• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাকৃতিক প্রতিষেধক বাহারি ‘নয়নতারা’

প্রাকৃতিক প্রতিষেধক বাহারি ‘নয়নতারা’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা বাংলাদেশ। এদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে উপকারি নানা ভেষজ উপাদান। কোনো কোনো উপাদান সবজি হিসেবে খাওয়া যায়, আবার কোনোটি শুধু ওষুধ হিসেবেই ব্যবহার্য। প্রাচীনকাল থেকেই রোগ নিরাময়ে ভেষজ উপাদানের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে ভেষজ চিকিৎসার সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির মিশ্রণ ঘটেছে। ফলে ভেষজ চিকিৎসা পেয়েছে নতুন মাত্রা।

প্রিয় পাঠক, আমরা এই পর্বে দেশের অন্যতম সহজলভ্য একটি ভেষজ উপাদান ‘নয়নতারা’র গুণাগুণ ও কার্যকারিতা নিয়ে কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে নয়নতারায়-

পরিচয়:

নয়নতারার বৈজ্ঞানিক নাম Vinca Rosea। এটি মূলত Apocynaceae পরিবারভুক্ত একটি ভেষজ উপাদান। নয়নতারা প্রধানত ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এর ফুল, পাতা, ডগাসহ যাবতীয় অংশ ঔষধি গুণে ভরা। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বনে-বাদাড়ে, ঝোপে-ঝাড়ে এই গাছ দেখা যায়। নয়নতারা গাছে বারো মাস ফুল ফোটে।

কি আছে নয়নতারায়:

ড্রাগ ডট কম, ওয়েব এমডি ও হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, নয়নতারায় ভেষজ উপাদানের পাশাপাশি রয়েছে নানা ধরণের রাসায়নিক উপাদান। নয়নতারার পাতায় রয়েছে- গ্লাইকোসাইড, ইউরোসোলিক অ্যাসিড, অ্যালকোলাইডস, অ্যালকোহলস, টেনিন, ক্যারোটিন, স্টেরল, অলিওরেসিন।

এ ছাড়া এর শিকড়ে রয়েছে- অ্যালকোলাইড ভিনোসিডাইন, লিউসোভাইন, ক্যাভিসাইন ইত্যাদি উপাদান।

গুণাগুণ:

ভেষজ উপাদান হিসেবে নয়নতারার পাতা ও মূল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। এই গাছের সমগ্র অংশ রস করে খাওয়া যায়। উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, অন্তত ৭০টির মতো রোগের চিকিৎসায় নয়নতারা কার্যকরী। লিউকেমিয়া রোগের ওষুধ তৈরিতে নয়নতারার ব্যবহার সুপ্রাচীন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও এ বিষয়টির স্বীকৃতি দিয়েছে।

নয়নতারার ওষুধি ব্যবহার:

ড্রাগ ডট কম, হিন্দুস্তান টাইমস, ওয়েব এমডি ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, নয়নতারা-

ক্ষত সারায়: বিষাক্ত ক্ষত ও ঘা সারাতে নয়নতারা গাছের রস খুবই কার্যকরী। প্রতিদিন একবার নয়নতারা গাছের কচি ডাল ও পাতা বেটে, তার রস দিয়ে ঘা ধুয়ে রাখতে হবে। সাত দিন ব্যবহার করলে বিষক্রিয়া নষ্ট হয়ে যাবে। এতে ঘা শুকিয়ে যায়।

রক্তচাপ কমায়: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত নয়নতারার রস খেতে পারেন। এক্ষেত্রে পাঁচ মিলি-লিটার নয়নতারা গাছের মূলের টাটকা রস সকালে খালি পেটে খেতে হবে। দিনে একবার এটি খেতে পারেন। নিয়মিত তিন থেকে চার দিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: যারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তারা প্রতিদিন সকালে সাদা নয়নতারা গাছের দুটি পাতা খালি পেটে চিবিয়ে খেয়ে নিবেন। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে খাওয়ার সময় পাতা মুখে দিয়ে হালকা চিবিয়ে রস করে নিলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়।

লিউকেমিয়া দূরে রাখে: আয়ূর্বেদীয় শাস্ত্রমতে, লিউকেমিয়া রোগ নিরাময়ে নয়নতারা অত্যন্ত কার্যকর একটি ভেষজ উপাদান।

সংক্রমণ দূরে রাখে: কৃমি, কুষ্ঠ, হৃদরোগ, অরুচি, সর্দি, পেট ফাঁপা, দাঁতের রোগ নিরাময়েও নয়নতারা কার্যকরী। নিয়মিত চার থেকে পাঁচদিন নয়নতারা খেলে কৃমি, বদহজম, অরুচিভাব দূর হয়।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। অনেকের আবার ভুলে যাওয়ার রোগ হয়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে মাসখানিক নয়নতারা খেতে পারেন। নয়নতারার রস মস্তিষ্কের সেল উন্নত করে।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, ওয়েব এমডি, ড্রাগ ডট কম ও উইকিপিডিয়া।

৩১ মার্চ ২০২২, ০৭:৪৭পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।