চাইলেই সেই চাপ সামলে নিজেকে মেলে ধরতে পারে উৎসবের ঝলমলে আভায়।
এজন্য প্রত্যেকের উচিত নিজের প্রতি বাড়তি যত্ন নেয়া। বিশেষ করে নারীদের উচিত উৎসবের আগেই নিজেকে পরিপাটি করে গুছিয়ে ফেলা। এতে আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়ে, তেমনি কাজের চাপ সামলে উৎসব উপভোগ্য হয়ে ওঠে।
নারীরা কিভাবে নিজের বাড়তি যত্ন নিবেন তা নিয়ে আমাদের আজকের এই পর্ব। চলুন দেখে নেয়া যাক-
ত্বক পরিষ্কার রাখুন
লাবণ্যময় ও আর্দ্র ত্বকের জন্য ত্বক পরিষ্কার রাখা জরুরি। নিয়মিত প্রতিদিন মুখ পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। মুখ ধোয়ার জন্য প্রাকৃতিক উপকরণ হিসেবে বেসন ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া স্বাভাবিক ও শুষ্ক ত্বকের জন্য ছোলার ডালের বেসনের সঙ্গে প্রয়োজনমতো গোলাপজল মিশিয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট মুখে মালিশ করে ধুয়ে ফেলুন।
তবে যাদের ত্বক তৈলাক্ত প্রকৃতির, তারা মটর ডালের বেসনের সঙ্গে প্রয়োজনমতো গোলাপজল বা পানি মিশিয়ে একইভাবে ব্যবহার করুন। ঈদের আগ পর্যন্ত প্রতিদিন একবার প্রাকৃতিক ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বক স্বাভাবিক ও শুষ্ক হলে করণীয়
বেসন দিয়ে নিয়মমাফিক মুখ পরিষ্কার করুন। এ ক্ষেত্রে এক চা চামচ গ্লিসারিন (পানি মেশানো যাবে না) এবং ২ চা-চামচ জ্বাল দেওয়া দুধ একসঙ্গে ফেটিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মুখে লাগানোর ১০ মিনিট পর প্যাক লাগাতে হবে। প্যাকের জন্য লাগবে ১ চা-চামচ ময়দা, ১ চা-চামচ চালের গুঁড়া, ১টি খেজুর (বাটা) এবং গোলাপজল (প্রয়োজনমতো)। এই প্যাকে স্ক্র্যাবিংয়ের কাজও হবে। প্যাক লাগানোর ৫ থেকে ৭ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। এরপর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
ত্বক যদি হয় তৈলাক্ত
বেসন দিয়ে নিয়মমাফিক মুখ পরিষ্কার করুন। আধা চা-চামচ গ্লিসারিন, ১ চা-চামচ গোলাপজল, আধা চা-চামচের কম কর্পূর (বিকল্পে একটি ভিটামিন সি ট্যাবলেটের গুঁড়া)। এই টোনার লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ১ চা-চামচ মুলতানি মাটি, ১ চা-চামচ গ্লিসারিন, দেড় চা-চামচ গোলাপজল এবং ১ চা-চামচ পুদিনা পাতার রসের প্যাক লাগিয়ে নিন। এর ৫ মিনিট পর ধুয়ে মুখে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
হাতের যত্ন নিবেন যেভাবে
ঈদুল আযহা মানেই মাংস কাটাকাটি, বিতরণ ও রান্নাবান্নার বাড়তি চাপ। পশু কোরবানির পর থেকেই দুই হাত সমান ভাবে নোংরা হবে এটাই সাভাবিক। কিন্তু আপনি চাইলেই আপনার দুই হাত সুন্দর রাখতে পারেন শত কাজ ও চাপের মাঝেও। এজন্য আপনাকে যা করতে হবে-
আধা কাপ চিনি, কয়েক ফোঁটা অলিভ ওয়েল, ৪ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ কফিগুঁড়া ও ২ টেবিল চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে নিন। মিনিট পাঁচেক পুরো হাত স্ক্র্যাব করার পর ধুয়ে ফেলুন। এরপর লাগিয়ে নিন ময়েশ্চারাইজার। ৩ থেকে ৪ দিন পরপর এই স্ক্র্যাব করুন।
চুলের বিশেষ যত্ন
ঈদের আগে আপনার চুলের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে পারেন সহজেই। এজন্য এই কয়েকটা দিন আপনাকে যা করতে হবে। তাহল-
আমলকীগুঁড়া (১ কাপ), মেথিগুঁড়া (আধা কাপ) ও শিকাকাইগুঁড়া (আধা কাপ) পরিমাণমতো ফুটন্ত পানিতে দিয়ে পেস্ট করুন। পেস্টটা কুসুম গরম হয়ে এলে মাথায় ও চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ১ থেকে ২ দিন বিরতি দিয়ে এটি ব্যবহার করলে চুল পড়া কমে যাবে। সেই সঙ্গে আপনার চুল হবে ঘন-কালো ও প্রাণবন্ত।
নিজের যত্নে আরও যা করণীয়
* চোখের ফোলাভাব কমাতে বরফ-ঠাণ্ডা গোলাপ পানি খুব ভালো কাজ করে। তুলা বা ‘আই প্যাড’ ঠাণ্ডা গোলাপ জলে ভিজিয়ে চোখের ওপর রাখুন। টি-ব্যাগ দিয়েও এই কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। এর জন্য একটি টি-ব্যাগ কুসুম গরম পানিতে ডুবিয়ে, চিপে পানি ফেলে ‘আই প্যাড’য়ের মতো চোখের ওপর দিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ।
* উৎসব আয়োজনের আগে ত্বকে দাগ ও ব্রণ দেখা দেয়া বেশ বিরক্তিকর। এজন্য ত্বকের রংয়ের চাইতে দুই শেইড হালকা ফাউন্ডেশন বেছে নিতে পারেন। তারপর চিকন ব্রাশ দিয়ে ব্রণ বা দাগের ওপর সরাসরি লাগান। ওপরে হালকা পাউডার বুলিয়ে নিতে পারেন।
পায়ের নখ পরিষ্কার করুন। এজন্য লেবু, গ্লিসারিন ও গোলাপ পানি ব্যবহার করতে পারেন। ঈদের আগেই হাত ও পায়ের নখ কেটে ফেলুন। তবে যারা এই ঈদের কোরবানি দিবেন বলে নিয়ত করেছেন, তারা ঈদের আগে নখ ও চুল কাটা থেকে বিরত থাকুন।