• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সুস্বাস্থ্যের জন্য মসলায় রাখুন ‘বারসুঙ্গা'

সুস্বাস্থ্যের জন্য মসলায় রাখুন ‘বারসুঙ্গা'

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

বলবর্ধক ভেষজ ওষুধ হিসেবে বারসুঙ্গা পাতার জুড়ি মেলা ভার। স্থানীয় ভাবে ভেষজ ওষুধ হিসেবে এর পাতা, ছাল এবং শিকড়ের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। বিশেষ করে ভারতের তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলে বারসুঙ্গা পাতা খাওয়ার প্রচলন বেশি। এই পাতা মূলত তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন রকম চাটনি তৈরিতেও এই পাতার ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়।

পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্যগবেষকরা বলছেন, বারসুঙ্গা পাতায় রয়েছে ‘কার্বাজল অ্যাসকালোয়েড’ নামক উপাদান, যা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এটা কলোরেকটাল, লিউকেমিয়া এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে বারসুঙ্গায়-

পরিচয়:

বারসুঙ্গার বৈজ্ঞানিক নাম Murraya koenigii। যা মূলত Rutaceae গোত্রের একটি ক্রান্তীয় বা উপক্রান্তীয় উদ্ভিদ। বারসুঙ্গার পাতা বেশি ব্যবহার করা হয়। এটি ভারত এবং শ্রীলঙ্কার আদি আঞ্চলিক উদ্ভিদ। এই পাতা ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে অনেক ধরনের রান্নায় ব্যবহার করা হয়। ভারতীয়রা এই পাতাকে 'মিষ্টি নিম পাতা' বলে অভিহিত করেছেন।

পুষ্টি উপাদান:

স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট জনপ্রিয় হেলথ লাইন, ওয়েবএমডি এবং উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বারসুঙ্গায় রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালরি, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, জিংকসহ নানা ধরণের খনিজ উপাদান।

প্রতি ১০০ গ্রাম বারসুঙ্গায় রয়েছে-

ক্যালরি- ৯৭ কিলোক্যালরি,
কার্বোহাইড্রেট- ১৩.৩ গ্রাম,
প্রোটিন- ৭.৯ গ্রাম,
ভিটামিন সি- ৮ মিলিগ্রাম,
ক্যালসিয়াম- ৮২০ মিলিগ্রাম,
ম্যাগনেসিয়াম- ২২০ মিলিগ্রাম,
আয়রন- ৫.১০ মিলিগ্রাম,
ফ্যাট- ১.৩ গ্রাম,
ফোলেট- ৯৪ আইইউ,
নিয়াসিন- ২.৩ মিলিগ্রাম,
রিবোফ্লাভিন- ০.২১ মিলিগ্রাম,
থিয়ামিন- ০.০৮ মিলিগ্রাম,
ভিটামিন এ- ১১৩০ আইইউ,
কপার- ০.২১ মিলিগ্রাম এবং
ফসফরাস- ৫৭ মিলিগ্রাম।

বারসুঙ্গায় রয়েছে যেসব রাসায়নিক উপাদান:

গবেষকরা বলছেন, বিভিন্ন খনিজ উপাদান ও ভিটামিনের পাশাপাশি কারি পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত রাসায়নিক উপাদান। এতে রয়েছে, মাহানিম্বিন, কোয়েনিম্বিন, গ্রিনিম্বিন, মাহানিন, আইসোমাহানিন, ইন্ডিকোল্যাক্টোন এবং ২-মিথোক্সি-৩-মিথাইল-কার্বাজল।

বারসুঙ্গা খেলে পাবেন যে উপকারিতা:

স্বাস্থ্যবিষয়ক মার্কিন অনলাইন জার্নাল হেলথ লাইন, ওয়েবএমডি, নেটমেডস ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বারসুঙ্গা-

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: দেহে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে এবং ইনসুলিনের উৎপাদন কমে গেলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু বারসুঙ্গা বা কারিপাতা দেহের শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং ইনসুলিনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। যা গবেষণায় প্রমাণিত।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: এতে রয়েছে এমন কিছু বিশেষ উপাদান, যা রক্তে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি মেটায়: বারসুঙ্গায় রয়েছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই সুস্থ শরীরের জন্য নিয়মিত বারসুঙ্গা বা কারিপাতা খেতে পারেন।

হজম ক্ষমতা বাড়ায়: প্রাচীন আয়ুর্বেদিক পুঁথির বরাত দিয়ে নেটমেডস জানিয়েছে, বারসুঙ্গা বা কারিপাতায় থাকা ল্যাক্সেটিভ উপাদান হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়। এটি দেহের ক্ষতিকর টক্সিক উপাদন বের করে দেয়।

দৃষ্টি শক্তির উন্নতি ঘটায়: বারসুঙ্গা বা কারিপাতায় রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়ামসহ ভিটামিন এ। এসব উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর দেহের ভিতরে এমন কিছু রদবদল ঘটায়। ফলে চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। এটি নিয়মিত খেলে দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়।

পেটের রোগ নিরাময় করে: যারা পেটের নানা সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত বারসুঙ্গা বা কারিপাতা খেতে পারেন। এটি বদহজম, পেট ফাঁপা ও পেটের অন্যান্য সমস্যা দূর করে। ডায়ারিয়ার প্রকোপ কমাতে প্রাকৃতিকভাবেই এই পাতা অত্যন্ত কার্যকরী। এতে থাকা কার্বোজল অ্যালকালয়েড ডায়রিয়া নিরাময় করে।

লিভার ভালো রাখে: এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ক্ষতিকর টক্সিনের হাত থেকে লিভারকে রক্ষা করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে লিভারের উপর অ্যালকোহলের কুপ্রভাবও কমিয়ে দেয়।

ত্বকের সংক্রমণ রোধ করে: বারসুঙ্গা বা কারিপাতায় রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান। এসব উপাদান ত্বকের ইনফেকশন কমাতে সহায়তা করে।

তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন, নেটমেডস ও উইকিপিডিয়া।

০৩ এপ্রিল ২০২২, ০৬:০৯পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।