• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

যেমন দর্শনধারী, তেমনই পুষ্টিকর ‘চেরি টমেটো’

যেমন দর্শনধারী, তেমনই পুষ্টিকর ‘চেরি টমেটো’

প্রতিকী ছবি

ফিচার ডেস্ক

‘আগে দর্শনধারী, পরে গুণ বিচারী’ বাংলা প্রবাদ। কিন্তু এমন যদি হয়, ‘যেমন দর্শনধারী তেমন গুণ বিচারী’। হ্যা, এমন প্রবাদ বোধহয় চেরি টমেটোর সঙ্গে মোটেও বেমানান নয়। টুকুটকে লাল, হলুদ ও হালকা সাদা রঙের ছোট ছোট টমেটো। আঙুরের মতো থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে এই টমেটো। আকারে ছোট হলেও এই টমেটোর গুণাগুণ বড় টমেটোর চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। বরং চেরি টমেটোর কদর এখন বেশি। এটি সবজি হিসেবে যেমন খাওয়া যায়, তেমনি চেরি টমেটো দিয়ে সালাদ, জুস ও সসও বানানো যায়। দিন দিন এই সবজির চাহিদা বাড়ছে।

প্রিয় পাঠক, চলুন দেখে নেয়া যাক কি আছে চেরি টমেটোতে-

পরিচয়:

১৫ শতাব্দিতে প্রথম মেক্সিকোতে চেরি টমেটোর চাষাবাদ শুরু হয়। পরে ১৮ শতাব্দিতে ল্যাতিন আমেরিকার চিলি ও পেরুতে চেরি টমেটোর আবাদ বিস্তার লাভ করে। এ ছাড়া ১৮১৫ সালে গ্রীসে ও ১৯১৯ সালে আমেরিকাতেও এই টমেটোর চাষাবাদ শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশেও চেরি টমেটোর চাষাবাদ শুরু হয়েছে। তুমুল জনপ্রিয় এই চেরি টমেটো সবজি ও সালাদ হিসেবে বহুল পরিচিত।

বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত সমন্বিত মানসম্পন্ন উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে চেরি টমেটোর উৎপাদন ও সম্প্রসারনের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

চেরি টমেটোর ব্যবহার:

চেরি টমেটো খাদ্য হিসেবে খুবই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এটি দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও বাহারি রঙের হয়ে থাকে। সাধারণত সালাদ, জুস, সস, বিভিন্ন ধরণের রান্নায় চেরি চমেটো ব্যবহার করা হয়।

পুষ্টি উপাদান:

মার্কিন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন ও উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, চেরি টমেটোতে রয়েছে খাদ্যআঁশ বা ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালরি, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পটাসিয়াম, কপার, খনিজ লবণ ইত্যাদি। এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপিন, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

প্রতি ১০০ গ্রাম চেরি টমেটোতে রয়েছে-

ফাইবার বা খাদ্যআঁশ- ৫ শতাংশ,
প্রোটিন- ২ শতাংশ,
কার্বোহাইড্রেট- ১ শতাংশ,
ক্যালরি- ১ শতাংশ,
ভিটামিন এ- ১৭ শতাংশ,
ভিটামিন সি- ২১ শতাংশ.
মিনারেলস- ১০ শতাংশ,
পটাশিয়াম- ৭ শতাংশ,
ম্যাঙ্গানিজ- ৬ শতাংশ,
ফসফরাস- ৩ শতাংশ এবং
কপার- ৩ শতাংশ।

উপকারিতা:

মার্কিন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইন, মেডিকেল নিউজ টুডে ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত পৃথক নিবন্ধে বলা হয়েছে, চেরি টমেটো-

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তারা নিয়মিত চেরি টমেটো খেতে পারেন। সালাদ, জুস অথবা সস হিসেবে এই টমেটো খাওয়া যায়। এতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: প্রতিদিন সালাদ হিসেবে চেরি টমেটো খান। এতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: চের টমেটোতে রয়েছে লাইকোপেন। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

গর্ভবতীদের বিশেষ খাবার: গর্ভবতী নারীর জন্য বিশেষ একটি খাবার চেরি টমেটো। এতে রয়েছে প্রচুর উপকারি পুষ্টি উপাদান। এটি গর্ভবতী নারী ও নবজাতকের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।

ওজন কমায়: চেরি টমেটোতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় খাদ্যআঁশ ও ভিটামিন সি। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, পটাসিয়াম ও কপার। পাশাপাশি এতে রয়েছে স্বল্প পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট। ফলে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম থাকায় ওজন কমাতে সহায়তা করে চেরি টমেটো।

রক্তস্বল্পতা দূর করে: পুষ্টিবিদরা বলছেন, চেরি টমেটোতে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ক্যারোটিন রক্তস্বল্পতা দূর করতে সহায়তা করে।

চর্মরোগ নিরাময় করে: ত্বকের যেকোনো সমস্যার সমাধানে চেরি টমেটো অত্যন্ত কার্যকরী। এতে থাকা ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ চর্মরোগের ঝুঁকি কমায়।

ত্বক উজ্জ্বল করে: এতে থাকা রাসায়নিক ও খনিজ উপাদান মুখমণ্ডলের ত্বক উজ্জ্বল করে। বয়সের ছাপ ও মুখের কালো দাগ দূর করতে চেরি টমেটোর জুড়ি মেলা ভার।

সংক্রমণ ঝুঁকি কমায়: সাধারণ জ¦র, সর্দি, কাশি নিরাময়ে চেরি টমেটো দারুণ কাজ করে। প্রতিদিন যদি চেরি টমেটোর সালাদ খেতে পারেন, তবে এটি আপনার সাধারণ রোগের সংক্রমণ থেকে দূরে রাখবে।

অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ করে: যারা দীর্ঘদিনের অ্যাজমাজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তারা এই চেরি টমেটো খেতে পারেন। কেননা, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন এবং ভিটামিন এ। যা অ্যাজমাজনিত জটিলতা দূর করে।

হাড় গঠনে সহায়ক: চেরি টমেটোতে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। এসব উপাদান মানবদেহের হাড় গঠনে সহায়তা করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: চেরি টমেটোতে রয়েছে আঁশ ও প্রচুর জলীয় অংশ। এসব উপাদান মল স্বাভাবিক করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন ডট কম, মেডিকেল নিউজ টুডে ও উইকিপিডিয়া।

২৯ মার্চ ২০২২, ০৮:৩৬পিএম, ঢাকা-বাংলাদেশ।